আওয়ামী লীগ চায় বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে,বিএনপি চায় সরকারের পতন,

56

গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং স্থিতিশীল পরিবেশ চায় জনগণ। গণতান্ত্রিকভাবেই  বিএনপি অহিংস আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাতে চায়। বিএনপির একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে এ কথা বলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি নেতা রিজভী বলেছেন, অবৈধ সরকার উৎখাতে প্রস্তুত জনগণ। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমাদের কাছে এমনও খবর আছে, তারা (বিএনপি) ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে, বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মুসলিম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেছেন, আমার মনে হয়, কেউ যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করলে, সেটা মোটেও অযৌক্তিক হবে না।

ইসরায়েলে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের প্রমাণ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, একটা কেন, আমাদের কাছে এ ধরনের অনেক তথ্য আছে। যেগুলো জোড়া দিলে কালই বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার। আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এ অবৈধ সরকার উৎখাতে প্রস্তুত জনগণ। এজন্য বিএনপির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রয়োজন নেই।

রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের পতন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ সরকারের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই, তারা যে কোনো সময় ঝড়ে পড়বে। এ অবৈধ সরকার উৎখাতে জনগণ প্রস্তুত রয়েছে। বিএনপি জনগণকে নিয়েই রাজনীতি করে। তাই বিদেশে গিয়ে বিএনপি সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের করছে বলে যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।

তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের পতনে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নেমে আসবে। তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সময়ের দাবি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এ সরকারের আমলে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় মৃত্যুদ- থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। নজিরবিহীনভাবে ফাঁসির আসামিকে দ- থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৫ জন মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২২ জনকেই ক্ষমা করেছে অবৈধ ও ভোটারবিহীন বর্তমান সরকার।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা-মোসাদকে ব্যবহার করে বিএনপি বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ বিষয়ে সরকারের কাছে খবর আছে বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার (১০ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাহরিয়ার আলম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া; যিনি একাধিকবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পাকিস্তান তার হয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে ওকালতি করছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। জামায়াতের মুখোশ আগেই উন্মোচিত হয়েছে, যতই দিন যাচ্ছে বিএনপির মুখোশও উন্মোচিত হচ্ছে। তারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে বিব্রত করার জন্য, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু তাই নয়, আমাদের কাছে এমনও খবর আছে, তারা (বিএনপি) ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে, বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মুসলিম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে তারা তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে। এটা যে কতো বড় অপরাধ! আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে এসব সাক্ষ্য প্রমাণকে এক জায়গায় করে বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার আদৌ আছে কিনা। নৈতিক অধিকারের বাইরে গিয়ে বলবো, তাদের কোনো অধিকারই নেই। কারণ, তারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সেই উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে।

কমনওয়েলথ মিনিস্টারিয়াল অ্যাকশন গ্রুপের (সিমেগ) বৈঠকে পাকিস্তান খালেদার পক্ষে ওকালতি করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সে বৈঠকে আমরা উপস্থিত ছিলাম না, অন্যান্য যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের থেকে সত্যতা পেয়েছি। এতে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন না পেয়ে তারা বিদেশিদের ওপর নির্ভর করা শুরু করেছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বর্তমান রাজনীতি প্রমাণ করে বিএনপি-জামায়াতের ওপর বাংলাদেশের মানুষের আস্থা নেই। আর বিএনপির এসব কর্মকা- প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষের ওপর তাদেরও আস্থা বা বিশ্বাস নেই। তাদের ভবিষ্যত এদেশের মানুষের ওপর নির্ভর করছে না। তারা মনে করছে, তাদের ভবিষ্যত নির্ভর করছে সেইসব রাষ্ট্রের ওপর যাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আমার মনে হয়, কেউ যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করলে, সেটা মোটেও অযৌক্তিক হবে না,’ বলেন তিনি।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের প্রমাণ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, একটা কেন, আমাদের কাছে এ ধরনের অনেক তথ্য আছে। যেগুলো জোড়া দিলে কালই বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার। এসব ষড়যন্ত্র রক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবে সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবসময় যোগাযোগ রক্ষার করার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইসরায়েলের বাইরে পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। এসব চক্রান্তে বিএনপি জামায়াত অতীতেও সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও পারবে না।

ইসরায়েল-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, এ কারণে (বিএনপির সঙ্গে বৈঠক) ইসরায়েলের কাছে ধরনা দেওয়ার কিছু নেই। ইসরায়েল প্যালেস্টাইনে মানুষ হত্যা করছে। প্যালেস্টাইনকে দখল করে রেখেছে। সেখানকার মানুষকে নাগরিক অধিকার দিচ্ছে না। আমরা সবসময় একটা স্বাধীন সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র দেখতে চাই। সেখানে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের এনগেজমেন্টে (সম্পর্কে) যাওয়ার চিন্তাই করি না আমরা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তার বড় প্রমাণ মোসাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি করা এবং তাদের সহায়তা চাওয়া। তিনি বলেন, তাই বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বিএনপি পাকিস্তানের আদর্শে লালিত একটি রাজনৈতিক দল। আর বেগম খালেদা জিয়া মূলত এ দেশের মানুষের কোনো নেতা নন, তিনি পাকিস্তানের এজেন্ট।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া পিটিআই রোডস্থ নিজ বাসভবনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান, মেম্বারদের সাথে এক মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন। হানিফ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার জরিপে বর্তমান সরকার দেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষের জনপ্রিয়তায় রয়েছে। এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর জনগণ দ্বারা প্রত্যাখাত দল বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলরা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে নিজেদের ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের পরে পাকিস্তান যে প্রতিক্রিয়া দেয় খালেদা জিয়া ও তার দলের পক্ষ থেকেও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া আসলে বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণ করছেন। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান যেমন মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের গুপ্তচর ছিলেন, ঠিক তেমনি বেগম জিয়াও পাকিস্তানের গুপ্তচর। গতকাল মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছেন। তিনি দেশে বসে পাকিস্তানের সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যস্ত থাকেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে বেগম জিয়া নিয়মিত মাসোহারা পান। অন্য কোনো দেশ হলে খালেদা জিয়া এতদিনে রাজনীতি করার যোগ্যতা হারাতেন। তাই আমি সরকারকে অনুরোধ জানাবো অবিলম্বে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।