১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 165

ফুটপাত দিয়ে আমার নারায়ণগঞ্জবাসী চলাফেরা করবে-আইভী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জ তার কথাতেই চলবে-এটা সাফ জানিয়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র আমি। আমার সিটির লিডার আমি, আমার কথায় নারায়ণগঞ্জ চলবে। কারণ আমার নগরের দায়িত্ব আমার এবং নারায়ণগঞ্জবাসীর, অন্য কারও নয়।’

পাঁচ দিনের চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল ছেড়ে নারায়ণগঞ্জে ফিরে গেছেন আইভী। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তিনি কথা বলেন সংবাদ সম্মেলনে।

গত ১৮ জানুয়ারি বিকালে নগরভভনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আইভী। স্থানীয় চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠিয়ে দেন ঢাকায়। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ)।

পরদিন আইভীকে দেখতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, নারায়ণগঞ্জের মেয়রের স্ট্রোক করেছিল। দুই দিন পর্যবেক্ষণ শেষে গত ২০ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় বলে জানান তার চিকিৎসক বরেণ চক্রবর্তী। আজ দুপুরে আইভী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।

পাঁচদিন হাসপাতলে থাকার পরও আইভীর কথায় আগের মতোই সেই তেজস্বী ভাব দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনা নিয়ে শামীম ওসমানের সঙ্গে তার পুরনো বিরোধ চাঙ্গা হয়েছে, সেই হকার উচ্ছেদ নিয়ে আবার কঠোর অবস্থানের কথাই জানান তিনি।

মেয়র আইভী বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে আমার নারায়ণগঞ্জবাসী চলাফেরা করবে। এটা হকারদের ব্যবসার জায়গা নয়। ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটবে, আর হকাররা ব্যবসা করবে নির্দিষ্ট জায়গায়। যেখানে মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না।’

হকারের বিষয়টিতে আইভী যে শামীম ওসমানকে এক বিন্দু ছাড় দেবেন না, সেটি তিনি স্পষ্ট করেই ইঙ্গিত দেন হাসপাতাল ছাড়ার আছে। তিনি বলেন, ‘আমি যে যুদ্ধে নেমেছি সেটা নীতি বা আদর্শের যুদ্ধ, ক্ষমতার যুদ্ধ নয়।’

এরই মধ্যে শামীম ও আইভীকে ঢাকায় ডেকে পাঠানোর খবর প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে আইভী অসুস্থ হওয়ার পর এই বিষয়টি আর গতি পায়নি। নারায়ণগঞ্জের মেয়র বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুদ্র কর্মী। আমি অনেকবার পরীক্ষা দিয়েছি। আমার আর পরীক্ষা দেয়ার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। আমি সারা জীবন শেখ হাসিনার ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে কাজ করে যেতে চাই।’

নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে আইভী বলেন, ‘আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। আমি আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নারায়ণগঞ্জবাসী বিশেষ করে পুরো দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যারা আমার বিপদের দিনে আমার খোঁজখবর নিয়েছে।’

আইভী বলেন, ‘যে সাহসী আইভীকে তারা চেয়েছিল, সাহসী নারায়ণগঞ্জবাসী আবার জেগেছে। অস্ত্রের ঝনঝনানির কাছে শান্তির যে জয়, নৈতিকতার যে জয়- তাকে কেউ হারাতে পারে না। এটা নারায়ণগঞ্জবাসী দেখিয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জ শহরকে শান্তিময় হতেই হবে- এমন মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমার কোনো অভিযোগ নেই। রাজনীতিতে এরকম হবেই।’

গত ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফুটপাত থেকে হকারদেরকে উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন এবং পুলিশ। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমান চাইছেন হকাররা আবার বসুক সেখানে। এ নিয়ে দুই পক্ষের কথার লড়াই গত ১৬ জানুয়ারি রূপ নেয় সংঘর্ষে। আহত হন আইভীসহ ৫০ জনেরও বেশি। আর এ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইভী ও শামীমের সঙ্গে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, দুই জনকেই বলেছেন সংযত হয়ে কথা বলতে।

সংঘর্ষের পর দিন নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সড়ক ছাড়া অন্য সড়কে বিকাল পাঁচটার পর হকার বসার অনুমতি দেয় সিটি করপোরেশন। আর পরদিন আইভীর অসুস্থতার খবর পেয়ে হকাররা বঙ্গবন্ধু সড়কেও ফিরে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে সেখানে বসতে দেয়নি।

স্বরসতী পূজা উপলক্ষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা

আজ ২২ জানুয়ারী’১৮ বিকাল ৩টায় স্বরসতী পূজা উপলক্ষে আমলাপাড়া সার্বজনীন স্বরসতী পূজা কমিটির পক্ষ থেকে একটি চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । এই প্রতিযোগিতায় ৫০ জনের মতো প্রতিযোগী অংশগ্রহন করে অনুষ্ঠানটি সাফল্যমন্ডীত করে তোলে । আগামী ২৩ জানুয়ারী রাত ৮ টায় ১ম,২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীদেরকে ক্ষুদ্র পরিসরে সংবর্ধনা দেয়া হবে।

সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাচ্ছে!

