নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলী এখন আতঙ্কের জনপদ

81

নিউজ প্রতিদিন ডটনেট: অশান্ত হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার চরাঞ্চল বক্তাবলী। সেখানে একের পর এক ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে হামলা-পাল্টা হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। অনেকে গুরুতর আহত হয়ে সারা জীবনের জন্য কাজের অক্ষম হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে সম্প্রতি টেঁটা দিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে। পুরো বক্তাবলী এলাকায় এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। নারায়ণগঞ্জ শস্যভাণ্ডার খ্যাত বক্তাবলী এখন আতঙ্কের জনপদ হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, বক্তাবলী অশান্ত হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার। এ ছাড়া ইটভাটায় মাটি সাপ্লাই, নৌপথে ডাকাতি এবং জমিজমা বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্ব।

স্থানীয়দের মতে, বিগত এক যুগ ধরে চলা আধিপত্যের লড়াইয়ে কম করে হলেও সহস্রাধিক নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। অসংখ্য বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। সর্বশেষ ৩১ মে দুইপক্ষের মধ্যে টেঁটাযুদ্ধ হয়। এতে বেশ ক’জন টেঁটাবিদ্ধসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এর ঠিক তিন দিন আগেও দুই গ্রুপের মধ্যে টেঁটাযুদ্ধ হয়েছিল। সে সময় অন্তত ২০জনের মতো টেঁটাবিদ্ধসহ আহত হয়েছিলেন অন্তত শতাধিক ব্যক্তি। এ ছাড়া বিক্তাবলী আকবর নগরের রহিম হাজী ও সামেদ আলী গ্রুপের সংঘর্ষে বিগত দিনে প্রায় ডজনখানেক খুনের ঘটনা ঘটেছে।

সূত্র জানায়, বক্তাবলীর আকবর নগরের অধিপত্য বিস্তার নিয়ে গেল এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রহিম হাজী ও সামেদ আলীর মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে এই যুগের মধ্যে অন্তত কয়েক শ বারের মতো সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। কয়দিন বিরতির পরপরই এই দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নানা সময়ে নানাভাবেই এই দুই গ্রুপের এই বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন থেকে শুরু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে অভিযোগ রয়েছে, সামেদ আলী ও রহিম হাজী একে অপরের শত্রু হলেও তারা দুজনই স্থানীয় চেয়ারম্যান শওকত আলীর শেল্টারেই চলেন। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের এই নেতার লোক তারা দুজন- সবার কাছে তেমনভাবেই পরিচিত তারা। কারো কারো মতে, নিজের সুবিধার জন্য সামেদ ও রহিমের মধ্যে বিরোধ জিইয়ে রাখার নেপথ্য কারিগর হিসেবেই কাজ করছেন তিনি।

নদীবেষ্টিত আকবর নগরের একদিকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদি খান অন্যদিকে কেরানীগঞ্জ। ফলে সংঘর্ষের সন্ত্রাসীরা ওই দুটি এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। আবার এসব সংঘর্ষে ওই দুই এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা এসেও উভয় গ্রুপে যুক্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পুলিশ প্রশাসন এখানে কার্যত তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বক্তাবলীতে দুই গ্রুপের মারামারির কারণে হৃদয় হোসেন বাবু (৩০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী ও হত্যা মামলার আসামি নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের আরো কয়েকজন গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হৃদয় হোসেন বাবু বক্তাবলী ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার রাসেলের লোক বলে জানা গেছে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগরে এক শিক্ষানবিস আইনজীবী ও তার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। একই সাথে মাদ্রাসা ভাঙচুর ও টাকা লুটেরও অভিযোগ উঠেছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। চাঁদা দাবি এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে সম্প্রতি বক্তাবলীর কানাইনগরের মারকাযুস সুন্নাহ তৈয়্যবিয়া মাদ্রাসার সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় সম্প্রতি ডাকাতের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ধলেশ্বরী নদীতে একটি বাল্কহেডে ডাকাতির সময় নৌ পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে এ হামলা চালায় ডাকাতরা। এ সময় আট ডাকাতকে আটক করেছে নৌ পুলিশ। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান শওকত আলী জানান, পরিবারের প্রভাব বিস্তার নিয়ে গত তিন দশক ধরে এই দুই পরিবার সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে। মাঝখানে বেশ কয়েক বছর শান্ত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা আবারো একে অপরের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে সাথে নিয়ে বক্তাবলীর শান্তি ফিরিয়ে আনতে যা যা করনীয় তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এদের কোনো দলীয় সাপোর্ট নেই। তারা এলাকা ও পরিবারকেন্দ্রিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আযম মিয়া জানান, বক্তাবলীতে যারা সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে তাদের ইতোমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সূত্র : নয়া দিগন্ত