কোটা সংস্কারে ক্ষোভে ফুঁসছে দেশ : ঘটতে পারে ছাত্র অভ্যুত্থান

68

ঘরে ঘরে চাকরি আর ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর মত চকমপ্রদ ওয়াদা দিয়ে অবৈধ কেয়ারটেকার সরকারের বদান্নতায় ক্ষমতায় এসে আরো একটি টার্ম বিনে ভোটেই সরকার গঠন করে টানা দশ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করছে শেখ হাসিনা সরকার ।

দৃশ্যমান কয়েকটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে দফায় দফায় প্রকল্প মেয়াদ আর বাজেট বাড়িয়ে সারা দেশের সড়ক ব্যবস্থা গত দশ বছর ধরে অচল রেখেও নির্দিধায় পার করছে সময়গুলো । গৃহপালিত বিরোধীদল আর মেরুদন্ড ভাংগা বিএনপি জামায়াত তাদের চলার পথে কোন বাধাই হতে পারেনি ।

চলমান নয় বছরের মাথায় আজ ঘরে ঘরে বেকার, বৈশম্য, নিপিরণ, ক্ষুধা, দারিদ্র, আর বেকারত্বের অভিশাপে পুড়ছে সমাজের বড় অংশটি ।

যে বৈশম্যের বিরুদ্বে আন্দোলন করে পাকিস্তানীদের হাত থেকে বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডের জন্ম হয়েছিল , স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে সেই লাল সবুজের দেশে ৩০ লক্ষ শহীদের দেশে, আড়াই লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া সে বাংলায় ৫৬% কোটা দিয়ে চাকরী ক্ষেত্রে দেশের মেধাবীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে গত ৪৫ বছর ধরে ।

কোটা নিয়ে এই ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছিল বহু বছর থেকেই । ২০১৮ তে এসে সেই আন্দোলন রুপ নেয় অনেকটা ছাত্রবিপ্লবে । ঘটে যায় লোহ মানবী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্বরণকালের সবচেয়ে বড় আন্দোলন । সব ধরনের রক্তচুক্ষকে উপেক্ষা করে ছাত্ররা নেমে পড়ে রাস্তায় । বাংলাদেশের সব বড় আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটার নামে মেধার বৈশম্যের বিরুদ্ব্যে এ আন্দোলন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে সব সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ জেলা উপজেলার সকল কলেজে ।

আন্দোলনের ভয়াবহতা প্রথমে উপলদ্বি করতে না পারলেও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর ছাত্রলীগ এবং পুলিশের হামলার পর পর ই তা ভয়ংকর রুপ ধারণ করে । প্রথম বারের মত কোন ছাত্র আন্দোলনে বিপুল সংখক ছাত্রী অংশ নেয় । যে ছাত্রদের বলা হয় এ প্রজন্ম শুধু ফেসবুকে বিপ্লব করে এ প্রজন্মের ছাত্রদের মধ্যে ৬৯ এর অভ্যুত্থান, ৭১ এর রক্ত ঝড়া কিংবা ৯০ এর শ্বৈরাচার বিরুধী আন্দোলনের মত সংগ্রাম করা সম্ভব না । এপ্রজন্মের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রদের যে খানে দীর্ঘদীন ধরে ট্যাগ দেয়া হচ্ছিল তারা অনেকটা “বয়লার মুরগীর মত” । সেই বেসরকারী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও নেমে পড়ে রাস্তায় । প্রকাশ্যে পুলিশ অফিসারের গুম করে ফেলার হুমকিতে পরোয়া না করে সেখানে হুংকার ছুড়ে ।

এতে পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে মুহুর্তে মুহুর্তে । সকাল সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে অধিকার বঞ্চিত ছাত্রদের ন্যায় সংগত আন্দোলনের প্লাটফর্ম । এরই মধ্যে খবর আসে হলে হলে ছাত্র এবং ছাত্রীদের নিপীরণ করছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ । মধ্য রাতে কবি সুফিয়া কামাল হলে এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার খবর ভাইরাল হলে অগ্নিগর্ভে রুপ নেয় । পরের দিন ঢাকা সহ সারা দেশ অচল হয়ে যায় । সে রাতের পরেই প্রধানমন্ত্রী সংসদের দাঁড়িয়ে জাতীর উদ্দ্যেশ্য ভাষণে অনেকটা রাগ আর ক্ষোভে বলেন “কোন কোটাই থাকবেনা”

