নিউজ প্রতিদিন: সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, ‘সব জায়গাতেই দুই নম্বরে ভরে গেছে। দুই নম্বরের ঠেলায় এখন আর এক নম্বররা সামনে আসতে পারে না। নারায়ণগঞ্জে আমি অরজিনাল মুক্তিযোদ্ধা দেখি, হাঁটতে পারে না, চলতে পারে না। ঘরে খাওয়া নাই। আর যারা মুক্তিযোদ্ধার পর বেনিফেট নিয়েছে তারা ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে বক্তাবলী এলাকার লক্ষীনগর বধ্যভূমি ‘বক্তাবলী গণহত্যা দিবস’ আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওই কথা বলেন তিনি।
শামীম ওসমান বলেন, অরজিনাল মুক্তিযোদ্ধারা কোনো সময় নিজের নাম বেচে না। আমার বাবা, আমার ভাই সবাই মুক্তিযোদ্ধা। আজকে আমারও শহীদ পরিবার হওয়ার কথা। কিন্তু লাকিলি আমরা শহীদ পরিবার সন্তান না অথবা আনলাকিলি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে প্রথম ইয়ার অ্যাটাকে ভারতীয় বাহিনীর সাথে নিজের পিতা সামসুজ্জোহা নেতৃত্ব দিয়েছেন জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, বাংলাদেশে ঢোকার পরে, রেডিও বাংলাদেশে, হাইকোর্টে, সব জায়গায় জাতীয় পতা উঠিয়েছিলেন আমার আব্বা। এবং রেডিওতে ভাষণ দিয়ে বলেছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে, আপনারা সবাই শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে থাকেন’। এরপরই তিনি গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে মুক্ত করার জন্য। যারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে আটকে রেখেছিলো তারা জানতো যে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, আমার আব্বা চুরুট খেতেন। চুরুট খেতে খেতে তিনি যাচ্ছিলেন সাদা পাঞ্জাবি পরা সাথে ছিলেন ভারতীয় জেনারেল। সে লক্ষ্য করেছিলো পাকিস্তানি মেলেটারিরা থ্রি নট থ্রি রাইফেল না যেন মেশিনগান দিয়ে গুলি করেছিলো আমার বাপকে, ওই চুরুটকে লক্ষ্য করে। ওই জেনারেল বাবাকে টান দিয়ে সরিয়ে দেন, গুলিটা আব্বার বুকে লাগেনি। তারপর আমার বাবা কিন্তু ফিরে আসেননি, অই অবস্থাতেই সামনে এগিয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে মুক্ত করেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমরা তখন ইন্ডিয়া থেকে ফিরছি। আমরা জানতাম আমার আব্বা মারা গেছেন। আমার মা অলরেডি হাতের চুড়ি খুলে ফেলেছেন। কিন্তু সাহস হারান নাই। এই ঋন কেউ শোধ করতে পারবে না। এই ঋণ শোধ হবে যদি মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকে, যদি কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান না করে।
‘চতুর্দিকে শকুনরা আকাশে উড়তেছে’ মন্তব্য করে সাংসদ বলেন, আমার কাছে কেন জানি মনে হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে খুব কঠিন একটা সময় আসছে। সব চেয়ে কঠিন সময়। এই সময় ছোবল মারার চেষ্টা হবে। ওয়ান বুলেট, ওয়ান টার্গেট। আর সেটা হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া একটা সম্পদ শেখ হাসিনা।
‘আমি মরে গেলে কিছু আসবে যাবে না। হয়তো কেউ দু চারদিন কাঁদবে, কেউ আবার খুশিই হবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি গভীর ভাবে চিন্তা করি, রাতের বেলা উঠে নামাজ পড়ি উনার জন্য। যে, এই মহিলার যদি কিছু হয়ে যায়! বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে দেশ ৫০ বছর পিছায়ে গেছে। আজকে আমাদের প্রতিযোগিতা থাকার কথা সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার উপরে, জাপানির সাথে। সেখানে আমরা কোথায় চলে গিয়েছিলাম?
তিনি বলেন, কত বড় ঈমানদার জাতি আমরা। যে লোকটা সারাজীবন সংগ্রাম করে দেশটা স্বাধীন করলো, সে লোকটাকে একরাতে সবাইকেসহ মেরে ফেললাম! আমরাইতো মারছি। বাইরের লোকতো এসে মারে নাই। পাকিস্তান সাহস পায় নাই মারতে। আমরা বাঙালিরাই মারলাম। তার পুরো বংশ নির্বংশ করে ফেললাম। দুুটি মেয়ে দেশের বাইরে ছিলেন তাই বেঁচে গেছেন। আমি তাকে (শেখ হাসিনা) ভালোবাসি কেবল আওয়ামী লীগের নেত্রী হিসেবে না। আমি ক’দিন রাজনীতি করবো, এমপিগিরি করবো আমি নিজেও জানি না। আমি স্বাধীনচেতা মানুষ। রাজনীতি করতে আসছি, ধান্দা করতে আসি নাই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহিদা বারিক, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল,সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. শওকত আলী, ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন ও মোহর আলী প্রমূখ।