ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। তবে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে আলোচনা না হলেও সংখ্যালঘুদের বিষয়ে কাজ করার জন্য দুজনের মধ্যে আলোচনা হয় বলে দাবি করেছেন তিনি। এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে ষড়যন্ত্রের কথা সরাসরি কবুল না করলেও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যে তার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের তা তারা নিশ্চিত। আর ইসরায়েলের সঙ্গে তিনি যে সংযোগ রক্ষা করতেন তা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সম্মতি নিয়েই।
তদন্ত সূত্রগুলো জানায়, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর কতবার ও কোথায় কোথায় বৈঠক হয়েছে এবং তাতে কারা উপস্থিত ছিলেন এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বৈঠকে কী কী আলোচনা হয়েছে এবং সিদ্ধান্তের বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে। তবে শুধু আসলাম চৌধুরী নন, ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জড়িত বলে সন্দেহ কর্মকর্তাদের। যদিও জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম চৌধুরীর জবাব হচ্ছে, ভারতের একটি সংগঠনের দাওয়াতে তিনি আগ্রার ওই সেমিনারে যোগ দিয়েছিলেন। ওই সেমিনারেই মেনদির সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে আলোচনা হয়। আসলাম চৌধুরী দাবি করেন, রাজনীতির বাইরেও নিজে ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে ইসরায়েলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা করার বিষয়টিও উঠে আসে তাদের আলোচনায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার জানান, রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে আসামির দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে তিনি জানান, মোসাদের সঙ্গে বৈঠকে আসলাম চৌধুরী ছাড়াও আর কারা কারা উপস্থিত ছিলেন এবং কতবার বৈঠক হয়েছে এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রবিবার রাতে আসলাম চৌধুরী ও তার সহযোগী আসাদুজ্জামান মিয়াকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে ভারতে বসে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের উদ্দেশে ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক করেছেন। তাদের দুজনের একসঙ্গে তোলা ছবিও রয়েছে। মেনদি সাফাদি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট বলে কথিত আছে। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বহির্বিশ্বে দলটিকে কোণঠাসা করার উদ্দেশেই আসলামের সঙ্গে সাফাদির ছবিকে বড় করে দেখানো হচ্ছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় অন্য কারও নাম পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তাদের কাছে খবর রয়েছে, ব্যবসার আড়ালে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন আসলাম চৌধুরী। মোসাদ এজেন্টের সঙ্গে তার একাধিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিএনপিকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।
আসলামের সঙ্গে দেখা হয়েছিল : ইসরায়েলি রাজনীতিক মেনদি এন সাফাদি স্বীকার করেছেন যে ভারতে তার সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর দেখা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে কোনো গোপন বিষয়ে কথা হয়নি। ইসরায়েল থেকে মঙ্গলবার টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি, সেখানে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে কথা বলেছি, তাও সেটা প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে। আমরা বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছিলাম বা সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিলাম এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হতেই পারে না। তিনি বিবিসি বাংলাকে আরও বলেন, আগ্রার যে অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর সম্প্রতি দেখা হয়েছিল তাতে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির যুব শাখা। প্রতিবেশী দেশের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে আসলাম চৌধুরীও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। দুজনের আগে থেকে কোনো পরিচয় ছিল না। একই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দুই অতিথি হিসেবে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক আলাপ হয়েছিল মাত্র। উনি শুধু ভারতে এসে একজন ইসরায়েলির সঙ্গে কথা বলেছেন। আসলাম চৌধুরী তার দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছেন বলেই তাকে হেনস্তা করা হচ্ছে বলে আমার ধারণা। তিনি বলেন, আমি সারা পৃথিবীতেই সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কথা বলি। তাদের জন্য লড়ি। বাংলাদেশও তার কোনো ব্যতিক্রম নয়। ইত্তেফাক