নেত্রীকে আবারো প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে-সেলিম ওসমান

60

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে সারাদেশের চালিকা শক্তি। তাই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এই নারায়ণগঞ্জ বার বার গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করেছে, তারা নারায়ণগঞ্জকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। আগামী নির্বাচনে যদি স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে তাহলে আবারো ধ্বংসের চেষ্টা করা হবে নারায়ণগঞ্জকে, শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা তুলে দেওয়া হবে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের গাড়িতে। তাই ‘এক নেতা এক দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ স্লোগানকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী নির্বাচনে আবারো শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানানে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

শুক্রবার ১৭ আগস্ট সকাল ১১টায় চাষাঢ় এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমপি সেলিম ওসমানের সার্বিক সহযোগীতা এবং মহানগর আওয়ামীলীগ ও শহর যুবলীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে আয়োজিত দোয়ার পূর্বে আলোচনা সভায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান নতুন নেতৃত্বের সকলের প্রতি এ আহবান রাখেন।

কেন নারায়ণগঞ্জকে ধ্বংস করা হয়েছে তার কারন উল্লেখ করে সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জন্ম। এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই ৬ দফা, ১১দফা, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযোদ্ধের সূত্রপাত হয়েছে। এসব আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ থেকেই শুরু হয়েছে। এমনকি ৭৫’র বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর ওই রাতেই সর্বপ্রথম নারায়ণগঞ্জ থেকেই আপনাদের প্রিয় নেতা প্রয়াত নাসিম ওসমান এবং বিকেএমইএ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মঞ্জুরুল হক, বাবুল বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে দ্বিতীয়বারে মত যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিল। নারায়ণগঞ্জ থেকে লোক না গেলে পল্টনে মাঠ পূর্ন হতো না। তাই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্রথম টার্গেট এই নারায়ণগঞ্জ। অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে তারা নারায়ণগঞ্জকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। এতো কিছুর পরেও যখন নারায়ণগঞ্জকে ধ্বংস করতে পারে নাই তখনই ২০০১ সালে ১৬ জুন চাষাঢ়ায় আওয়ামীলীগ অফিসে বোমা মেরে নারায়ণগঞ্জের ২১জন কৃতি সন্তানকে হত্যা করেছে। আজকে যেখানে আপনারা বসে আছেন এখানেই ২১জন মানুষের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়ে ছিল। সেদিন মৃত্যু শয্যায় থেকেও শামীম ওসমান নিজেকে বাচাঁনোর কথা না বলে বলেছিলো শেখ হাসিনাকে বাঁচান। এরপর ঢাকায় ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বোমা হামলা চালানো হয়।

স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি কিভাবে সুপরিকল্পিত ভাবে নারায়ণগঞ্জকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে নতুন নেতৃত্বের নেতাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরে সেলিম ওসমান বলেন, একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে বিশ্বের সপ্তম আশ্চার্যের আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়। একে একে চিত্তরঞ্জন, ঢাকেশ্বরী, সহ সকল পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। অভাবের কারনে তারা নানা অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এক সময় তাদের দ্বারাই সাত খুনের মত বহু ঘটনার জন্ম হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে সারা বাংলাদেশের পাট ব্যবসার নিয়ন্ত্রন করা বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের দুই পাশের জায়গা বিক্রি করে দিয়ে এটাকে ডাক্তার খানা পরিনত করা হয়েছে। আমি বার বার বলার পর এখন ডাক্তার খানার সাইনবোর্ড খুলে জুট অ্যাসোসিয়েশনের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। কিন্তু ভেতরে ডাক্তার খানাই রয়েছে। এখানেই ছিল মেট্রোপলেটিন চেম্বার অব কর্মাস, যেটি এখন ঢাকায় চলে গেছে। কারা করলো এসব অপকর্ম। নারায়ণগঞ্জ থেকে পাটের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়া পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা মাত্র ৭০জন মানুষ হোসিয়ারী শিল্পকে বৃহৎ আকার দিতে বিকেএমইএ সৃষ্টি করি। বিকেএমইএ এর মাধ্যমে বর্তমানে নীটপন্য রপ্তানিতে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। শীঘ্রই আমরা প্রথম স্থান অধিকার করতে পারবো বলে বিশ্বাস করে। নীট সহ আরএমজি সেক্টরে সারা বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই আরএমজি সেক্টরকে ধ্বংস করতে নানা পায়তারা চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ ছিল বিকেএমইএ এর কার্যক্রম নারায়ণগঞ্জ থেকেই পরিচালিত হবে। উনার নির্দেশনা মোতাবেক আমরা নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়াতে বিকেএমইএ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ করতে শুরু করি। কিন্তু একজন নেত্রী রাজউকের জায়গায় একটি মামলা করে সেই উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে রেখেছে। দেশের বৃহৎ নদী বন্দর ৫নং ঘাট এখন মৃত প্রায়, নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন এখন আর মালগাড়ি আসতে বা যেতেও দেখা যায়না। এটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। জানিনা কাদের স্বার্থে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

বর্তমান সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জে উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীতে নাসিম ওসমান সেতু নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। নবীগঞ্জ দিয়ে ফেরী সার্ভিস চালু করা হয়েছে অচীরেই একটি সেতু নির্মানের ঘোষণা পাবো বলে আশা করি, ঈদের আগেই ৫নংঘাট-বন্দর ঘাট দিয়ে ফেরী সার্ভিস চালু করা হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মদনগঞ্জের শান্তিরচরে দেড় হাজার একর জমির উপর নীটপল্লী নির্মানের অনুমোদন দিয়েছেন, খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে ৫০০ শয্যা হাসপাতালে রূপান্তরের কাজ চলছে পর্যায়ক্রমে এটি মেডিকেল কলেজ করা হবে। ১০০ শয্যা হাসপাতালের উন্নয়ন করা হয়েছে। সেখানে একটি নার্সিং ইন্সটিউট নির্মান করা হবে। কদমরসুল কলেজ সরকারী করা হয়েছে, আশা করি শহর এবং বন্দরে পৃথক দুটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মান করা হবে, লাঙ্গলবন্দে মেগাপ্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, বন্দরে নারী শ্রমিকদের জন্য মহিলা ডরমেটরি নির্মান কাজ শুরু হয়েছে, শহরে শিল্পকলা একাডেমী কমপ্লেক্স এবং বহুতল আধুনিক লাইব্রেরী কমপ্লেক্স নির্মান কাজ প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে। এছাড়াও আমি ব্যক্তিগত ভাবে ৭টি ইউনিয়নে অত্যাধুনিক ৭টি নতুন স্কুল নির্মান করেছি, নারায়ণগঞ্জ কলেজে ১০তলা ভবন নির্মান করে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে, মর্গ্যান গালর্স স্কুল এন্ড কলেজকে আধুনিক করতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলেতুন্নেছা ভবন নামে নতুন ভবন নির্মান করা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ডাবল রেললাইন নির্মান কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। হয়তো এর উপর দিয়েও আমরা একটি রাস্তা পাবো। নারায়ণগঞ্জের এসব উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে আগামীতে আবারো শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে বলে মন্তব্য করেন এমপি সেলিম ওসামন।

শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামীলীগে সহ সভাপতি চন্দন শীল, সহ সভাপতি রবিউল হোসেন, কমান্ডার গোপি নাথ দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল, মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজিম উদ্দিন, জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, শহর সেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসানুল হাসান নিপু, সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাইল রাফেল প্রধান, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, মহানগর যুব মহিলা লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুইটি, সহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ সহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।