এ ভাষণের পরে ছাত্রসমাজ প্রধানমন্ত্রীকে ”মাদার অফ এডুকেশনে” ভুষিত করেন । ছাত্ররা ফিরে যায় ক্যাম্পাসে, পড়ার টেবিলে । কিছু দিনের মধ্যে কোটা বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হবে বলেও জানানো হয় ।

কিন্তু আজ কাল করে কালক্ষেপণ করা হচ্ছিল এটা নিয়ে । শুধু মাত্র রমজানটা পার করতে চাচ্ছিল সরকার । তারা জানে কোন ভাবে ছাত্রদের এই ইউনিটি আর স্পিরিটটা নষ্টা করে দিতে পারলেই ঈদের পরে ঝোপ বুঝে কোপ মারা যাবে ।

হয়েছেও তাই, শকতারা ৯৯ জন ছাত্রদের প্রাণের দাবীর সাথে অনেকটা তামাশা করা হল । ছোট বড় কোন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার বা সহযোগীতা ছাড়াই যে বিশাল ইউনিটির নেতৃত্ব দিয়েছিল যে ছেলে গুলো তাদের উপর নেমে আসলো নানা হুমকি ।

সর্বশেষ গত ৩০ এ জুন তাদের একটি সংবাদ সম্মেলনে যে ভাবে ছাত্রলীগ হামলা করে পন্ড করে দিল তা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারিনি দেশের ৯৯% ছাত্ররা ।

এ ঘটানায় ক্ষোভে ফুঁসছে সকল ছাত্ররা । ক্রমেই দানা বেধে উঠছে তা । যে কোন সময় এ ক্ষোভ গনবিস্ফোরণ রুপ নিতে পারে ।

আর ৯৯ % এ ছাত্রদের যৌক্তিক দাবীকে দমানোর জন্য সরকার দলীয় সুবিধাভোগী যে নেতৃত্ব আজ এ হামলা করেছে তাদের কে দেখলে ইতিহাস হয়তো গলার মধ্য আঙ্গুল দিয়ে তাদের উপর বমি করে দিতে পারে একদিন । সে বমি দেশের বড় ছাত্রসংগঠন গুলোর নেতৃত্ব দেয়া অন্যান্ন ছাত্রসংগঠনের (ছাত্র দল, ছাত্রশিবির, ছাত্র মৈত্রি কিংবা ইশা ছাত্র আন্দোলনের) নেতাদের উপরও পড়তে পারে ।

যে ভাবে নুরুল হক নুরু, রাশেদ কিংবা মাহমুদরা ছাত্রদের ত্রাতা হয়ে আবির্ভুত হয়েছিল সে ভাবেই আসবে যুগে যুগে ওরা যদি নরপিচাশের হাতে হারিয়েও যায় তবে মনে রাখবেন ( এখনকার ছাত্রনেতারা) ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবেনা । প্রকৃতি শুন্যস্থান রাখেনা পুরন করে দেয়, ওদের শুন্যস্থানও পুরন হয়ে যাবে কিন্তু আপনারা অপরাধী হয়েই বাচবেন ।

সুতরং ৯৯% ছাত্রদের প্রাণের দাবীতে একসাথে নামুন । এ বিপ্লবে শামিল হোন । সরকারের কাছেও অনুরোধ আপনারা শুভবুদ্ধির পরিচয় দিন । না হলে পরিণতি হবে এরশাদের মত । ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা হয়ে বাঁচতে হবে আজীবন । প্রধানমন্ত্রী আপনার ওয়াদা রক্ষা করেন । ছা্ত্ররা ফুঁসেছে । সুফিয়া কামাল হলে সে রাতে রগ কেটে যেমন আপনার পছন্দের ছাত্ররা পার পায়নি কারো হাত থেকে যে কোন সময় সে ঘটনা আবার ঘটতে পারে।