বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করে দলীয় নেতা–কর্মীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড এবং গুম, খুন ও সন্ত্রাসের কারণে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।
নারায়ণগঞ্জের জনাসাধারণের প্রতি আহ্বান রেখে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে আপনারা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন এবং কোনো রকম হুমকির মুখে পড়তে না হয়, তার জন্য সেনা মোতায়েন করা হোক আমরা এ দাবি করেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত সরকার সমর্থিতদের দ্বারা বিরোধীদলের প্রার্থীদের কিছু ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নির্বাচনী প্রচারে বাঁধা দেয়ার ঘটনা ঘটলেও বড় রকমের কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। আমি নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ, ক্ষমতাসীন দল এবং সর্বোপরি ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, ভোটের দিন এবং এর আগে পরে পুরো নারায়ণগঞ্জে যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন পরিবেশ বজায় থাকে।
খালেদা জিয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জের জনগণ এবং বিএনপি ও ২০ দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং যে-কোনো উস্কানির মুখে সংযম ও শান্তি অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, মামলা মোকদ্দমার হাজিরা, শারিরীক অসুস্থতা ও অন্যান্য ব্যস্ততা ও সমস্যার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্বেও আমার পক্ষে সশরীরে এই নির্বাচন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জবাসীর মাঝে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের দল-জোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আপনাদেরকে আমার সালাম ও অনুরোধ পৌঁছে দিয়েছেন।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাখাওয়াতের কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাহসী ব্যক্তি অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খানকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছি। পরীক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তিদের কাউন্সিলার পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের পৃথক পৃথক মার্কা রয়েছে। তবে মেয়র পদে আমাদের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের মার্কা ধানের শীষ।
তিনি বলেন, এই ধানের শীষ মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ধানের শীষ। এই প্রতীক বিএনপির প্রতীক, আমার প্রতীক। এই ধানের শীষ সন্ত্রাস ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের। এই ধানের শীষ ‘শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সংহত করা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার রক্ষার প্রতীক’।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসী আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন খানকে মেয়র নির্বাচিত করবেন এবং আমাদের মনোনীত কাউন্সিলার প্রার্থীদেরকেও একইভাবে নির্বাচিত করবেন।
বিএনপি ও ধানের শীষের পক্ষে নারায়ণগঞ্জে ইতোমধ্যে যে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা জেনে তিনি আনোন্দিত উল্লেখ করে বলেন, ভোটের বাক্সে এই সমর্থনের প্রতিফলন ঘটান। নতুন ভোটার, মা-বোন, মুরুব্বীয়ান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকসহ সকলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে ভোট দিবেন এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করবেন।
তিনি বলেন, মনে রাখবেন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আপনাদের ভোট দেওয়ার ও অন্যান্য অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং শান্তি স্থাপনে এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের অধিবাসী এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা জুলুম, নির্যাতন, গুম, খুন, হামলা, মামলা, হয়রানী, দখল, দলীয়করণ, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, সন্ত্রাসসহ নানা ধরণের অন্যায়ের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আপনাদের এক-একটি ভোট হবে এসবের বিরুদ্ধে এক-একটি বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। আমি আশা করি আপনারা নারায়ণগঞ্জে ২২ ডিসেম্বর নীরব ভোট বিপ্লব ঘটাবেন।
নেতা-কর্মীদের প্রতি খালেদা জিয়া বলেন, আমি আশা করি দল-জোটের নেতা-কর্মী ও জনগণ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন এবং নির্বাচনী ফলাফল শেষে বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবেন।