মাজহারুল ইসলাম রোকনঃ একজন সাংবাদিক সর্বদা একা! মনে রাখা উচিত তার আপন বলতে পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কেউ নেই! ১১ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় সেটাই মূল্যায়ন!
রাজনীতিবিদ তার প্রয়োজনে আপনাকে ব্যবহার করবে! প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তার সামনেই যাওয়া যাবেনা! বিপদের সময় চেয়ার এগিয়ে দিবে। কিন্তু সে যখন বড় চেয়ারের মালিক হবেন তখন আপনি তার সামনেও যেতে পারবেন না। কথায় তখন তাদের আগুনের ফুলকি ঝড়বে। মুখের কথায় তারা এক কাপ চা কফি খাইয়ে সাংবাদিক পটাতে পটু! বিবেক বলতে তাদের ভিতরে একটাই মুখের কথায় বিনামূল্যে সেবা নেয়া! কিছু রাজনীতিক আছে তার জন্য বিনা ফিতে সারা বছর শ্রম দিলাম কখনো পাচশো টাকা হাতে ধরায়নি বাট সে মনে করে অন্য রাজনীতিকেরা হাত ভরে দিচ্ছে! অদ্ভুদ ব্যাপার।
অভিজ্ঞতা থেকে বলি, ২০১৩ সালে বহু বিএনপির নেতাদের হুমকি ধমকি পেয়েছিলাম যাদের বহু মিটিং মিছিলের নিউজ বিনা পারিশ্রমিকে করেছিলাম! কারন তাদের ভাবখানা এমন ছিল ২০১৪ সালেই তারা ক্ষমতার চেয়ারে বসবেন। তবে ২০১৩ সালের আগে খুব কদর পেয়েছিলাম তবে জাস্ট মুখের কথায় আর চা কফিতে। আবারো চেয়ারের সম্ভাবনা দেখলে হুমকি ধমকি আসবে জানি। আজকে কোর্টে এক ভদ্র লোক বললেন তারা ক্ষমতায় আসলে সাংবাদিকদের এটা ওটা করে দিবেন। কিন্তু দুইজন সাংবাদিক একদিন এসেছিলাম তার কাছে একটা বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কিছু টাকা কমিয়ে রাখতো। কিন্তু তার ভাই অধ্যক্ষ তাকেই ফোন করে হাজার দুয়েক টাকা কমাতে বলেননি।। তাই হুট করেই সাথে সাথেই স্মরণ করিয়ে দিলাম সেই কথাটি, যে সামান্য কলটাই করেননি আর ক্ষমতায় আসলে সাংবাদিকদের জন্য এটা ওটা করবেন!
পুলিশের ক্ষেত্রে এমন- যে পর্যন্ত আপনি তার দুর্নীতির ঘটনার সংবাদ প্রচার করতে না পারবেন সে পর্যন্ত আপনাকে সে তিরস্কার করবে। ভয় ভীতি দেখাবে। তার কুকর্ম প্রকাশ করার পর তার কাছে আপনার কদর বেড়ে যাবে! আর ভাল পুলিশ কর্মকর্তারা কাজের ক্ষেত্রে ভাব দেখাবেনা আপনাকে সহযোগীতা করবেন। কোথাও কোন দায়িত্ব পালনে গেলে অহেতুক পুলিশ কার্ড দেখতে চাইবে। কার্ড নিয়ে পুলিশেরা হাতাহাতি করবে এটা ভূয়া নাকি আসল। আর পুলিশ তার প্রয়োজনে আপনাকে ম্যানেজ করে রাখবেন এবং আপনাকে তাদের পাচাটা দালাল বানিয়ে রাখবে। আপনি অন্যের পক্ষে তদবির করতে যাবেন তখন তদবির রাখবে। কিন্তু আপনি নিজে যখন বিপদে পড়বেন তখন আপনাকে সে চিনবেইনা।
সারাদিন সারা বছর সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ কষ্ট যন্ত্রনা বিপদে আপদে কিংবা রাস্তা সংস্কারে, নৌ পথে, রেলপথে মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য আপনি ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। কিন্তু আপনার বিপদে একজন সাধারণ মানুষকেও পাশে পাবেন না। বরং কোন সন্ত্রাসি আপনার উপর হামলা করলে আমজনতা না বুঝে না জেনেই মারধর শুরু করবে। আর তারা মনে করে সাংবাদিকেরা কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে। জনগণ দুএকজন কোটিপতি সাংবাদিকের উদাহরণ টেনে মনে করে সব সাংবাদিক কোটিপতি। পাবলিক মনে করে যে সাংবাদিক লাখ লাখ টাকা ইনকাম করে সেই বড় সাংবাদিক। যে পেটে পিঠে খেয়ে চলে সে ভূয়া সাংবাদিক। তাদের ধারনা টাকা কামাতে পারেনা সে কিসের সাংবাদিক। যেমন কদিন আগে এক লোক আমার হাতে দেড় হাজার টাকার মোবাইল দেখে বললো আপনি কিসের সাংবাদিক, মনে হয় ভূয়া। নতুবা সাংবাদিকের মোবাইল দেড় হাজার টাকার হয় নাকি?