হুমায়ুন আজাদ ১৯৮৫ সালে আত্মবিশ্বাসের সাথে লিখেছিলেন, আমি জানি সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। এখন ২০১৮। হুমায়ুন আজাদের কবিতাটির বয়স এখন ৩৩। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আবার এই ৩৩ নিয়েই লিখেছিলেন, ‘তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি।’ সুনীলের কথা কেউ না রাখলেও ৩৩ বছর পর দেখা যাচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কথা রেখেছেন। তার ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হচ্ছে। সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাচ্ছে।

পাঠক ভাবতে পারেন হঠাৎ করে কী এমন হলো যে এমন নেতিবাচক কথা বলতে হলো? গত দুই তিনদিনে যারা পত্রিকায় চোখ রেখেছেন, ফেসবুকে স্ক্রল করেছেন তারা নিশ্চয় তিনটা খবর কয়েকবার পড়েছেন। দুইটা ভিডিও কয়েকবার দেখেছেন। না দেখলে বা না পড়লে সময় করে পড়ে নিন। বাংলাদেশে থাকবেন আর এইসব খবর পড়বেন না, ভিডিও দেখবেন না, তাহলে তো পিছিয়ে যাবেন।

প্রথমেই দেখতে হবে শমরিতা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনের একটি ভিডিও। আন্দোলনরত মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে যাবার হুমকি দিয়ে শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এম মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে সরকার। যারা ইতরামি করবে, খুলি উড়িয়ে দেব।’

বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়কার ভিলেন ডিপজলের মুখ থেকে এ ধরণের ডায়ালগ শোনা যেত। ডিপজল এখন আর ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেন না। ফলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে ভিলেন সংকট। ডিপজলের জায়গা দখল করতেই মকবুল হোসেন এই পন্থা বেছে নিলেন নাকি এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকেই।

গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তিনি আরও কিছু শব্দ বলেন। যা ভদ্রলোকের লেখা ও পড়া উচিত না। প্রকাশ্য রাস্তায় শিক্ষার্থীদের গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেওয়ার বুলি উচ্চারণের মধ্য দিয়ে মকবুল হোসেন কথা রাখলেন। সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে, কথাটা এভাবে ‘কথা রাখবে’ কেউ কি ভেবেছিলেন?

জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারী দাশ লিখেছিলেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ আমাদের দেশে যে কথা বলার চেয়ে কাজ করার ছেলে বেশি হয়ে যাচ্ছে তার আরেকটি প্রমাণ কক্সবাজারের রামুর সাংসদ সাইমুম সারওয়ার।

তিনি খুলি উড়িয়ে দেওয়ার কথা না বলে কাজ করে দেখিয়েছেন। গত রোববার তুই-তুকারি করে শিক্ষকের ছেলেকে গায়েব করে দেওয়ার হুমকির সাথে গলা ধাক্কা দিয়েছেন শিক্ষকের। কুসুমকুমারী দাশের কথা এভাবে প্রয়োগ হবে সেটা হয়তো কবি নিজেও ভাবেননি। এর আগে আমরা দেখেছিলাম নারায়ণগঞ্জের সাংসদ নাসিম ওসমান এক শিক্ষককে লাঞ্ছনা করেন। যদিও সেই শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছিল সারাদেশ। এবার কেউ টু শব্দটি করছে না।

যেমন টু শব্দ করছে না নাসিম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জের আরেক সাংসদ শামীম ওসমানের কীর্তিতেও। মঙ্গলবার তার লোকজন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াত আইভির উপর হামলা করে। অস্ত্র উঁচিয়ে মারতে আসে। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে মেয়র আইভিসহ শতাধিক নেতাকর্মী ও সাংবাদিককে আহত হন।

গত মেয়র নির্বাচনে আমরা দেখেছিলাম শামীম ওসমান আইভিকে বোন ডাকছেন। একসাথে আইসক্রিম খেলেন। বোনকে শাড়ি উপহার দিলেন। বোন আবার সেই শাড়ি পরে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলেন। নির্বাচনের আগেই ভাই বললেন, আইভির বিজয় কনফার্ম। হলোও তাই। তখন সবাই ভেবেছিল অপরাধের জনপদে শান্তি ফিরে আসবে। সব বিরোধের অবসান হবে।

কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনায় চরম আশাবাদীও হতাশ হতে বাধ্য। এভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দীর্ঘদিন পর দেখল এদেশের জনগণ। এতে করে প্রমাণ হলো শামীম ওসমানরা এখনো শামীম ওসমানই রয়েছেন।

তিনদিনের ব্যবধানে সরকারের তিন সাংসদ মকবুল, সাইমুম, ওসমান নিজ নিজ কর্ম দিয়ে তাদের কীর্তির চেয়েও তারা কতটা ‘মহান’ সেই প্রমাণই যেন দিলেন। এসব ক্ষেত্রে তারাই কেবল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। এভাবে চলতে থাকলে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দটাকেই মানুষ এড়িয়ে চলতে শুরু করবে।( উৎসঃ চ্যানেল আই)

চেক জালিয়াতির অভিযোগে ব্যবসায়ী জোনায়েদ কবির গ্রেফতার

নিউজ প্রতিদিন ডটনেট : নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার আলিরটেক ইউনিয়ন এর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ জুনায়েদ কবিরকে চাঁদার দাবিতে অসংখ্যবার হুমকি দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী বাহিনী। চাঁদার দাবিতে কখনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ,কখনো বাড়িতে হামলা ,আবার কখনো ফোনে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসী বাহিনী।

গত ১৫ ই ডিসেম্বর অয়ন ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী মাহদী গার্মেন্টসের পরিচালক জোনায়েদ কবিরের নিকট ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং চাঁদা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে বলে তার বড় ভাই মাসুম রানা জানান।

তিনি আরো বলেন, ২০ লক্ষ টাকা চাঁদার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেপড়ে লেগেছে এবং একের পর এক হুমকি ও ব্যবসা ভাংচুর করে যাচ্ছে।

গত ২৮ই ডিসেম্বর ২০ লক্ষ টাকা চাঁদার জন্য মাহাদী গার্মেন্টসে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে সবকিছু তছনছ করে ফেলে এবং নগদ টাকা ও প্রতিষ্ঠানের চেক বই নিয়ে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। অয়ন ওসমান তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকে ২০ লক্ষ টাকার চেক জমা করে এবং চেক পাস না হওয়ার তার ছোট ভাইয়ের নামে থানায় মিথ্যা মামলা করে, যার ফলে কোন আইনি নোটিশ ছাড়াই গত ১৭ই জানুয়ারি পুলিশ তার ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে যায় বলে তার বড় ভাই মাসুম রানা জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীতা নিয়েই দুই পরিবারের দ্বন্ধ

ডেস্ক নিউজঃ দুই পরিবারের লড়াইয়ের শুরু প্রায় পাঁচ দশক আগে। দুটি পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরীক্ষিত পক্ষ। খান সাহেব ওসমান আলীর পরিবার আর আলী আহমেদ চুনকার পরিবার প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী হওয়াকে ঘিরে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। সে সময় আলী আহমেদ চুনকা আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র লড়ে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন খোকা মহিউদ্দিনকে। খোকা আওয়ামী লীগ ও ওসমান আলীর পুত্র শামসুজ্জোহা পরিবারের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।

এই দ্বন্দ্বের জেরটা আরো জোরালো হয় ১৯৮০ সালে। এবার বিরোধের বিষয় জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। প্রতিযোগী সেই শামসুজ্জোহা ও চুনকা। এবার সরাসরি শামসুজ্জোহাকে হারিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন চুনকা। মাঝে কয়েক বছর বিরতি দিয়ে দুই পরিবারের বিরোধ সামনে আসে নারায়ণগঞ্জ নগর পিতার আসনটি নিয়ে।

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়েছিলেন চুনকা কন্যা আইভী। কিন্তু সেই সমর্থন পেয়েছিলেন শামসুজ্জোহা পুত্র শামীম ওসমান। ফল সেই আগের মতোই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে নগরভবনে যান আইভী। মাঝে মিইয়ে থাকা দুই পরিবারের বিরোধটা এবার তুঙ্গে ওঠে। নানা ঘটনা আর শামীম-আইভীর বাকযুদ্ধ উত্তপ্ত রাখে জেলা রাজনীতিকে। আইভী দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হওয়ার ক্ষেত্রে দৃশ্যত বাধা ছিল না ওসমান পরিবার।

