ভিক্ষুকের টাকা মেরে দিলেন চেয়ারম্যান

39

নিউজ প্রতিদিন ডটনেট : ভিক্ষা করে জমানো স্বামী হারানো ৮২ বছর বয়সী কুটি খাতুনের ১৫ হাজার টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে। মাথা গোঁজার স্বপ্ন নিয়ে সরকারি ঘরের আশায় ২ বছর আগে ওই নেতাকে এ টাকা তুলে দেন কুটি। অথচ আজও সেই ঘর দেওয়া হয়নি তাকে। এমনকি টাকাও ফেরত পাননি তিনি।

অভিযুক্ত ওই আ.লীগ নেতার নাম কামরুজ্জামান সাহেব ফকির। তিনি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযোশরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

ভুক্তভোগী কুটি খাতুন উপজেলার চরযশোরদি ইউনিয়নের বড় শ্রীবদ্দি গ্রামের বাসিন্দা মৃত ইউসুফ মাতুব্বরের স্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে নিজের জীবন বাঁচাতে লড়াই করে আসছেন তিনি। পেটের তাগিদে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করছেন তিনি। বসবাস করছেন প্রতিবেশির ঝুপরি ঘরে। এমন অবস্থায় শেষ বয়সে এসে একটি সরকারি ঘরে মাথা গোঁজার স্বপ্ন দেখেন তিনি। আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য গত ২ বছর আগে ভিক্ষা করে জমানো ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে।

তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এখনো মেলেনি তার সরকারি ঘর। এমনকি ফেরত পাননি টাকা। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো ভাতার তালিকায় তার নামও ওঠেনি বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী কুটি খাতুনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য ওঠে আসে।

মূলত চেয়ারম্যান নির্বাচনের আগে আওয়মী লীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় এ লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়।

প্রতিবেশীরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের বছর মারা যান কুটি খাতুনের স্বামী। তার দুটি ছেলে সন্তান থাকলেও তারা কেউ মাকে দেখেন না। স্বামীর সম্পত্তি বলতে এক টুকরো ভিটে থাকলেও মাথা গোঁজার মতো ঘর ছিল না। প্রতিবেশীর একটি ঝুপরি ঘরে থেকে ভিক্ষা করে পেট চালান তিনি। বর্তমানে অনাহারে অর্থাহারে কাটছে তার জীবন।

ভুক্তভোগী কুটি খাতুন অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে গত ২ বছর আগে চরযোশরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সাহেব ফকির আমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু টাকা নিলেও ঘর দেয়নি। আমি ঘরের জন্য অনেক ঘুরেছি, লাভ হয়নি। এখন দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছি।

কুটি খাতুনের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির খান বলেন, ওই বৃদ্ধা মহিলা বারবার আমার কাছে এসে ঘর ও টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে। আমি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করলেও তিনি গুরুত্ব দেননি।

অভিযুক্ত চরযোশরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান সাহেব ফকির বলেন, কুটি খাতুনকে আমি চিনিই না। তবে শুনেছি, সরকারি ঘরের জন্য পাচী নামে এক মহিলা তার আত্মীয়কে ১৩ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা পাচীকে ফেরতও দিয়েছে। এখন আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে।

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে টাকা নেওয়ার প্রমাণ মিললে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া এই বয়োজ্যেষ্ঠ অসহায় মহিলাকে বসবাসের জন্য অতি দ্রুত একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে এবং সরকারি ভাতার আওতায় আনা হবে।