প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই ফাহিমকে হত্যা : রিজভী

33

প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গোলাম ফয়জুল্লাহ ফাহিমকে (১৯) হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফাহিম জঙ্গি কি না বা তার সঙ্গে আরো কেউ আছে কি না, জিজ্ঞাসাবাদে তা বের হয়ে আসত। তার আগেই তাকে হত্যা করা হলো।

‘জঙ্গিবাদ’ ও ‘আওয়ামী লীগবাদ’ যমজ ভাই মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুজনেই রক্তারক্তি পছন্দ করে। এ কারণে যেসব হত্যাকাণ্ড হচ্ছে সরকার কোনোরকম বিচার ও তদন্ত করছে না। মানুষকে হয়রানি করছে।

সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযান প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে বিএনপির এই নেতা বলেন, এরপরও কেন রামকৃষ্ণ মিশন ও কুষ্টিয়ায় সেবায়েতকে হুমকি দেওয়া হলো?

রিজভী বলেন, জঙ্গিদের গ্রেফতার করে আইনি প্রক্রিয়ায় না নিয়ে ক্রস-ফায়ার দিয়ে হত্যা করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করছে সরকার। জঙ্গিবাদের কুয়াশার মধ্যে সরকার নিমজ্জিত।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপিসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের জঙ্গি হিসেবে চিহিৃত করাই সরকারের এজেন্ডা।

তিনি বলেন, গ্রেফতার করে জঙ্গি দমন সরকারের উদ্দেশ্য নয়। সরকারের উদ্দেশ্য গণ-গ্রেফতার করে বিএনপি দমন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল (শুক্রবার) যৌথ অভিযান শেষ হয়েছে। তারপরও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, গতকাল (শুক্রবার) থেকে আজ (শনিবার) পর্যন্ত রাজধানীর পল্লবী, ফেনীর সোনাগাজী, খুলনা, বাগেরহাট, নাটোরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিএনপির ২৭শ’র বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জঙ্গি দমনের নামে প্রহসনের এক চরম নাটক অনুষ্ঠিত করছে সরকারি লোকেরা। মামলা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, কিন্তু কুপিয়ে হত্যাকারী প্রকৃত অপরাধীরা অধরাই থেকে যাচ্ছে। হত্যা রহস্যের কোনো কুল-কিনারাই বের হচ্ছে না। অথচ সরকারি বাহিনী ক্ষুধার্থ নেকড়ের মতো গ্রাম, শহর, নগর, বন্দরে হামলা করেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা-যারা গ্রেফতার হয়নি তারা দিশেহারা হয়ে প্রাণ ভয়ে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ক্র্যাক ডাউন এবং অপপ্রচার চালিয়ে দলটির সমুলে বিনাশ সাধন।

কারণ এর আগেও নানা দেশি-বিদেশি চক্রান্তে দলটিকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। ভোটারবিহীন সরকারের প্রধান টার্গেট হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সে কারণেই চলমান দেশব্যাপী পুলিশি নির্যাতনের শিকার বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এই অবৈধ সরকারের আমলে রক্ত আর লাশের উন্নতি ছাড়া আর কোনো উন্নতিই দেশবাসীর চোখে পড়েনি বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, গুম-খুন হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি। বাংলাদেশের নগর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এক ঝিমধরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারের উদ্দেশ্য শুভ নয় বলেই তাদের জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযান এখন জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি মহলের সদিচ্ছার ঘাটতি থাকার কারণেই জঙ্গিবাদ দমনের পথে কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

ভোটারবিহীন সরকারকে তার পাপ স্খলনের জন্য সকল অনাচার, উৎপীড়ন, জুলুম-নির্যাতন, পুলিশের বেপরোয়া আচরণ বন্ধ করে মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে অবিলম্বে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবি করেন রিজভী।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার নজরানা হিসেবে ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে। মাত্র ১৯২ টাকা নামমাত্র ভাড়ায় ট্রানজিট দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দিয়েছে সরকার। যেখানে দেশের চলাচলে অসুবিধা থাকার পরও অন্যদের ট্রানজিট দিয়ে বিপন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।