নিউজ প্রতিদিন ডটনেট : সম্প্রতি সময়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশে ইসলামবিদ্ধেষী হিসেবে পরিচিত শাহরিয়ার কবির নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক আওয়ামী সাংসদ ও বর্তমান বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি।
শাহরিয়ার কবিরকে নিয়ে তার বক্তব্য বিষয়ে খোলাসা করে আজ দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি শাহরিয়ার কবিরের পক্ষ নিয়ে বলেন – ‘আমি মনে করি, কুরআন হাদিস ও ইসলামের কোনো জায়গাতেই কোনো আলেম ওলামারা একথাটি খুঁজে পাবেন না যেখানে একজন মানুষকে মুরগির সাথে তুলনা করা হবে বা একজন মানুষকে বলা হবে যে মানুষটি মুরগি চুরি করতো। যদি সে ধরনের (মুরগি চুরির) প্রমাণ থাকেও যে সে মুরগি চুরি করতো তাহলেও এটিকে গোপন রাখার বিধান আল্লাহতালা করে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন – লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে যেভাবে শাহরিয়ার কবিরকে বেইজ্জতি করা হয় সেই বেইজ্জতির ব্যাপারে যদি আমি আমার অবস্থান থেকে কথা না বলি, প্রতিবাদ না করি তাহলে আমি সেই সাধারণ মানুষদের কবলে পড়ে যাব এবং অনাগত দিনে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। তখন আমিও তাদের কাতারে পড়ে যাব। তো সেই দিক থেকে আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে আমি সেটাই ন্যায্য ভাবে বলেছি বাকি আমার কোনো ভুল-ভ্রান্তি হলে তার ফায়সালা আল্লাহর হাতে।
শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় মুরগী চুরি করে পাকিস্তানী আর্মিদের কাছে সাপ্লাই দিতেন মর্মে দেওয়া অনেকের বক্তব্য ভুলভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ করে আলেম ওলামারা মাহফিলে এসব কথা বলেন দাবি করে ইউটিউবে নিজ চ্যানেলে এক ভিডিও বক্তব্যে গোলাম মাওলানা রণি আজ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন – শাহরিয়ার কবিরকে নিয়ে যারা আমার বক্তব্য দ্বারা আহত হয়েছেন তারা জানেন যে শাহরিয়ার করির মূলত একজন নাস্তিক। তারা জানেন যে শাহরিয়ার করিরের ছদ্মনাম হলো ‘মুরগী কবির’। তারা জানেন যে, ১৯৭১ সালে শাহরিয়ার কবির বিভিন্ন বাড়ি থেকে মুরগি চুরি করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে সাপ্লাই করতেন এবং এর দ্বারা তার সংসার চলত। অথচ এগুলো তার ব্যাপারে সঠিক তথ্য নয়।
এসব বক্তব্য ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন ইসলামিক বক্তারা ভূমিকা রাখছেন ও জনগণ তাদের বক্তব্যে বিভ্রান্ত হয়ে রনির বক্তব্যে আহত হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন – বিভিন্ন ওয়াজ এর বক্তব্যে বড় বড় দাড়ি রাখা ও টুপি পড়া বক্তারা যখন ঠিক এই কথাগুলি বলতেন যে জনাব শাহরিয়ার কবির একজন নাস্তিক, তিনি মুরগি চুরি করেছেন ৭১ সালে, তাকে সেজন্য মুরগী কবির বলা হয়। এই কারণে যারা সাধারন ও সরল প্রাণের মানুষ রয়েছেন, আল্লাহকে ভালবাসেন এবং রাসূলকে ভালোবাসেন, জান্নাতে যেতে চান, হাদীসকে ভালোবাসেন ও ওয়াজ শুনেন এবং ওয়াজের ময়দানে যারা বক্তব্য দেন তাদের সম্পর্কে তাদের একটা বিরাট ধারণা রয়েছে সংগত কারণেই তারা আমার বক্তব্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন – ডঃ সলিমুল্লাহ খান কিংবা ফরহাদ মজহার এদের সমপর্যায়ের লোক কিন্তু শাহরিয়ার কবির। এখন বক্তব্য হলো শাহরিয়ার কবির ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেন, ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, কিন্তু বাংলাদেশের কোন আলেম ওলামা বুকে হাত দিয়ে একবারও বলতে পারবেন যে শাহরিয়ার কবিরের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তার কাছে গিয়ে কোরআনের কোনো বিষয় কথা বলা হয়েছে। তার সাথে পারিবারিক পরিবেশে মতবিনিময় করা হয়েছে।
