দুদেশের সম্পর্কে আরেকটি মাইলফলক॥প্রধানমন্ত্রী

49

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ এবং ব্যান্ডউইথ বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের আরেকটি মাইলফলক হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল তা অটুট রয়েছে এবং তা আরও সুদূর প্রসারী হচ্ছে।
আজ বুধবার বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের সময় ঢাকা থেকে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। দিল্লি থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ত্রিপুরা থেকে প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার অংশ নেন।
ভিডিও কনফারেন্সে বাংলা ভাষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান এবং ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ভারতবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সবাইকে অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণ যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন, সে কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। সেই থেকে আমাদের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা অটুট রয়েছে। বর্তমানে আরও সুদূর প্রসারী কার্যক্রম করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ এবং ব্যান্ডউইথ বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক সৃষ্টি করলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ আমদানি আমাদের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করবে। বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ পাওয়ার ফলে ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং সেখানকার জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও যথেষ্ট অবদান রাখবে। আমাদের বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মধ্য দিয়ে আমাদের আরেকটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণ হলো। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে আমি যখন ত্রিপুরা সফরে যাই, সে সময় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এটা বাস্তবায়ন করায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে জ্বালানি খাত নিয়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যেটা এই অঞ্চলে প্রথম এবং আমরা ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব বলে আশা করছি। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপালে নির্মাণ করা হচ্ছে। যা আমি মনে করি, দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। অবশ্য আমাদের মধ্যে আমাদের ভার্চুয়াল সংযোগ, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, চিন্তা-চেতনার সংযোগসহ সব ধরনের সংযোগ স্থাপন হয়েছে। ব্যান্ডউইথ ভাগাভাগি, উপকূলীয় এলাকায় জাহাজ চলাচল, পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহের মতো নতুন যোগাযোগ আমাদের সামগ্রিক ক্ষেত্রে সংযোগ হওয়ার ক্ষেত্রে একটা নতুন মাত্রা দিয়েছে। আঞ্চলিক আন্তসংযোগ—আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনাকে আরও সম্প্রসারিত করবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই এই অঞ্চলে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে। এই দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ আমরা একা করতে পারি না। আমাদের যৌথ উদ্যোগ দরকার। এ ক্ষেত্রে তা আমরা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে করতে সক্ষম হয়েছি। বরং এখন মনে করি, দুই দেশের মানুষ যারা এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে—তাদের জীবনমান যৌথভাবে উন্নত করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, আমরা চাই, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সেই সঙ্গে দুই দেশেরই উন্নয়ন। এই অঞ্চলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। আমি নিশ্চিত, আমাদের জনগণের বৃহৎ কল্যাণ সাধনের জন্য ভবিষ্যতে এ ধরনের আনন্দঘন আরও মুহূর্তের দেখা পাব।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।