নাসিম ওসমানের প্রক্সি দিতে আসছি: সেলিম ওসমান

91

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, আপনার সবার প্রিয় মানুষ নাসিম ওসমান বহুবার আমার কাছে গিয়ে ছিলেন। বন্দরের কোথায় স্কুল লাগবে কোথায় শিল্পায়ন করতে হবে আমাকে বলে ছিলেন। আমি নিজের জন্য কিছুই করছি না। আমি শুধু আপনাদের প্রিয় মানুষ নাসিম ওসমানের প্রক্সি দিতে আসছি। তাঁর স্বপ্ন গুলোই বাস্তবায়নে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আর কাজ গুলো সম্পন্ন করতে আপনারা বন্দরের মানুষ আমাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছেন। সবার জন্য নির্বাচনী সময় ৫ বছর হলেও আমার জন্য সাড়ে ৪ বছর। আগামী ২৬ জুন আমার ৪ বছর পূর্ন হবে। আমি যদি আপনাদের সন্তোষ্ট করতে না পারি তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো না। আর আমাকেই যে নির্বাচন করতে হবে তেমন কোন কথা নাই।

বুধবার ৭ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় মদনপুর ইউনিয়নের বাগদোবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত নাগিনা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে রত্নগর্ভা মা ও ভাষা সৈনিক মরহুম নাগিনা জোহার দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী মিলাদ ও দোয়ার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় এমপি সেলিম ওসমান ওসমান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মরহুম নাগিনা জোহার পুত্রবধূ মিসেস পারভিন ওসমান ও মিসেস নাসরিন ওসমান, মরহুমার দুই মেয়ে নিগার আক্তার ও নার্গিস আকতার।

দোয়া শেষে এমপি সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত অর্থায়নে নির্মিত নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের ৪র্থ তলার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী ও ওসমান পরিবারের জেষ্ঠ্য পুত্রবধূ মিসেস পারভিন ওসমান। ৪র্থ তলা ভবনটি নির্মাণের জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ৬৫ লাখ টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছে। এমপি সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ওই অর্থ ব্যয় করা হবে।

সেলিম ওসমান আরো বলেন আপনারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন আমরা শান্তিরচরে নীটপল্লী নির্মাণের চেষ্টা করছি। শীতলক্ষ্যা সেতু-৩ এর কাজ চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে নবীগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়ে আরো একটি নির্মাণের আশ্বাস পাওয়া গেছে। সেতু নির্মাণ না হওয়া সময় পর্যন্ত সেন্ট্রাল খেয়াঘাট ও নবীগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়ে ফেরি সার্ভিস চলাচলের কথা রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নারায়ণগঞ্জে এসে ১৫ দিনের মধ্যে ফেরি চালু হওয়ার ঘোষণা দিয়ে গেছেন। কিন্তু ফেরী সার্ভিস চালু হতে একটু বিলম্ব হচ্ছে সরকারী ফাইল একটু ধীর গতিতে চলে আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে ফেরী চালু করা সম্ভব হবে এবং আগামী ৬ মাসের মধ্যে নবীগঞ্জ দিয়ে সেতুর ভিত্তির প্রস্তর করা সম্ভব হবে। এছাড়াও আমরা সকল স্কুলের উন্নয়ন করছি। এখন পর্যন্ত যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রয়োজন রয়েছে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে সেই সকল উন্নয়নে প্রস্তাবনা আশা করছি যাতে দ্রæত সেই উন্নয়ন কাজ গুলো সম্পন্ন করতে পারি।

