নারায়ণগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে নিম্ন মানের সেমাই

152

নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক হারে তৈরী হচ্ছে নিম্নমাণের লাচ্ছা সেমাই। ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে স্থায়ী-অস্থায়ী সেমাই কারখানাগুলোতে এসব সেমাই তৈরী হচ্ছে। গোপনে নোংরা পরিবেশে এসব লাচ্ছা-সেমাই তৈরী করছে বেকারী ব্যবসায়ীরা। আর এগুলোই যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন নামি-দামি দোকানগুলোতে। বিএসটিআই’র অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সেমাই কারখানাগুলো থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঈদুল আযহাকে ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নেমেছে ভেজাল ও নিম্নমাণের লাচ্ছা-সেমাই তৈরীর কাজে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আগাছার মত গড়ে উঠেছে ৪০টির বেশি ‘মৌসুমি’ কারখানা। আরো অন্তত ১০টি স্থায়ী কারাখানায় ভেজাল ও নিন্মমাণের লাচ্ছা-সেমাই তৈরী হচ্ছে ।

উদ্ধবগঞ্জ, সাহাপুর, মেঘনা শিল্পাঞ্চল, মোগরাপাড়া চৌরাস্থা, কাচঁপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন কারখানার ভেতরে গোপনে গড়ে উঠেছে ৪০টিরও বেশি অস্থায়ী সেমাই কারখানা।

জানা যায়, দৈল্যেরবাগ এলাকায় ঢাকা বেকারী, উদ্ধবগঞ্জ সাহাপুর এলাকায় নুর বেকারী, হাবিবপুর এলাকায় মুন্নী বেকারী, কাচঁপুর সোনাপুরে এবি ফুড প্রোডাক্ট, বেহাকৈর এলাকায় শাহিন ফুড প্রোডাক্ট, আরজুফা সহ ৪০টি বেকারীতে ঈদ উপলক্ষে ৮-১০দিন ধরে লাচ্ছা-সেমাই উৎপাদন হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারজাত ও শুরু করেছে। যারা উৎপাদনে গেছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশ কারাখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিদিন শতশত খাচি খোলা লাচ্ছা-সেমাই তৈরী হচ্ছে।

সরেজমিন কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, স্থায়ী কারাখানাগুলোতেও নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরী করে চলেছেন শ্রমিকরা। আর অস্থায়ী কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে স্টিল, পাস্টিক, লোহাসহ বিভিন্ন কারাখানার ভিতরে ছোট জায়গায় অথবা অলিগলির ভিতরে। কেউ জায়গা ভাড়া নিয়ে অথবা কারখানা মালিকরা নিজেরাই এসব অস্থায়ী সেমাই কারখানা গড়ে তুলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কারখানা মালিক জানান, প্রতি বছর ঈদুল আযহায় সোনারগাঁয়ে যে পরিমাণ লাচ্ছা-সেমাইয়ের প্রয়োজন হয়, তা স্থায়ী কারখানাগুলো সরবরাহ করতে পারে না। আবার স্থায়ী কারখানাগুলোর তৈরী লাচ্ছা-সেমাই নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এর ফলে ঈদকে ঘিরে এবারও বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কারখানা গড়ে উঠেছে বা উঠছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব কারখানার মালিকরা প্রশাসনের চোখের আড়ালে সেমাই তৈরী করে যাচ্ছেন কেউ কেউ দিনের বেলা আবার কেউ রাতের আঁধারেও তৈরী করছেন খোলা বা প্যাকেটজাত লাচ্ছা-সেমাই। বিএসআটিইয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই গোপনে এসব অবৈধভাবে নোংরা ও অসাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমাণের সেমাই তৈরীর দৃশ্য ও দেখা গেছে। আবার তৈরীকৃত অধিকাংশ লাচ্ছা-সেমাইয়ে মেশানো হচ্ছে নিম্নমাণের উপাদান ও ক্ষতিকারক রং।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি অস্থায়ী কারখানার মালিক বলেন, ‘অস্থায়ী কারাখানার মালিকরা বছরের এই সময়টায় শুধু লাচ্ছা-সেমাই তৈরী করেন। কেউ কেউ নিজের বাড়িতেই। আবার কেউ অন্যের জায়গা মাস দুয়েকের জন্য ভাড়া নিয়ে তৈরী করেন লাচ্ছা-সেমাই।

বনফুল, রুচিতাসহ আরো কয়েকটি স্থায়ী কারখানার কয়েকজন শ্রমিক নিশ্চিত করেছেন, এই সময়ে চাহিদা প্রচুর থাকার কারণে সঠিক মান ও পরিমানের সেমাই তারাও তৈরী করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে অসাধু মৌসুমী ব্যাবসায়ীরাও কারখানা গড়ে তুলে ভেজাল ও নিম্নমাণের লাচ্ছা-সেমাই উৎপাদন করছেন। সবমিলিয়ে এসব কারখানাগুলোতে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার খাঁচি সেমাই তৈরি হচ্ছে।’

সূত্র জানায়, এসব কারখানায় উৎপাদিত সেমাই রাতের আঁধারেই চলে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। শুধু তাই নয়, উপজেলার গন্ডি পেড়িয়ে তা বাজারজাত করা হচ্ছে শহরের নামি দামি দোকনগুলোতেও।

এসব প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম জাকারিয়া বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন তারা। অস্বাস্থ্যকর বা অনুমোদনহীন কারাখানায় সেমাই তৈরী হলে সেখানেও অভিযান চালানো হবে।