নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জে বালু ও মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আ’লীগের দু’গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গুলাগুলি ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা মিয়া (৩৮) নামে সৈনিকলীগের সভাপতি নিহত হয়েছেন।
একই সাথে নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। দুটি বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মঙ্গলখালী এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
নিহত তারা মিয়া মঙ্গলখালী এলাকার মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে। তারা মিয়া মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ঘটনায় নজরুল ইসলাম নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মঙ্গলখালীসহ আশ-পাশের এলাকার বালু ও মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের সভাপতি তারা মিয়াসহ তার লোকজনের সঙ্গে অপর আওয়ামীলীগ নেতা আইবুর মিয়া, আক্তার হোসেন চুন্নু, বিল্লাল মুন্সী, শিপনসহ তাদের লোকজনের বেশ কয়েক দিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিলো।
ওই বিরোধের জের ধরেই দুপুর ২টার দিকে আইবুর মিয়াসহ তার লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারা মিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং হামলা চালায়। এসময় তারা মিয়াসহ তার লোকজনও পাল্টা হামলা চালায়।
এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজনই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এসময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করা হয়।
প্রায় ঘন্টা ব্যপী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের তারা মিয়া, নয়ন মিয়া, সুমন, হোসেন মিয়া, সুরুজ মিয়া, আকাশ, পাপ্পু, খোকন, আনোয়ার হোসেন, ফাতেমা, মাসুদা বেগম, পলি আক্তার, আফসানা আক্তার, রাহিমা বেগমসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে তারা মিয়াকে গুলিব্ধি অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ বক্সের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া।
এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে দুটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুনে বাড়িঘরসহ আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ মালপত্র লুট করা হয় বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ্যরা। আশ-পাশের হাটবাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। পরে ঘটনাস্থল অতিরিক্তি পুলিশ পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অপর দিকে, তারা মিয়া নিহত হয়েছেন এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মুড়াপাড়া-ভুলতা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে। এছাড়া এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় ফের সংঘষের্র ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।
নিহতের চাচাতো ভাই সুমন মিয়া জানান, আইবুর মিয়া, আক্তার হোসেন চুন্নু, বিল্লাল মুন্সী, শিপনসহ তাদের লোকজন দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। মাদক ব্যবসা করায় এদের বিরুদ্ধে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহাম্মেদ আলমাছের কাছে অভিযোগ করেন তারা মিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই মাদক ব্যবসায়ীরা পায়ে গুলি এবং মাথায় আঘাত করায় তারা মিয়া নিহত হন। জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।