আরেক ধরনের পন্ডিত লোকজন আছে যারা সাংবাদিকতা সম্পর্কে সও বুঝেনা। কিন্তু এমন ধরনের মন্তব্য করবে মনে হয় সে সাংবাদিকতায় পিএইচডি করেছিল। উদাহরণস্বরুপ বলি, ক বছর আগে, এক লোক আমাকে বললো কিরে তুই নাকি সাংবাদিক? তখন তার পাশেই দাড়ানো একজন বললো, সে তো সাংবাদিক হতে পারেনি, রিপোর্টার সে!
আরেক ধরনের পন্ডিত আছে, বলবে কিরে তুই কোন টিভির সাংবাদিক? তাদের ধারনা টিভিতে কাজ যারা করে তারাই সাংবাদিক। আর পত্রিকার কথা বললে বলবে এ পত্রিকা সরকারি নাকি বেসরকারি? আরেকদল আছে, যাদের কাছে স্থানীয় পত্রিকার নাম বললে বলে এগুলো ভূয়া পত্রিকা। সরকারি না! কয়েক বছর আগে ডান্ডিবার্তায় কাজ করতাম। এক বন্ধু হটাত বললো কিরে তোরে দেখলাম মিছিলের নিউজ করতাছচ? তো কোন পত্রিকার সাংবাদিক? আমি বললাম, ডান্ডিবার্তা। সে তো পুরো চমকে গেল। বললো এমন পত্রিকার নামও শুনিনি। এগুলো মানুষ তো পড়েনা। পোলাপানের গু মুত ফালায়। অথচ ডান্ডিবার্তা জেলার বহুল প্রচারিত পত্রিকা। সে নিজেও জীবনে কোন পত্রিকা পড়েছিল কিনা সন্দেহ হয়। একজন সাংবাদিক সবচেয়ে বেশি সাধারণ জনগণের পক্ষে ভুমিকা রাখে অথচ একজন সাংবাদিক কখনই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মানটা পায়না। নানা তিরস্তারের শিকার হন।
ইদানিং ফেসবুকে কিছু পন্ডিতের আভির্ভাব যারা অনলাইনের নিউজগুলোর শিরোনাম দেখেই কমেন্টস করে পান্ডিত্য দেখায়। কোন নেতার অপকর্মের সংবাদ লিখলে তা নেতার বিপক্ষে গেলে কর্মীরা টানবাজারের ভাষাও ব্যবহার করে। একেকজন জ্ঞানের ভান্ডার সেটা বুঝাতে নানান অশ্রাব্য ভাষায় কমেন্টস করে।
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম জহিরুল ইসলাম ভাই বললেন, সাংবাদিকতা হলো রাজমিস্ত্রির মতন। রাজমিস্ত্রি একটি ভবন তৈরি করে কিন্তু ভবন তৈরির পর সেই ভবনে রাজমিস্ত্রি প্রবেশ করতে পারেনা। ঠিক তেমনি সাংবাদিকেরা একজনকে চেয়ারে বসাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে কিন্তু সেই ব্যক্তি চেয়ারে বসার পর ওই সাংবাদিকের জন্যই প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ! সুতরাং Now give and take. শ্রম দাও পারিশ্রমিক নেও! কারন ভবিষৎে তোমার জন্যও প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকতে পারে!
বিঃ দ্রঃ এখানে প্রতিটি ঘটনা যেমন ঘটে আবার তাদের দ্বারা পজেটিভও পাওয়া যায়। বাট আমি একটা শ্রেণিদের নিয়ে বাস্তবতা তুলেছি। ম্যালথাসের তত্ত্ব যেমন পক্ষে বিপক্ষে যু্ক্তি ছিল এখানেও থাকবে। এসব জাস্ট আমার পর্যবেক্ষণে পাওয়া। কেউ এসবের পজেটিভও পেয়ে থাকতে পারেন।
লেখকঃ সংবাদকর্মী