নাগিনা জোহা স্কুল ভবনের ৪র্থ তলা সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দাবী করেছেন ছেলে এবং মেয়েদের জন্য আলাদা কমন রুম, শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্য কমনরুম প্রয়োজন। ভবনে ৪র্থ তলায় যেন এ সকল ব্যবস্থা করা হয় এবং আগামী ৩ মাসের মধ্যেই যেন ৪র্থ তলার কাজ সম্পন্ন করা হয়। আজকে মিসেস পারভিন ওসমান শুধু ভবনটি উদ্বোধনই করবেন না। এখন থেকে উনি সব গুলো স্কুলের খোঁজ খবর রাখবেন। স্কুলের উন্নয়নে পরিচালনা কমিটিকে সহযোগীতা করবেন। এখন থেকে আমাদের পরিবারের সদস্য তিন বধূ এবং বোনেরা প্রতি ৪৫ দিন পর পর একটি করে স্কুলে যাবেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের চাহিদার কথা আমাকে জানাবে আমি সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করবো। কিন্তু আমাদের পরিবারের কেউ কোন স্কুল কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত হবেন না। শুধু পরিচালনা কমিটিকে সহযোগীতা করবেন।

বন্দরের নবীগঞ্জে পানির দাবীতে মানববন্ধনের একটি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বন্দরে ওয়াসার পানির সমস্যা চলছে। আমি যখন ওয়াসার সাথে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলাম। তখন নবীগঞ্জে কয়েকজন মানববন্ধন করে প্রশ্ন রাখলেন গত ৭ মাস সেলিম ওসমান কোথায় ছিলেন। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো ওইটা সংসদ সদস্যের কাজ নয়। ওইটা ওয়াসার কাজ। ওয়াসার স্থানীয় সরকারের আওতায়। নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশনের সাথে ওয়াসার একটি দ্ব›দ্ধ রয়েছে। যার কারনে সমস্যা সমাধানে বিলম্ব হচ্ছে। এখন আমি যদি প্রশ্ন রাখি আপনারা আওয়ামীলীগ করেন। বর্তমান সরকারে আওয়ামীলীগ। সরকারী দলের নেতা হয়ে গত ৭ মাস আপনারা কি করেছেন? আপনারা কেন আমার কাছে আসলেন না? স্থানীয় কাউন্সিলর কেন আসলেন না। ১২নং ওয়ার্ড এলাকায় পানির সমস্যা ছিলআমি এমপি হওয়ার পর ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমার কাছে এসেছিলো আমি নিজ খরচে ৪টি ডিপটিউবওয়েল বসিয়ে দিয়েছি। এখন সেখানে পানির কোন সমস্যা নাই। আপনারা আমার কাছে আসতেন আমি প্রয়োজনে ৭ মাসে ৭টা ডিপটিউবওয়েল বসিয়ে দিতাম।

তিনি আরো বলেন, অনেকেই বলেন আমাকে পাননা আমি আসি না। কিন্তু অতীত রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে গত ৪ বছরে আমি যতবার বন্দরে এসেছি অতীতে বন্দরের কোন এতোবার বন্দরে আসে নাই। আমি বন্দরের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। এখানে আমি কোন দলাদলি করি নাই। আমার রাজনীতি একটাই ছিল উন্নয়নের রাজনীতি, শিল্পায়নের রাজনীতি ভবিষ্যত গড়ার রাজনীতি। আপনারা দোয়া করবেন আমি যেন ৩০ জুনের পূর্বে শুধুমাত্র শীতলক্ষ্যা সেতু-৩ এবং নবীগঞ্জ সেতু বাদে বাকি যে ওয়াদা গুলো করেছি সেগুলো যেন বাস্তবায়ন করতে পারি। তাহলেই আপনাদের প্রাণ প্রিয় নাসিম ওসমানের স্বপ্ন গুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। আপনার সবাই দোয়া করবেন যাতে করে আমার মা ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা, চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বড় ভাই নাসিম ওসমান, আমার বাবা, আমার দাদা তারা যেন জান্নাতবাসী হয়। দোয়া করবেন আমার জন্য আপনাদের দোয়াই আমি বেঁচে আছি। আমারই চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনাদের দোয়া আমি দিন দিন আরো বেশি সুস্থ্য হয়ে উঠছি। আরো বেশি পরিশ্রম করতে পারছি। আপনাদের দোয়া এবং সহযোগীতাটাই আমার একমাত্র কাম্য।

নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাপ হোসেনের সভাপতিত্বে দোয়ায় আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিন্টু বেপারী, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন মন্ডল, জাপা নেতা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী মহিলালীগের সভাপতি ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন প্রমুখ।