জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কমিটি ঘোষণা করেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে এসেছে পরিবর্তন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেইে দুই বড় দলের কমিটিতে অনেক পরিবর্তন আসছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
বিএনপি ১৯ মার্চ কাউন্সিল করেছে। এরপর আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ১৬ পদে আংশিক কমিটি। এর আগে মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপিতে নতুন নেতৃত্বে আশায় নেতারা জেগে উঠছেন। নতুন নেতৃত্বের নেতারা সরকারকে আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগও কমিটি ঘোষণা। ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে আওয়ামী লীগের দুটি পৃথক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন যথাক্রমে এ কে এম রহমতুল্লাহ ও সাদেক খান। আর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আবুল হাসনাত ও শাহে আলম মুরাদ।
দলের পুরনো ও ত্যাগী নেতাদের পাশাপাশি নতুনদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে। এছাড়া বিভিন্ন সময় দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন, তাদেরও রাখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আসন্ন ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হবে সেই কমিটিও পরবর্তী নির্বাচনকে মাথায় রেখে সাজানো হবে। মূলত দলকে গতিশীল করে পরবর্তী নির্বাচন এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক বিরোধী শিবিরের আন্দোলন মোকাবিলার জন্যই এমনভাবে দল গোছানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা।
একাধিক নেতা জানান, দলকে গতিশীল রাখতে সব ধরনের নেতাকর্মীদের পদ দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগে। যে কারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদের অনেককেও সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। আবার যেসব সিনিয়র নেতা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন না; কিন্তু দলসমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা যেন জিততে না পারেন এমন চেষ্টা করেছিলেন, তারা বাদ পড়েছেন দল থেকে।
তবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটা বার্তা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, যাদের কারণে দল বিতর্কিত হয়েছে, যারা দায়িত্বশীল পদে থেকেও দলকে যথোপযুক্ত সহযোগিতা করেননি, তাদের দলীয় পদ টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন হবে। উদাহরণ হিসেবে ওই নেতারা বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের কা-ারী ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া খুব চেষ্টা চালিয়েছিলেন মহানগরের কমিটিতে থাকার জন্য; কিন্তু দলের হাইকমান্ড তাকে কোথাও রাখেনি।
একইভাবে সদ্যঘোষিত কমিটিতে নেই খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম এবং তাদের অনুসারীরা। মূলত মহানগর আওয়ামী লীগকে কোন্দলমুক্ত রাখার জন্যই তাদের রাখা হয়নি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে মায়া চৌধুরী না থাকলেও তার ছোট ছেলে রাশেদুল হাসান চৌধুরী রনিকে মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখা হবে বলে জানা গেছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের দলে নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুই রকম মত দেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এক পক্ষ মনে করেন, দলের কর্মীদের ভুলত্রুটি থাকতেই পারে, তাই বলে একটি ভুলের কারণে আমরা তাদের আজীবন দলের বাইরে রাখতে পারি না। এছাড়া দলীয় ফোরামের মেজাজ বুঝে বিভিন্ন সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপর পক্ষের ভাবনা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক কিছু এলাকায় তার নিজস্ব বলয় তৈরির জন্য সিটি নির্বাচনের বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের পদ দিয়েছেন। কারণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত ছিল, নির্বাচনে যারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না, তাদের নগর কমিটিতে মূল্যায়ন করা হবে। অন্যদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে যারা নির্বাচন করবেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আরও জানান, দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১০ ও ১১ জুলাই। ইতোমধ্যে সম্মেলন সফল করতে প্রস্তুতি কমিটিও গঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যারা নেতা হবেন, তারাই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন মোকাবিলা করবেন। সুতরাং সবদিক বিবেচনা করেই সম্মেলনপরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটি সাজানো হবে এবার। তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার দাবি, ঈদুল ফিতর হওয়ার কথা ৬ অথবা ৭ জুলাই। সেক্ষেত্রে ঈদের পরপরই না-ও হতে পারে সম্মেলন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমি যতোটুকু বুঝি, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান, সবাইকে নিয়ে চলতে। তিনি সবার সমন্বয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার পক্ষে। নেত্রীকে দেখেছি, বিন্দু ও সিন্ধু উভয়েরই মূল্যায়ন করেন তিনি। দলের জন্য যার বিন্দু পরিমাণ অবদান আছে তাকেও তিনি ভোলেন না আবার যার অবদান সিন্ধুর জলরাশির সমান তাকেও তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শরীরে মেদ জমে না। তারা ঠিকই আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে অংশ নেন। সেটি গত কয়েক বছরে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলায় আমাদের কর্মীদের অংশগ্রহণ দেখলেই বুঝবেন।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর অন্যতম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, সবদিক বিবেচনা করেই দল সাজানো হচ্ছে, কমিটিগুলো গঠন করা হচ্ছে।
পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করা হবে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। ইতোমধ্যে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি মাসেই দলটির ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ঘোষণা হতে পারে।
জাতীয় কাউন্সিলের ২১ দিন পর তৃতীয় দফায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া ১৫ নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ২ পদে এ ১৫ নেতার মধ্যে ১২ জনই নতুন। ১০ এপ্রিল নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মনোনীত ৭ জন যুগ্ম মহাসচিব ও ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।
বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া ৭ জন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে আগের কমিটির ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনই শুধু রয়েছেন। বাকি সবাই নতুন। নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া অন্য যুগ্ম মহাসচিবরা হলেন আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারোয়ার, আগের কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আগের কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, আগের কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী।
এর আগে ৩০ মার্চ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপির মহাসচিব ও রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব পদে মনোনয়ন দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ছাড়াও মিজানুর রহমান সিনহাকে বিএনপির কোষাধ্যক্ষ পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।