কিন্তু জেলার লোকজন বলছেন, আদতে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে লড়েই দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হন আইভী। দীর্ঘ পাঁচ দশকে দুই পরিবারের রাজনৈতিক বিরোধ এতদিন বাকযুদ্ধ আর আলোচনার মধ্যেই ছিল। দলের নেতারা কাছে ডেকে বিরোধ মিটিয়ে দিয়েছেন দফায় দফায়।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তা রাজপথে গড়ায়। শামীম-আইভীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা উত্তাপ ছড়ায় রাজনীতির ময়দানে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিব্রত দলের নেতারা। বিরোধ মেটাতে বরাবরের মতোই নেতারা উদ্যোগ নিচ্ছেন এমন আলোচনা হচ্ছে।

যেখান থেকে দ্বন্দ্বের শুরু:

শুরুটা স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে। সে সময় পৌর চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য আলী আহাম্মদ চুনকা নিজের দল আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়েও পাননি, সমর্থন পান মহিউদ্দিন আহম্মেদ খোকা ওরফে খোকা মহিউদ্দিন। খোকার এই সমর্থন পাওয়ার পেছনে প্রত্যক্ষ শক্তি ছিলেন ওসমান পরিবারের একেএম শামসুজ্জোহা। চুনকা মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বারস্থ হওয়ার পরও সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন। এর পর থেকে চুনকা পরিবার ও ওসমান পরিবারের মধ্যে শীতল দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

১৯৮০ সালে জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলনে শামসুজ্জোহা ও চুনকা সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চুনকা জয়ী হন। ১৯৮৪ সালে আলী আহাম্মদ চুনকার মৃত্যুর পর ৮৬ সালে তার মেয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী বিদেশে পড়তে গেলে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠে একক কর্তৃত্বের দাবিদার হয়ে উঠে ওসমান পরিবার। তবে ওই সময়ে শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপিকা নাজমা রহমানের নেতৃত্বে সংগঠিত থাকে চুনকার নেতাকর্মীরা। ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করেন নাজমা রহমান। কিন্তু শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম ওসমান ও তার ভাই জাতীয় পার্টির মনোনীত নাসিম ওসমানের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে শামীম ওসমানের সঙ্গে দূরুত্ব তৈরি হয় নাজমা রহমানের। শহরের উত্তর-দক্ষিণের রাজনীতি নাজমা রহমানের মাধ্যমে জিইয়ে থাকে অনেক দিন। ১৯৯২ সালে চুনকা কন্যা আইভী দেশে ফিরে শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হন। অল্প সময়ে ব্যবধানে তিনি আবার বিদেশে ফিরে যান। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনের কয়েকদিন আগে দেশে ফিরে নির্বাচন করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এই দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায় ২০১১ সালের ৩০শে অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ৩৭ বছর আগের ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটে। সেইবার প্রতিদ্বন্দ্বী চুনকা কন্যা আইভী ও জোহা পুত্র শামীম ওসমান। তখনও আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন মেলেনি চুনকা পরিবারের, তবে জয় ছিনিয়ে নেন চুনকা কন্যা আইভী। শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেন আইভী। জনপ্রিয়তায় বড় ধরনের হোঁচট খান শামীম ওসমান। ওই নির্বাচন ঘিরে শামীম-আইভি একে অপরকে দোষারোপ ও বাক বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন প্রকাশ্যেই। এরপর থেকে আরো নানান ঘটনায় দুই পরিবারের দু’জনেই পরস্পরকে দোষাদোষী করতে দেখেছে দেশের মানুষ। এমনকি আলোচিত ত্বকী হত্যা ও সাত খুনের ঘটনায়ও দোষাদোষী চলে সমান তালে। একে অপরকে খুন, গুম, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

টেলিভিশনে সরাসরি সমপ্রচারিত টক-শোতেও শামীম ওসমান ও আইভীর মারমুখী বাক্য বিনিময় ও শক্তি প্রদর্শনের চ্যালেঞ্জ করতে দেখা গেছে। এমনকি সিটি করপোরেশনের ময়লা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করা হয়েছে। আইভীকে কোণঠাসা করতে শামীম ওসমানের লোকজন অশ্লীল লেখা ও আইভীর বিকৃতি ছবি দিয়ে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড বানিয়ে সারা শহর ছেয়ে দিয়েছেন। মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ করে বিষোদগার করেছেন। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকে বিগত ৫ বছর।

এবারের সিটি নির্বাচনেও প্রথম থেকেই ওসমান পরিবার চুনকা কন্যা আইভীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি তৃণমূল থেকে প্রার্থী হিসাবে যে তিন জনের নাম কেন্দ্রের কাছে মনোনয়নের জন্য পাঠানো হয়েছিল সেখানেও ছিল না আইভীর নাম। এর পেছনেও ওসমান পরিবার কলকাঠি নেড়েছিল বলে মনে করেন আইভীর ঘনিষ্ঠজনরা। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ আইভীকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়। কেন্দ্রের নেতারা আইভী-শামীমের বিরোধ নিরসনে ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মধ্যস্থতা করেন।

