ফতুল্লায় শিক্ষিকা মারধরের অভিযোগে জাপা নেতা মজিদ গ্রেফতার

39

একজন স্কুল শিক্ষিকাকে বাড়িতে ঢুকে মারধর ও জুতাপেটা সহ লাঞ্ছনার অভিযোগে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আবদুল মজিদ খন্দকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতিতা শিক্ষিকা শাহীনূর পারভীনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায়। তিনি হাজীগঞ্জ এলাকার প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মজিদ খন্দকারকে ফতুল্লার হাজীগঞ্জের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে দুপুরে শিক্ষিকার বাবা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

নির্যাতনের পরে রোববার রাতে শাহীনূর পারভীনকে শহরের খানপুরে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখান থেকে সোমবার সকালে তাকে সদর উপজেলার হাজীগঞ্জের ভাড়া বাড়িতে নেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) শরফুদ্দিন ওই শিক্ষিকার বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।

নির্মম এ ঘটনার শিকার শাহীনূর পারভীন শানু এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ওই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। স্থানীয় আইনজীবি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো: নুরুল হুদার বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন তিনি। তার দুই ছেলে মেয়ে।

শাহীনূর পারভীন শানু জানান, একই এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী জাতীয় পার্টি নেতা ও আইনজীবী আবদুল মজিদ খন্দকার রোববার রাত ১০টার দিকে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে তার বাসায় এসে তাদের নাতনিকে বাসায় গিয়ে পড়ানোর প্রস্তাব দেন। দীর্ঘ ছয় মাস যাবত কিডনীজনিত রোগে অসুস্থতার কারণে তাদের এ প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দেন শানু। আর এ অপরাধে ওই আইনজীবি ও তার স্ত্রী প্রথমে তাকে মৌখিকভাবে হুমকি দেন এবং এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে নাবালক ছেলে মেয়ে ও স্বজনদের সামনেই তাকে মারধর করতে থাকেন। গলায় চাপ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পায়ের জুতা খুলে তাকে জুতাপেটাও করেন।

শাহীনূরের মা রাবেয়া ইসলাম জানান, তার মেয়ে শাহীনূর পারভীন শানু দীর্ঘ ছয় মাস যাবত কিডনিজনিত রোগে ভুগছেন। এ কারনে প্রাইভেট পড়ানো ছেড়ে দিয়েছেন।

বাড়ির মালিক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট নূরুল হুদা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি একজন আইনজীবি তেমনি আমিও একজন আইনজীবি। আমার অনুমতি ছাড়া আমার বাড়িতে ঢুকে আমার ভাড়াটের গায়ে হাত তোলা ও জুতাপেটা করা দন্ডনীয় সামাজিক অপরাধ করেছেন। তার উচিত ছিল আগে আমার সাথে কথা বলা। কিন্তু তিনি সেটা না করে চরম অপরাধ করেছেন। একজন আইনজীবির দ্বারা এ রকম বেআইনী কাজ করে তিনি নিন্দিত হয়েছেন।

জাপা নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খন্দকার বলেন, অমি আর আমার স্ত্রী আমাদের নাতনিকে বাসায় পড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। সে পড়াবে না ভালো কথা। কিন্তু আমাদের মুখের উপর না করে দিল। আমাদের অপমান করল। তাই অপমানের বদলে তাকে অপমান করা হয়েছে।

হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তাহমিনা নাজনীন জানান, শাহীনূরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নসহ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার আলামত পাওয়া গেছে। হাসপাতালে আনার পর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিন জানান, সোমবার দুপুরে শাহীনূর পারভীনের বাবা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে আবদুল মজিদ খন্দকার ও তার স্ত্রী রোকেয়া খন্দকারকে আসামী করে মামলা করেছে। সন্ধ্যায় মজিদ খন্দকারকে হাজীগঞ্জের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।