জীবন শিক্ষায় জালালুদ্দিন রুমির ১০ উক্তি

117

%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%bfমাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (১২০৭-১২৭৩) ত্রয়োদশ শতকের একজন ফার্সি কবি। ধর্মতাত্ত্বিক এবং সুফি দর্শনের শিক্ষক ছিলেন তিনি। রুমি খোরাসানের (বর্তমান আফগানিস্তান ) বলখ শহরে ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পরিবার ছিল বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও ধর্মতত্ত্ববিদ পরিবার। তার পিতা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদকে সমসাময়িক বিদ্বানরা ‘পণ্ডিতদের সুলতান’ বলে আখ্যায়িত করেছিল।

রুমির পিতা ছিলেন একজন বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ, সুফি এবং অতীন্দ্রিয়বাদী যার সাহস, সাধুতা, অন্তরের মহত্ত্ব এবং ঈশ্বরের প্রতি দার্শনিক বা মৌল অভিগমনের পরিবর্তে সরাসরি আধ্যাত্মিকভাবে সমীপবর্তী হওয়ার বাসনা রুমিকে ভীষণভাবে প্রভাবিত এবং অনুপ্রাণিত করেছিল।%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%bf-1

রুমি যে যুগে জন্মগ্রহণ করেন তখন ভয়াবহ এক আলোড়ন চলছিল। অটোম্যান সাম্রাজ্য ভিতরে এবং বাইরে থেকে আক্রান্ত ছিল। ভিতরে ছিল খ্রিষ্টান আক্রমণকারীরা এবং অপর দিক থেকে চেঙ্গিস খানের মোঙ্গল বাহিনী। এই সামাজিক-রাজনৈতিক আলোড়ন রুমিকে তরুণকাল থেকে আতঙ্ক ও বিশৃংখলা দ্বারা দহন করেছিল।

ধর্মীয় বিরুদ্ধবাদীদের বিরোধিতা এবং সম্ভাব্য মোঙ্গল আক্রমণের আশঙ্কায় ১২১৯ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র বার বৎসর বয়সে রুমি তার পিতাসহ বলখ ত্যাগ করেন। বাহাউদ্দিনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এক বৎসর পরেই বলখ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

পিতার সঙ্গে ভ্রমণের আরেক পর্যায়ে রুমি দামাস্কাস যান। সেখানে সে যুগের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ইবনুল আরাবির সাথে দেখা হয় তাদের। শোনা যায় ইবনুল আরাবি যখন রুমিকে তার পিতার পিছনে হাঁটতে দেখেন- তখন বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরের কী মহিমা, একটি হ্রদের পিছনে এক সমুদ্র যাচ্ছে।’

আঠারো বছর বয়সে রুমি সমরখন্দের এক অমাত্যের কন্যা গওহর খাতুনকে বিবাহ করেন। সুলতান ওয়ালাদ ও আলাউদ্দিন তিলবি নামে তাদের দুটি পুত্র সন্তান হয়।%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%bf-2

লারান্দা এবং আর্মেনিয়ার আরজানজানে কিছুদিন অবস্থান করার পর রুমির পিতা কোনিয়ার সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ দ্বারা আমন্ত্রিত হন। তখন ১২২৯ খ্রিষ্টাব্দ। কোনিয়ায় বাহাউদ্দিন ওয়ালাদের জন্য বিশেষভাবে এক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১২৩১ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানে শিক্ষাদান করেন। পরবর্তীকালে মাত্র চব্বিশ বৎসর বয়সে রুমি সেই বিদ্যাপীঠে তার পিতার উত্তরসূরী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন।

এখানে রুমির ১০টি জনপ্রিয় উক্তি তুলে ধরা হলো। এগুলো আপনার জীবনের অনেক বড় শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%bf-3

১. তুমি সাগরে এক বিন্দু পানি নও। তুমি এক বিন্দু পানিতে গোটা এক সাগর। শিক্ষাটা হলো- নিজের মূল্য বুঝতে হবে।

২. আমাদের মধ্যে এক অদৃশ্য শক্তি লুকিয়ে আছে। এটি যখন দুটো বিপরীতমুখী বাসনার উপলব্ধি প্রকাশ করে, তখন তা শক্তিশালী হতে থাকে। শিক্ষাটা হলো- নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে থাকুন।

৩. গতকাল আমি চতুর ছিলাম। তাই আমি পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি জ্ঞানী, তাই নিজেকে বদলে ফেলতে চাই। শিক্ষাটা হলো- পরিবর্তনটা আপনি আনুন্য।

৪. শোক করো না। তুমি যাই হারাও না কেন তা অন্য কোনো রূপে ফিরে আসবে। শিক্ষাটা হলো- ইতিবাচক থাকুন।

৫. প্রত্যেককে বানানো হয়েছে নির্দিষ্ট কাজের জন্য এবং প্রত্যেক হৃদয়ে সেই কাজটি করার আকাঙ্ক্ষাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।শিক্ষাটা হলো- নিজের আবেগ নিয়ে বেঁচে থাকুন।

৬. কেউ যখন কম্বলকে পেটাতে থাকে তখন সেটা কম্বলের বিরুদ্ধে নয়, ধুলোর বিরুদ্ধে। শিক্ষাটা হলো- মনোযোগী থাকুন।

৭. আমাদের চারদিকে সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে। সাধারণত একে বুঝতে একটি বাগানে হাঁটার প্রয়োজন অনুভব করি আমরা। শিক্ষাটা হলো- নিজের পথ নিজেই সৃষ্টি করুন।

৮. যখন নিজের মূল্য নির্ধারণের দিনটি আসবে তখন আপনার পরিচয় ফুটিয়ে তোলাটাই বিজ্ঞানের নির্যাস। শিক্ষাটা হলো- আপনি যেমন তেমনই থাকুন।

৯. শোক প্রকাশ হতে পারে সমবেদনার বাগান। যদি সবকিছুতে নিজের হৃদয়টাকে উদার রাখতে পারেন, বেদনা আপনার শ্রেষ্ঠ বন্ধু হতে পারে। শিক্ষাটা হলো- ভালোবাসা ও জ্ঞানের জন্য নিজের যাত্রাটাকে নিরবচ্ছিন্ন রাখুন।

১০. আমার প্রথম প্রেমের গল্প শোনামাত্র তোমাকে খুঁজতে থাকি, কিন্তু জানি না ওটা কতটা অন্ধ ছিল। প্রেম আসলে কোথাও মিলিত হয় না। সারাজীবন এটা সবকিছুতে বিরাজ করে। শিক্ষাটা হলো- সবকিছুতে ভালোবাসা খুঁজতে থাকুন।