বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িতে হামলা করেছে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের সমর্থকরা। শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে মির্জা ফখরুলের গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ সময় গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায় এবং চালক হেলাল আহত হন।
ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের সমর্থকরা।
নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকার মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা চেয়ারপারসন কার্যালয় লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ে। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িতেও তারা হামলা করে। তবে এতে ফখরুলের গাড়ি চালক হেলাল ছাড়া আর কেউ আহত হয়েছে কিনা জানা যায়নি।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, শনিবার রাত আড়াইটায় মির্জা ফখরুল গুলশানের চেয়ারপার্সনের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় তার গাড়ি অবরুদ্ধ করা হয়। দীর্ঘ ৩০ মিনিট চেষ্টা করেও তিনি কার্যালয় থেকে বের হতে পারেননি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় রাত ৩টার দিকে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকর্মী চেয়ারপার্সনস সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) একটি মানববেষ্টনী তৈরি করে তাকে ঘিরে গুলশান-২ নম্বর চত্বরের দিকে নিয়ে যান।
সে সময় মির্জা ফখরুলের ব্যক্তিগত গাড়িটি কার্যালয় থেকে খালি বেরিয়ে মূল সড়ক থেকে ফখরুলকে তুলে নিয়ে যায়।
এর আগে সন্ধ্যা থেকে দেশের বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা আন্দোলন করে।
মধ্যরাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গেইট ভেঙে তারা কার্যালয়ের ভেতর প্রবেশের চেষ্টা করে। গেটের অপর পাশ থেকে সিএসএফের কর্মকর্তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
জানা গেছে, মনোনয়নবঞ্চিত এহছানুল হক মিলনের অনুসারীরা ফখরুলের পথ আটকে তাঁকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখেন।
তাদের সঙ্গে যোগ দেন গোপালগঞ্জ-১ আসনের সেলিমুজ্জামান সেলিম ও মানিকগঞ্জে প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে অ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলুর কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
তারা গুলশান কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার জানালার কাচ ভেঙে যায়।
বাইরে যখন বিক্ষোভ চলছিল, সেসময় ভেতরেই ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খানসহ সিনিয়র কয়েক নেতা।
পরিস্থিতি শান্ত করতে দেলোয়ারের দুই ছেলে ও মেয়েকে কার্যালয়ের ভেতরে ডেকে নেয়া হয়। এ সময় নজরুল ইসলাম খান তাদের সঙ্গে কথা বলেন। দেলোয়ারের সন্তানরা নজরুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চান, এ দলে কি তার বাবার কোনো অবদান নেই।
মনোনয়ন তো দূরের কথা, তাদের কেন কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হল না। এ সময় নজরুল ইসলাম খান তাদের শান্ত হতে বলেন। বাইরে বিক্ষুব্ধ কর্মীদের চলে যেতে বলেন। কার্যালয়ের নিচ তলায় তাদের অপেক্ষা করতে বলেন নজরুল।
এরপর তৈমুর আলম খন্দকারকে ভেতরে ডাকেন নজরুল ইসলাম খান। তার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তৈমুর ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, আমি কার্যালয়ের বাইরে আছি। মহাসচিবসহ আপনারা কীভাবে বাইরে বের হন, তা আমি দেখে নেব। এ বলে তিনি নিচে চলে আসেন।
দুপুরে চাঁদপুর-১ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলনের অনুসারীরা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে তারা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। মূল গেটে প্রতিবাদ মিছিল লেখা একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। এ সময় মিলনের স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবী ছাড়াও বিক্ষোভে অংশ নেন চাঁদপুরের কচুয়া থানা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বেবী সাংবাদিকদের বলেন, বিগত সময়ে যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।
এরপর প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য ১২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে বিএনপির নেতা আ ন ম এহছানুল হক মিলনের অনুসারী নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন কার্যালয়ের ফটকের তালা খুলে দেন। এরপর তারা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে দেখা করে তারা তাদের ক্ষোভের কথা জানান।
বিক্ষোভরত মিলনের একাধিক সমর্থক অভিযোগ করেন, এহছানুল হক মিলনের জায়গায় চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেনকে এলাকায় কেউ চেনেন না।
সারা জীবন তিনি মালয়েশিয়ায় ছিলেন। এহছানুল হক মিলন পাঁচ বছর দেশের বাইরে থাকলেও তার সঙ্গে এলাকার মানুষের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এখনও তিনি জেলে আছেন, তার ত্যাগকে মূল্যায়ন করা হয়নি।
মনোনয়নবঞ্চিতদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, তাদের পক্ষেই নেতাকর্মীরা ‘একট্টা’।
মনোনয়ন নিয়ে ছোটখাটো দুই-একটি প্রতিক্রিয়া- এটা কি নতুন কিছু? এটা নতুন নয়। বরং যাদের দেয়া হয়েছে, তারা অত্যন্ত জনপ্রিয় তাদের এলাকায়। আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে এলাকায় তাদের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত নিবিড়। যোগ্যদেরই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।