সিদ্ধিরগঞ্জ শিশুছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা

61

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিদ্ধিরগঞ্জে অপহৃত তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী রোকসানা (১০) কে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় রবিবার রাতে পুলিশ বন্দর থান এলাকা থেকে রায়হান কবির সোহাগ (২৮) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। পরে সোহাগকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনাটি স্বীকার করে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেয়। সোমবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ (সার্কেল-ক) মোঃ শরফ্দ্দুীন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- থানার ওসি আব্দুস সাত্তার মিয়া ও পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম।

সাংবাদিক সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ মোঃ শরফুদ্দীন জানান, গত ২৩ জানুয়ারি বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের আরামবাগ এলাকায় থেকে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী রোকসানা নিখোঁজ হয়। ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা আশরাফুল ইসলাম ২৪ জানুয়ারি থানায় একটি জিডি করেন। পরে গত ২৬ জানুয়ারি সোনারগাঁও থানা কাইকারটেক ব্রিজ এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে একটি প্লাষ্টিকের বস্তা ভর্তি এক কিশোরীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি হাত-পা বাধা ও মুখে স্কচটেপ পেঁচানো অবস্থায় ছিল। পরে লাশটি পুলিশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। মর্গে গিয়ে রোকসানার পিতা আশরাফুল আলম লাশটি সনাক্ত করেন। এ ঘটনায় ২৭ জানুয়ারি আশরাফুল আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। তিনি আরও জানান, মামলাটি তদন্তকালীন সময়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ খুনের সঙ্গে জড়িত রায়হান করিব সোহাগকে সনাক্তের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়। পরে সোহাগকে জিজ্ঞাবাসাবাদ করলে সে ঘটনাটি স্বীকার করে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে সোহাগ পুলিশকে জানান, রোকসানাকে অপহরণ করে বন্দরের ২২ টি হোসেন রোডের কবির হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে রোকসানা চিৎকার করতে থাকলে তার হাত-বা বেধে ও মুখে  স্কচটেপ পেঁচিয়ে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে নিহত রোকসানার লাশ বস্তায় ভরে একটি ব্যাটারীচালিত আটো রিকসা যোগে সোনারগাঁয়ের কাইারটেক চর এলাকায় নিয়ে ব্রিজের নিচে ফেলে দিয়ে আসে।

অতিরিক্ত পুলিশ মোঃ শরফুদ্দীন আরো জানান, মামলা দায়েরের পর পরই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, উপ পরিদর্শক (এসআই) মামুন উল আবেদ ও রাসেল আহমেদকে দিয়ে এ ঘটনায় একটি কমিটি করে দেয়া হয়। কমিটি তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সাত্তার মিয়া জানান, সোহাগের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন পাখি নিহত রোকসানার বড় বোন আরমিয়ার বান্ধবী। সেই সুত্রে ধরেই রোকসানাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত সোহাগ। নিহত রোকসানা পাখির স্বামী সোহাগকে দুলাভাই বলে ডাকত। এক সময়ে সোহাগের কু-নজরে পড়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী রোকসানা। ঘটনার দিন রোকাসানাকে নিজ বাসা থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে যায় সোহাগ। পরদিন তার পরিবারের কাছে মোবাইলে ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে ছয় হাজার টাকা দাবি করে। পরে তাকে হত্যা করে লাশ কাইকার টেক ব্রিজের নিচে ফেলে চলে।

নিহত রোকসানার বড় বোন আরমিনা বলেন, আমার আদরের বোনকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি তার ফাঁসি চাই। আমরা মৃত্যুর বদলে মৃত্যু দেখতে চাই। নিহতের মা কারিনা আক্তার বলেন, আমার আদরের ছোট মেয়েকে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমার বুক খালি করেছে। আমি আসামীর ফাঁসির অর্ডার চাই। মৃত্যুর বদলে মৃত্যু চাই।