নিউজ ডেস্ক : জেলার আলোচিত সাংসদ শামীম ওসমানের মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার পরেও থেমে নেই মাদক ব্যবসা। ফতুল্লা ও কুতুবপুরসহ আশ-পাশ এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্যাডার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স ও নামধারী সাংবাদিকদের ছত্রছায়ায় চলছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের ব্যবসা। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিক ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স ও নামধারী সাংবাদিকদের কারনে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফতুল্লা ও কুতুবপুরে প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক ক্যাডার ও সোর্স মাদকের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ্য ভাবে জড়িত রয়েছে। এসব এলাকায় কেউ পর্দার আড়াল থেকে আবার কেউ প্রকাশ্যে একাধিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দাপা ইদ্রাকপুরের খোজঁপাড়া, সরদারদার পাড়া ও রিফিউজিপাড়া এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে একাধিক হত্যা মামলার আসামী যুবদল ক্যাডার মুসলিম, লাদেন হারুন, মহসিন, রকি, বশির ওরফে বরিশাইল্ল্যা বশির, সরদারপাড়া এলাকার ইলিয়াস, রুবেল, টিকি মারা লিটন, সবুজ, ছাত্রলীগ ক্যাডার রাসেল ও পুলিশের কথিত সোর্স ইয়াসিনের বিরুদ্ধে। মূলত এদের নেতৃত্বে খোঁজপাড়া ও সরদারপাড়া এলাকায় জমজমাট মাদক ব্যবসা চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এরা দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এলাকায় মাদকের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া শহজাহান রোলিং মিল খাঁ বাড়ী এলাকায় মাদক স¤্রাট ফাহিম তার স্ত্রী লাকি ও ছেলে রবিনের নেতৃত্বে মাদক ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া ছাত্রদল ক্যাডার মনার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা চলছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া একই এলাকায় অভিনব কৌশলে মাদক ব্যবসা চলছে শাহজাহান ওরফে মাইচ্ছ্যা শাহজাহান, তার পুত্র সাজুল, মেয়ে স্মৃতি এবং তার স্ত্রী। দাপা ইদ্রাকপুরের ব্যাংক কলোনী, রেল লাইন বটতলা, কলাবাগান, জোড়পুল এলাকায় জমজমাট মাদক ব্যবসা চলছে ডাকাত লিপু, তার স্ত্রী পারভীন, ডাকাত শাহীনের মাধ্যমে। ফতুল্লা রেলষ্টেশন এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে পুলিশের কথিত সোর্স ডাকাত রনি, পান্না, গরু নাছির, ডাকাত তুজো, কাইল্যা সুমন, ডাকাত কবির হোসেন ফেলা ও তার স্ত্রী। এলাকার বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, ফতুল্লা পাইলট স্কুল এলাকার পূর্ব পার্শ্বের গেট সংলগ্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে মাদক স¤্রাট দিপু ও দেলু ওরফে ভাগিনা দেলুর মাধ্যমে। দিপু থানা পুলিশের কথিত সোর্স শিপুর ভাই। স্থানীয়দের অভিযোগ সোর্স শিপুর ছত্রছায়া থেকেই দিপু ও ভাগ্নে দেলু দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে।
স্থানীয়রা জানায়, ভাগিনা দেলু যুবলীগ ক্যাডার মোক্তার ওরফে কাইল্লা মোক্তারের ভাগ্নে এবং মোক্তারের শেল্টারে থেকেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলের সামনের দিকে জমজমাট মাদক ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে কামাল ওরফে বোম কামাল, লিটন চৌধুরী, ওরফে হিরোইনচি লিটন, ফারুক চৌধুরী ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী ডালিয়ার মাধ্যমে। সুত্রে জানা গেছে এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কায়দায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে যদিও লিটন, ফারুককে পুলিশ মাদক সহ গ্রেপ্তার করে জেল বন্দী করে। তখন ফারুকের দ্বিতীয় স্ত্রী ডালিয়া ও হিরোইনচি লিটনের ছেলে রিফাতের মাধ্যমে মাদক স্পর্ট অক্ষত থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সম্প্রতি হিরোইনচি লিটন ও ফারুক জামিনে বের হয়ে এলাকায় ফিরেই তাদের জমজমাট মাদক ব্যবসা পূনরায় চালু করেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তক্কার মাঠ এলাকায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জুয়েলের ভাই আয়নাল দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সম্প্রতি গাজার গাছসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল আয়নাল।
অপরদিকে, ‘অপরাদ জোন’ হিসেবে খ্যাত কুতুবপুরে চলছে জমজমাট মাদক ব্যবসা। পাগলা বৌবাজার, রসুলপুর, আকন পট্টি এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগক্যাডার মীরু ও ভাগ্নে শাকিলের বিরুদ্ধে। এছাড়া রহমান, সজল,শাহনাজও এলাকার মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। সম্প্রতি রসুলপুরে মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় ডাকা বিল্লাল মিশরী ও ইমরান বাহিনী। এই এলাকা জাকির হোসেন এসপির একটি বাহিনীও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। নয়ামাটি ও নন্দলালপুরের মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাকের ভাই ইলিয়াসের বিরুদ্ধে। একই এলাকার মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ ক্যাডার চশমা রিপনের বিরুদ্ধে। গত ক’দিন আগে চশমা রিপন ডিবি পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামালউদ্দিন টাইমস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী যে দলেরই হোক আর যতোই শক্তিশালী হোক তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। মাদক নির্মূলে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সকল মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
এদিকে শনিবার একটি অনুষ্ঠানে মাদক ব্যবসায়ীদের হুশিয়ার করে দিয়ে পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, নতুন প্রজ¥ককে রক্ষা করতে এবং মাদককে উৎখাত করতে মাদক ব্যবসায়ীদের সাবধান করছি। না হলে কিলার মোক্তার, বন্দুক শাহীনের থেকেও খারাপ পরিণতি হতে পারে। আমরা চাই না আর কোন মায়ের বুক খালি হোক। সূত্র-টাইমস নারায়ণগঞ্জ