তারপর চলে নানা নাটকীয়তা। আইভীর সমর্থনে সংবাদ সম্মেলন করেন ও আইভিকে উপহার পাঠান শামীম ওসমান। এমনকি নৌকায় ভোট দিয়েছেন তা প্রমাণ করতে তিনি মিডিয়ার সামনে ব্যালট পেপার প্রদর্শন করেন নির্বাচনী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। নির্বাচনে বিজয়ী হন আইভী। প্রথম বাজেটের দিন ওসমান পরিবারের মেজ ছেলে সেলিম ওসমান ঘোষণা দিয়ে আইভীর পাশে বসেন। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেন উপস্থিত সবাই। সেখানে সেলিম ওসমান মেয়রকে নগরের উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মেয়রও তার কাছে সহযোগিতা চান। এবং যৌথ উদ্যোগে নিতাইগঞ্জ থেকে দীর্ঘদিনের অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ হয়।

কিছু দিন ভালোই চলছিল সব কিছু। কিন্তু নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ফুটপাথ হকার মুক্ত করতে বার বার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন মেয়র। কিন্তু সকালে উচ্ছেদ হলে বিকালেই অদৃশ্য ইশারায় হকাররা যে যার মত বসে পড়ে। মোট কথা ইঁদুর বিড়াল খেলা চলতে থাকে হকার উচ্ছেদ নিয়ে। এজন্য মেয়র প্রশাসনের অসহযোগিতাকে দায়ী করেন। একপর্যায়ে ২৫শে ডিসেম্বর থেকে প্রশাসন শহরের ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদ শুরু করে। ২৯শে ডিসেম্বর হকাররা ছুটে যান এমপি শামীম ওসমানের কাছে।

তিনি হকারদের উদ্দেশে বলেন, মেয়র আইভীর নির্দেশে হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান আমার জানা নাই। আপনারা তার কাছে যান। তিনি আপনাদের ব্যবস্থা করবেন। না করলে আমি দেখবো। এরপর ৩১শে ডিসেম্বর হকাররা স্মারকরিপি নিয়ে মেয়র আইভীর কাছে যান। মেয়র তাদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ৫ লাখ নগরবাসীর ভোগান্তি সৃষ্টি করে ফুটপাথে হকার বসতে দিতে পারি না। আমি হকার্স মার্কেট করে দিয়েছি সেখানে বসেন। প্রয়োজনে শুক্রবার, শনিবার শহরের ৪টি পয়েন্টে বসেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসতে দেয়া হবে না। ৩রা জানুয়ারি হকাররা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনিও মেয়রের ভাষায় কথা বলেন এবং বৈধ হকারদের তালিকা তার কাছে জমা দিতে বলেন।

পরে ১৩ই জানুয়ারি হকাররা যান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানের কাছে। তিনিও আইভীর প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে হকারদের বিকল্প ৪টি জায়গায় বসার পরামর্শ দেন। হকাররা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে ১৩ই জানুয়ারি রাতে সেলিম ওসমান হকারদের পক্ষে সুপারিশ করে মেয়রকে চিঠি দেন। ১৪ই জানুয়ারি বিকালে মেয়র চিঠির জবাব দেন। জবাবে মেয়র সেলিম ওসমানের কিছু প্রস্তাব নাকচ করে বাকিগুলোর সঙ্গে আরো যুক্ত করেন। সেলিম ওসমান মেয়রকে চিঠির জবাব দেয়ায় ধন্যবাদ দেন এবং প্রস্তাবিত জায়গায় হকার বসা নিয়ে তিনি বিদেশ থেকে এসে আলোচনা করবেন বলে জানান প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে।

এদিকে ১৪ই জানুয়ারি হকাররা নিয়মিত সমাবেশের একপর্যায়ে বলেন, এবার আমরা গরিবের বন্ধু এমপি শামীম ওসমানের কাছে যাবো। তিনি আমাদের গরিবের নেতা। তিনিই সব সমাধান করবেন। ১৫ই  জানুয়ারি বিকালে চাষাড়া পৌর মার্কেটের সামনে সমাবেশে করেন হকাররা।

সেখানে শামীম ওসমান উপস্থিত হয়ে বলেন,  আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে হকার বসবে। এটা আমার অনুরোধ নয়, নির্দেশ। আমি শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকবো, আপনাদের কেউ মারলে আপনারা মার খাবেন। কিভাবে পাল্টা মাইর দিতে হয় আমার জানা আছে।

