র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে শহরে দীর্ঘদিন যাবত রোগীদের সাথে প্রতারনা করে টাকা কামিয়ে আসা ভূয়া ডাক্তার জি.সি পন্ডিতের ডাক্তার হওয়ার নেপথ্য কাহিনী। জানাগেছে, দীর্ঘদিন যাবত এই জি.সি পন্ডিত বিএমএ জেলা সভাপতি ডা: শাহনেওয়াজের তত্ত্বাবধানেই কাজ করতেন। তাকে শেল্টারও দিতেন ডা: শাহনেওয়াজ। যিনি এই ভূয়া ডাক্তারকে শীঘ্রই একটি বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ও এমবিবিএস সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম, না করা সত্ত্বেও স্ট্যান্ডার্ট চাটার্ড ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে একটি ক্রেডিট কার্ড করতে যেয়ে জি.সি পন্ডিতের ভাগ্যে এই দূর্গতি নেমে আসে। তথ্যানুসন্ধ্যানে জানাগেছে, স্ট্যান্ডার্ট চাটার্ড ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে একটি ক্রেডিট কার্ড নেয়ার আবেদন করে ভূয়া ডাক্তার জি.সি পন্ডিত। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জি.সি পন্ডিতের দেয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেট অনলাইনে যাচাই করে দেখতে পায় জি.সি পন্ডিতের দেয়া সার্টিফিকেটের ছবির সাথে বাস্তবতার মিল নেই। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি র্যাবকে জানালে ভূয়া ডাক্তার এইচএসসি পাশ জি.সি পন্ডিত ধরা পরে যায়। আর অর্থদন্ড দিয়েও যেতে হয় জেলখানায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, মেয়ে বিয়ে দেয়ার প্রায় ৫ বছর পর শ্বশুড় নারায়ণগঞ্জের হিন্দু নেতা আয়কর আইনজীবী তারাপদ আচার্য্য জামাতা জি.সি পন্ডিত একজন ভূয়া ডাক্তার জানতে পায়। অথচ বিয়ের এত বছর পর কেন জানতে পারলেন বা বিয়ের পূর্বেই বা জি.সি পন্ডিতের সর্ম্পকে যাচাই করেননি কেন- অভিযানের নেতৃত্বদানকারী সিদ্ধিরগঞ্জ র্যাব-১১’র এএসপি নাজিম উদ্দিনের এমন প্রশ্নে জবাবে তারাপদ আচার্য্য জানান, তার মেয়ের জামাতা ডা: শাহনেওয়াজের তত্ত্বাবধানেই কাজ করতেন। ডা: শাহনেওয়াজ এবং জনৈক ডা: সুবীর জি.সি পন্ডিতের সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিতে সুপারিশ করায় আর তখন তারাপদ আচার্য্য জামাতার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেননি। কিন্তু জামাতার এমন ঘটনা ফাঁস হওয়ায় বেশ মর্মাহত হয়ে যান তিনি। কিন্তু জি.সি পন্ডিতের শেল্টারদাতা বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন জেলা সভাপতি ডা: শাহনেওয়াজ ঘটনার দিন এক ঝলকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেলেও তখন সেখানে উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বা র্যাব কেউই জানতেন না যে এই শাহনেওয়াজই ছিলেন জি.সি পন্ডিতের ভূয়া ডাক্তার হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করার নেপথ্য কারিগর। তবে এব্যাপারে জানতে বিএমএ জেলা সভাপতি ডা: শাহনেওয়াজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারাপদ আচার্য্য জি.সি পন্ডিতের সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিবেন কিনা এব্যাপারে বিয়ের আগে কখনোই আমার কাছে জানতে চাননি। আমি এই দেশের একজন নাগরিক, আইনের উর্ধ্বে নই। তাই জি.সি পন্ডিতকে শেল্টার দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। উল্লেখ্য, গত ১০ আগষ্ট শহরের বি.বি রোডে ন্যাশনাল মেডিকেল সেন্টারে অভিযান চালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ র্যাব-১১’র এএসপি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম ভূয়া ডাক্তার গৌর চাঁদ পন্ডিত ও জি.সি পন্ডিত (সুবীর)কে আটক করেন। পরে সদর এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুম আলী বেগ ঘটনাস্থলে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ভূয়া ডাক্তার জি.সি পন্ডিতকে নগদ ১লাখ টাকা জরিমানা করে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।