রনি বলেন – আমি জানিনা কেয়ামতের দিন আল্লাহ রব্বুল আলামিন যখন বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের কে প্রশ্ন করবেন তখন কয়জন আলেম-ওলামা এব্যাপারে জবাব দিতে পারবেন।
উদাহরণ দিয়ে রনি বলেন – লক্ষ করুন, পাকিস্তানের মাওলানা তারিক জামিল তিনি এই বয়সে, এ অবস্থায় থেকেও কিন্তু দ্বীনের কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ভারতের বড় বড় সেলিব্রিটি মুসলমান-হিন্দু বলেন তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছেন। তার দাওয়াতে ভারত-পাকিস্তানের অনেকেই যারা সারাজীবন ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলেন হজে গিয়েছেন। ইসলামের ব্যাপারে নমনীয় হয়েছেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে যারা আলেম ওলামা রয়েছেন তারা কি ভাবেন একবারও যে – এই দেশে শীর্ষ পর্যায়ের যেসব বুদ্ধিজীবী রয়েছেন, কবি-সাহিত্যিক রয়েছেন, তাদেরকে শুধুই গালাগাল করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে ইসলামের অমীয় বাণী, ইসলাম যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম এটি কয়জনে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তা না করে এ সমস্ত মানুষদেরকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, যে ভাবে লাঞ্চিত করা হচ্ছে, ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা ইসলামে দাখিল হতে পারছে না। তারা সে সুযোগ পাচ্ছে না।
গোলাম মাওলা রনি বলেন – এসব ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে শাহরিয়ার কবিরের মতো যেসব লোকজন রয়েছেন তাদের সম্পর্কে বিষোদগার না করে। তাদেরকে তাদের জায়গায় যদি সম্মান করি এটি একটি বিরাট ব্যাপার হবে। এবং এই জিনিসটা আমি শিখিয়েছি নেলসন ম্যান্ডেলার কাছ থেকে।
গোলাম মাওলা রনি আরও বলেন – আমি শাহরিয়ার কবিরের প্রশংসা করেছি কারণ তিনি দেশের একজন শীর্ষ সাংবাদিক এবং তদন্তমুখী সাংবাদিক। এসব ক্ষেত্রে তার অবদান সংবাদপত্র জগতের সাথে যারা জড়িত তারা বুঝতে পারেন। তাছাড়া তিনি একজন বয়স্ক মানুষ। সে যেভাবেই হোক না কেন তার যারা অনুজ রয়েছেন তাদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট সম্মান তার প্রাপ্য সেটা যে কোন ধর্মই হোক না কেন। এছাড়াও তিনি যতোটুকু ইসলামকে আক্রমণ করেন ততটুকুই তাকে আক্রমণ করা ইসলামে বৈধতা রয়েছে এর বাহিরে থাকে যে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়, তাকে গালিগালাজ করা, তার চরিত্র হরণ করা, তার ব্যাপারে আজেবাজে কথা বলা, এটা কোন ধর্ম মতে সমর্থন করে না।
গোলাম মাওলা রনি বলেন – আমি মনে করি শাহরিয়ার কবিরের মত অন্যান্য যারা রয়েছেন তাদের জন্য ইসলামে একটি জায়গা করে দিতে হবে। একটি স্পেস করে দিতে হবে এবং তারা যাতে ইসলামে আসতে পারে এবং আলেম-উলামার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ না করেন সে ব্যাপারেও কিন্তু আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।