শামীম ওসমানের এই বক্তব্যে অবাক হন সিটি মেয়র। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসবে না। হকারদের জন্য প্রয়োজনে আরো বিকল্প জায়গা করে সেখানে পুনর্বাসন করবেন। একথাগুলো ১৬ই জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে মিডিয়ার সামনে বলবেন। সেই মতে তিনি নগরভবন থেকে পায়ে হেঁটে রওনা হন।

এদিকে পূর্ব ঘোষণা মতে দুপুরের পর থেকে হকাররা ফুটপাথে বসার জন্য শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন। শামীম ওসমানের লোকজন শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়। যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। রাজপথে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয় সন্ত্রাসীরা। ওই সংঘর্ষে আইভী নিজেও আহত হন। ঘটনার আগে ও পরে শামীম-আইভী অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন একে অন্যের বিরুদ্ধে।

ওসমান পরিবার:

বিভিন্ন সময়ে চমকপ্রদ অনেক খবরের শিরোনাম হওয়া শামীম ওসমানের পূর্ববর্তী তিন পুরুষের রাজনৈতিক ইতিহাস অনেক বৈচিত্র্যময়। ওসমান পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিষ্ঠাতা খান সাহেব ওসমান আলী ১৯০০ সালে তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। ত্রিশের দশকে তিনি নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর নারায়ণগঞ্জেই স্থায়ী হন। খান সাহেব ওসমান আলীর রাজনৈতিক জীবনের শুরু ১৯৪৬ সালে তৎকালীন ঢাকার নবাব হাবিবুল্লাহর জামানত বাজেয়াপ্ত করে এমএলএ নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

১৯৩৫ সালে খান সাহেব ওসমান আলী নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া রেললাইন সংলগ্ন স্থানে গড়ে তোলেন ঐতিহাসিক বায়তুল আমান। বিভিন্ন সময়ে ওসমান পরিবার দাবি করে যে বঙ্গবন্ধুর পদচারণায় এই বায়তুল আমানে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। এরপর রাজনীতির মাঠে আসেন ওসমান পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম খান সাহেব ওসমান আলীর ছেলে একেএম শামছুজ্জোহা। ৭০-এর প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচনে তিনি পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালে খান সাহেব ওসমান আলী মৃত্যুবরণ করেন। এই পরিবারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১৯৭৩ সালে শামছুজ্জোহা জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ অবদান রাখায় ২০১২ সালে তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়। একেএম শামছুজ্জোহার তিন ছেলে- নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তিনিও তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তার মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত সেলিম ওসমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৯৬ সালের নির্বাচনে জ্জোহা পুত্র শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান সংসদেও তিনি এই আসনের এমপি।

চুনকা পরিবার:

১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আলী আহম্মদ চুনকা। স্বাধীনতার পর তিনি আওয়ামী লীগের পাশাপাশি শ্রমিক রাজনীতি করতেন। দিন দিন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন চুনকা। তিনি নারায়ণগঞ্জের প্রথম নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান। দুবার নারায়ণগঞ্জের পৌর চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।

১৯৮০ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বী ওসমান পরিবারের একেএম শামছুজ্জোহাকে হারিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আলী আহম্মদ চুনকার পাঁচ সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি পেশায় চিকিৎসক। ১৯৮৪ সালে চুনকার মৃত্যুর পর ১৯৮৬ সালে তিনি বৃত্তি নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওদেসা নগরের পিরাগভ মেডিকেল ইন্সটিটিউটে পড়তে যান।

পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আইভী রাজনীতির মাঠে যোগ দেন ১৯৯২ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার মধ্য দিয়ে। ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের পৌর মেয়রের পদে ছিলেন আইভী। এরপর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তিনিই দেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র।

সূত্র: মানবজমিন

মেয়র আইভীকে দেখতে হাসপাতালে ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে দেখতে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে যান। সেখানে কাদের আইভীর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেন।

পরে ওবায়দুল কাদের আইভীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইভী মাইনর স্ট্রোক করেছিল। তার ব্রেনে হ্যামারেজ হয়েছে। তবে এখন ভয়ের কিছু নেই। সে আউট অব ডেঞ্জার।’ তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আরো চার থেকে পাঁচ দিন তারা আইভীকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন।’

এ সময় নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের সঙ্গে আইভীর লোকদের সংঘর্ষের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি ওবায়দুল কাদের। এরআগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তিনতলায় চিকিৎসাধীন সাংবাদিক শরীফউদ্দিন সবুজ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমসহ আহতদের দেখতে গিয়ে মেয়র আইভী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর জরুরি ভিত্তিতে বিকেলে তাকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে আনা হয়।

পরে আইভীকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার সমস্যা চিহ্নিত করতে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন ল্যাবএইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান লেলিন।

