সোনারগাঁয়ে অসহায় বৃদ্ধা রূপবাহারকে ঘর বুঝিয়ে দিলেন এএসআই আজাদ

923

সোনারগাঁ প্রতিনিধি
সোনারগাঁয়ের সনমান্দী পূর্বপাড়া গ্রামে স্বামী-সন্তান হারা পঁচাত্তুর বয়সের অসুস্থ বৃদ্ধা রূপবাহারকে রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে টিনের ঘর ও আসবাবপত্র বুঝিয়ে দিয়েছেন থানার আলোচিত এএসআই আবুল কালাম আজাদ। এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. মঞ্জুর কাদের (পিপিএম)।
এ সময় স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোমেন সরকারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য হাজী নূরে আলম খাঁন, সনমান্দি ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, দৈনিক যুগান্তরের ষ্টাফ রিপোর্টার আল আমিন তুষার, হিরালাল বাদশা, হারুনুর রশিদ মেম্বারসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
প্রসঙ্গত, উপজেলার সনমান্দি পূর্বপাড়া গ্রামে বসবাসরত পঁচাত্তুর বয়সের অসুস্থ বৃদ্ধা রূপবাহার দাম্পত্য জীবনের ৮ বছরের মাথায় স্বামী ময়জুদ্দিন ও এর তিন বছর আগে একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ না থাকলেও স্বামীর রেখে যাওয়া ২ শতাংশ ভিটে-মাটিকেই শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে মেনে নেন রূপবাহার। এ সময় স্থানীয় একটি পরিবারে গৃহপরিচারিকার কাজ করে তিনি জীবন-যাপন করছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারনে প্রায় ১৫ বছর আগে সেই কাজও হারান তিনি। বসবাসের জরার্জীন খুপড়ি ঘরটিও ভেঙে চৌচির। তাই পলিথিনে মোড়ানো ঝুঁপড়ির ভেতরে বসবাস করতেন। রোদ বৃষ্টি আর শীতকে উপেক্ষা করে ঝুঁপড়ির ভেতরে বসতি আর অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন ছিল বৃদ্ধা রূপবাহারের। এলাকাবাসীর মতে, জীবনে কোনদিন হাসির মুখ দেখা যায়নি রূপবাহারের। এরই মধ্যে তিনি মারাতœকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যুর প্রহর গুনা রূপবাহারকে যেন দেখার কেউ নেই।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২৭শে জানুয়ারী জুম্মার নামাজের সময় রূপবাহারের বাড়ির পার্শ্ববর্তী সনমান্দি জামে মসজিদে মাদক ও জঙ্গী বিরোধী জনসচেতনতা মূলক এক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সোনারগাঁ থানার এএসআই আবুল কালাম আজাদ। এ সময় তিনি অসুস্থ রূপবাহার সম্পর্কে স্থানীয় হিরালাল বাদশার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তার পাশে দাঁড়ান। অসুস্থ রূপবাহার তখন মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছিলেন। এ সময় এএসআই আবুল কালাম আজাদ নিজ প্রচেষ্টায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রূপবাহারের মানবেতর জীবন-যাপনের করুন পরিনতি ও জীবন কাহিনী শুনে কেঁদে ফেলেন এএসআই আজাদ। প্রতিজ্ঞা করেন অসহায় বৃদ্ধার পাড়ে দাঁড়ানোর। নিজের চাকুরির ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএস) ফান্ডের জমানো প্রায় ৫০ হাজার টাকা তুলে বৃদ্ধা রূপবাহারের জন্য সুন্দর একটি টিনের ঘর নির্মান করে দেন। ক্রয় করে দেন আসবাবপত্র ও ফার্নিচার। মা বলে ডাকেন রূপবাহারকে। রূপবাহারের জন্য নির্মান করা নতুন ঘর দেখানোর জন্য অসুস্থতার মধ্যেও হাসপাতাল থেকে গাড়ীতে করে বাড়িতে নিয়ে যান। হাসি ফুঁটে রূপবাহারের চোখে মুখে। রোববার বিকেলে রূপবাহারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরটি হস্তান্তর করা হয়। ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অসুস্থ রূপবাহারের জন্য হুইল চেয়ার ক্রয় করে দেন ওসি শাহ্ মো. মঞ্জুর কাদের (পিপিএম)। এছাড়া জেলা পরিষদের সদস্য হাজী নূরে আলম খাঁন আজীবন রূপবাহারের ভরন-পোষন ও চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. মঞ্জুর কাদের (পিপিএম) বলেন, নিজের ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) ফান্ডের জমানো টাকা তুলে অসহায় বৃদ্ধার জন্য টিনের ঘর নির্মান করে দেওয়ার ঘটনাটি বিরল। এএসআই আবুল কালাম আজাদ এ কাজটি করে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে।