আবদুর রহিম. মো. আবুল কালাম ( নারায়ণগঞ্জ) আওয়ামীলীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের সাথে দেশের অনেক ইতিহাস জড়িত। নারায়ণগঞ্জের আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জের অনেক অবদান রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে।
লিংক রোড ছয়লেনে উন্নতি করা হয়েছে, শহর-বন্দরবাসীর জন্য নাসিম ওসমান সেতু করে দেয়া হয়েছে। পঞ্চবটী-মোক্তারপুর ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি আমরাও পারি। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আমরা ক্ষমতায় এসেছি বলেই এতো কিছু করতে পেরেছি। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়রি) বিকেল সোয়া ৩টায় শহরের ইসদাইর এলাকায় একেএম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে পৌঁছান তিনি। এরআগে গত ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে এক নির্বাচনী জনসভায় নারায়ণগঞ্জ শহরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে যতো ষড়যন্ত্র হোক না, আমাদের শক্তি দেশের মানুষ। তিনি দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেয়ার আহবান জানান।
নারায়ণগঞ্জ স্মার্ট সিটি হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারায়ণগঞ্জকে আমরা স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলব। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি। নারায়ণগঞ্জে তিনটি মেট্রোরেল তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য আমরা তিনটি মেট্রোরেলের লাইন তৈরি করব। এমআরটি লাইন ১, ২ ও ৪। এমআরটি লাইন ওয়ান ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে মেট্রোরেল চলবে। এমআরটি লাইন ওয়ান এমআরটি লাইন ২ ও ৪ এগুলো সবই যাবে নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে। এছাড়া আমরা নারায়ণগঞ্জ স্পেশালি ইকনোমিক জোন করবো।
বিএনপি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ সামনের দিকে যায় আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দেশ পেছনের দিকে নিয়ে যায়। আমরা ক্ষমতায় থাকতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায় এসে পিছিয়ে দিয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে সরকার গঠন করে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপি ২০ দলীয়ভাবে ও আমরা মহাজোট হয়ে নির্বাচন করি। আমরা ২৩৩ সিটে জয় লাভ করেছিলাম। বিএনপি পায় শুধু ৩০ টি সিট। বাকিগুলো জোটের মিত্ররা পেয়েছিল। এ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায়। তারা নির্বাচন ঠেকাতে আগুন সন্ত্রাস শুরু করে। ২০১৪ এর নির্বাচন যাতে না হয় সে লক্ষে ২০১৩ থেকেই তারা অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে। মানুষকে পুড়িয়ে ফেলেছে। মানুষকে হত্যা করেছে, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এই জ্বালাও পোড়াও, মানুষ খুন করাই হলো বিএনপির একমাত্র গুণ। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর নারায়ণগঞ্জে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটাই তাঁর শেষ নির্বাচনী সভা।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি কই, বিএনপি নাই, লাল কার্ড খেয়ে বিএনপি পালিয়ে গেছে। খেলা হবে, আগামী ৭ জানুয়ারী ফাইনাল খেলা হবে। খেলা হবে লুটপাটের বিরুদ্ধে, দূর্নীতির বিরুদ্ধে। বিএনপির আন্দোলন ভূয়া, অবরোধ ভূয়া, হরতাল ভূয়া, মানুষে মানে না ভূয়া। একদফা ভূয়া।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে নারায়ণগঞ্জে মেট্রোরেল দাবি শামীম ওসমানবলেন, নেত্রীর কাছে চাওয়ার কিছু নেই। আপনি সব দিয়েছেন। আমার নারায়ণগঞ্জের মানুষ মেট্রোরেলে উঠতে চায়। সন্তান কখনও মায়ের কাছে চায় না। মা সন্তানের আবদার এমনিতেই পূরণ করে দেয়।
শামীম ওসমান বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর কন্যা, শেখ হাসিনা ৮১ সালে বাংলাদেশে এসে আমাদের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারকে হত্যা করার পরও খুনিরা থেমে যায়নি, খুনিরা আমাদের নেত্রীকে ২১ বার হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। খুনি জিয়ার দল বিএনপির সন্ত্রাসীরা খুনি তারেক রহমানের নির্দেশে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। ওরা বাসে আগুন দিচ্ছে, ট্রেনে আগুন দিচ্ছে, হাসপাতালে আগুন দিচ্ছে।
একটা সাইকো লন্ডনে বসে আছে। আমাদের দাবি থাকবে এই সরকার যদি আবার ক্ষমতায় আসে, ওই খুনিকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কাজ করা। বিএনপিকে একটা সময় রাজনৈতিক দল ভাবতাম, এখন আর ভাবি না। কারণ, ৫০০ মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, ট্রেনে একটা মা আর তার সন্তানকে একসাথে পুড়িয়ে মারা, একটা মৃত পুলিশকে চাপাতি দিয়ে কোপানো – এটা আর যাই হোক রাজনীতি হতে পারে না। দেড় হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে কয়েক দিনে! আমাদের কর্মকান্ড যদি ওনাদের পছন্দ না হয়, নিজের একটা গাড়ি রাস্তায় এনে পুড়িয়ে দেখাক! তাহলে বুঝবো ওনাদের দেশপ্রেম কতটুকু!
সমাবেশের সভাপতিত্ব করে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আঃ হাই। এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-১আসনের সাংসদ বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ এমকেএম সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এড.খোকন সাহাসহ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয়, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।