প্রসঙ্গত, শহরে হকার উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন মেয়র আইভীর সমর্থকরা। এতে মেয়র আইভী, সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মেয়র আইভী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে আইভীকে হাসপাতালাতে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। আইভীর সমস্যা চিন্হিত করতে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। পরিবর্তন ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ল্যাবএইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান লেলিন।

তিনি জানান, মেয়র আইভী সিসিইউতে আছেন। এখানে অজারভেশনে থাকবেন। নরমাল ইনসিডেন্ট উনার ব্লাড পেসার কম ছিল। আমরা এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। সিটি স্কেন করা হবে, তারপর বলা যাবে সমস্যা কোন জায়গা থেকে আসছে। ব্রেইন নাকি হার্টের সমস্যা হয়েছে- তা বলা যাবে।

তিনি আরও জানান, ‘এর মধ্যে মেয়র আইভীর সমস্যা চিন্হিত করতে পাঁচজন ডাক্তারকে নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’

এর আগে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তিনতলায় চিকিৎসাধীন সাংবাদিক শরীফউদ্দিন সবুজ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমসহ আহতদের দেখতে এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ঢাকা আনা হয়।

যারা অস্ত্র দেখিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে-স্বরাষ্টমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জে সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্র হাতে যাদের ছবি এসেছে, তাদেরকে ছাড় না দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। মন্ত্রী বলেন, ‘অ্যাসিওরেন্স দিচ্ছি, যারা অস্ত্র দেখিয়েছে, যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রাজধানী লাগোয়া বন্দরনগরীতে হামলার দুই দিন পর বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের এই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জের ঘটনা নিয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।

নারায়ণগঞ্জে উচ্ছেদ করা হকারদেরকে আবার বসাতে শামীম ওসমানের হুমকির পর মেয়র আইভীর মিছিলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় মঙ্গলবার। এ সময় গণমাধ্যমে নিয়াজুল ইসলাম নামে একজনের পিস্তল হাতের ছবি আসে। তিনি শামীম ওসমানের অনুসারী এবং শামীম এটা নিজেও স্বীকার করেছেন।

তবে শামীম দাবি করেছেন, নিয়াজুলের অস্ত্রটি বৈধ এবং আইভীপন্থীদের হামলার পর এটি বের করেছিলেন তিনি। আর অস্ত্র বের করার পর সেটি ছিনিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।

সংঘর্ষের পর দিন শামীম ওসমানও কিছু ছবি দেখিয়ে দাবি করেন, গুলি করা হয়েছে আইভীর মিছিল থেকেও। আর এতে অংশ নেয় বিএনপির চিহ্নিত ক্যাডাররাও।

এই ঘটনার পর শামীম ও আইভীকে ঢাকায় তলব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ঘটনাটি দেখছেন। আর গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটিও।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য যা দরকার সেটা আমরা করছি। যারা অস্ত্র দেখিয়েছে, যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।’

‘আমরা খতিয়ে দেখছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে কারা করেছে তাদের ধরার জন্য প্রচেষ্টা নিচ্ছি এবং কী কারণে করল, তার পুরোপুরি একটা ইনকোয়ারি আমরা করছি।’

শামীম ওসমান এবং আইভীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের এই বিরোধ পছন্দ করছেন না। এগুলো না থামালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

না”গঞ্জে অস্ত্রধারীদের খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ

ডেস্ক নিউজঃ নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষের সময় ব্যবসায়ী নিয়াজুল নিয়াজুল ইসলাম খানকে পিস্তল হাতে দেখা যায়। এছাড়া আইভী সমর্থক আবু সুফিয়ান এবং বিএনপি কর্মী সুমনকে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় সংঘর্ষে এখনও কোনও পক্ষ থেকেই মামলা করা হয়নি। তবুও পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় যারা অস্ত্র ব্যবহার করেছিল তাদের খুঁজছেন তারা।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

ঘটনাস্থলে যারা অস্ত্র নিয়ে গিয়েছিলেন, সেইসব ব্যক্তির বিষয়ে পুলিশ এখন খোঁজখবর নিচ্ছে। তাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে বলে উল্লেখ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কেউ অভিযোগ করতে এলে তা নেওয়া হবে।

নিয়াজুল ইসলাম খান নামে যে ব্যক্তি একটি অস্ত্র বের করেছিলেন, তার বিষয়েও পুলিশ প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘তিনি একজন ব্যবসায়ী বলে জানতে পেরেছি। তার অন্য কোনও পরিচয় আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি সেখানে কেন গিয়েছিলেন তা জানার চেষ্টা চলছে। তবে এখন তিনি পলাতক। আমরা শুনেছি, তার একটি পিস্তল লাইসেন্স করা রয়েছে। তবে যে পিস্তলটি তার হাতে দেখা গেছে সেটি লাইসেন্স করা কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবারের (১৬ জানুয়ারি) সংঘর্ষের ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। তার ভাষ্য, ‘ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। আমরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছি। এছাড়া ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসক একটি কমিটি করে দিয়েছে বুধবার। তারাও ঘটনাটি তদন্ত করবে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবেন।’

এর আগে মেয়র আইভী দাবি করেছেন, হামলাকারী নিয়াজুল নগর যুবলীগের নেতা ও শামীম ওসমানের সমর্থক। তবে শামীম ওসমান দাবি করেছেন, ‘নিয়াজ বিশাল মার্কেটের মালিক, তিনি নিশ্চয়ই পিস্তল হাতে রাস্তায় নামবেন না।’

একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘নিয়াজুল আমার পরিচিত। তিনি বিশাল বড় মার্কেটের মালিক। সে সুইটের ভাই যাকে বিএনপির সময় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছিল। এটা কি তার দোষ? বিশাল কোনও মার্কেটের মালিক নিশ্চয়ই পিস্তল হাতে রাস্তায় নামবে না! তার হাতে পিস্তল দেখা গেলেও পরীক্ষা করা হোক এই পিস্তল থেকে গুলি করা হয়েছে কিনা।’

ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় মেয়র আইভী, সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হন। এদিন দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনায় পুরো এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, নগরীর সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রাখতে সড়কের ফুটপাথগুলো হকারমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন মেয়র আইভী। এই সিদ্ধান্তে হকাররা প্রতিবাদ জানালে তাদের সমর্থন জানান শামীম ওসমান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য রাখার ঘটনাও ঘটে। সবশেষ মেয়র আইভী নগরীর ফুটপাথ থেকে হকারদের উচ্ছেদের ঘোষণা দিলে তাদের আবারও ফুটপাথে বসানোর ঘোষণা দেন শামীম ওসমান।

এর প্রতিবাদে নগর ভবন থেকে পায়ে হেঁটে মেয়র আইভী তার নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিলসহ চাষাঢ়া এলাকায় আসেন। তারা মুক্তি জেনারেল হাসপাতালে সামনে এলে শামীম ওসমানের সমর্থক ও হকাররা তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় মেয়র আইভী ও তার লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে নিয়াজুল ইসলাম। নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে আইভীকে রক্ষা করেন। পরে লোকজন নিয়াজুলকে ধরে গণপিটুনিও দেয়।

পরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শামীম ওসমানের নির্দেশে তার ক্যাডাররা আমার ও নিরীহ নগরবাসীর ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমিসহ নারায়ণগঞ্জের যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন সম্পর্কে হকারদের সঙ্গে কথা বলতে নগর ভবন থেকে পায়ে হেঁটে চাষাঢ়া আসছিলাম। ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার জন্য নির্দেশ পালন ও হকারদের বসানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার বিষয়ে কথা বলাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। কিন্তু শামীম ওসমানের নির্দেশে তার সমর্থকরা কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। জেলার ডিসি ও এসপির নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’ সূত্র-বাংলা ট্রিবিউন

না’গঞ্জে হকার বসতে ডিসির অনুমতি-হকারদের প্রত্যাখ্যান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হকার ইস্যু নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনার একদিন পর নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে মেট্রো সিনেমা হল চত্বর পর্যন্ত হকারদের বসার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।  তবে সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে হকারদের সমাবেশ থেকে এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে হকার নেতারা। মেয়র আইভী ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সঙ্গে আলোচনার পর হকারদের বসার এ অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক মো. রাব্বী মিয়া।

বৈঠকে হকারদের জানানো হয়, মেয়র আইভী ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের অনুমতিক্রমে চাষাঢ়া থেকে মেট্রো সিনেমা হল চত্বর পর্যন্ত হকাররা বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসতে পারবে। তবে কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধু সড়কে কোনো হকার বসা যাবে না।

গত ২৫ ডিসেম্বর সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন যৌথ উদ্যোগে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদ করে। এরপর থেকেই ফুটপাতে বসার দাবি জানিয়ে লাগাতার আন্দোলন করে আসছিল হকাররা।

মঙ্গলবার হকার ও শামীমপন্থীরা ফুটপাত দখল করতে গেলে মেয়র আইভীপন্থী ও নগরবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে শামীমপন্থী নিয়াজুল ইসলাম পিস্তল বের করে গুলি করতে গেলে গণপিটুনির শিকার হয়। এ সংঘর্ষে মেয়র আইভী, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরিফুদ্দিন সবুজসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়।