বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে প্রথমবারের মতো বিরল এক দৃশ্য ধরা দিলো। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের সাথে সম্পর্কে টানাপোড়ন চলছে এমন কথা চাউর হয়েছিলো। তবে নতুন বছরে সেসব জল্পনা কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ সুপারের বাসভবনে বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠানে হাজির শামীম ওসমান। তাকে দেখে উপস্থিত অন্য অতিথিরাও বেজায় খুশি।
অবশেষে এসপি হারুনের অতীতে করা দাবিই সত্যি প্রমাণিত হলো। এসপি হারুন দাবি করে আসছিলেন, তার সাথে জেলার সকল এমপির সাথে সম্পর্ক ভালো।
শামীম ওসমান এসপি হারুনের বাসভবনে ঢুকেন দুপুর দেড়টার দিকে। বাংলা নববর্ষে উৎসবের মাত্রাটা যেন আরো বেড়ে গেলো।
এসপি হারুনও কম যাননা। নববর্ষ উপলক্ষে শতভাগ বাঙালিয়ানা উৎসবের আয়োজন ছিলো তার বাসভবনে। ত্রিশ পদের ভর্তা, পান্তা-ইলিশ, কাঠাল, আতাঁফল আর দেশীয় ফল রাখা হয় ভোজন অনুষ্ঠানে। এমনকি ফুচকা, চটপটি আর চা-কফির ব্যবস্থা তো ছিলোই। ভ্যানগাড়িতে ছিলো ডাবও। ডাব কেটে দুজন পরিবেশন করছিলো সবাইকে।
ছিলো সাপখেলা, বানর খেলা আর ম্যাজিক দেখিয়ে উপস্থিত অতিথিদের বিনোদন দেয়া। পুলিশ সুপারের এমন আয়োজনে অভিভূত করে সবাইকে।
সবশ্রেণি পেশার মানুষের মিলনে নানা আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়েই পালিত হলো নতুন বছরের প্রথম দিন। সামাজিক সব অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার মানসেই যেন পুলিশ সুপারের এমন ভিন্নধর্মী আয়োজন।
এদিকে এমন আয়োজনে শামিল হোন এমপি শামীম ওসমান, জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ জেলার সরকারি অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট জনেরা।
শামীম ওসমান অনুষ্ঠানে এসে প্রায় এক ঘন্টা অবস্থান করেন। এসপি, তাঁর পত্নীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা শামীম ওসমানকে অভ্যর্থনা জানান। অভ্যর্থনার সময় এসপি পত্নী শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বোনের বাড়িতে ভাই আসবে এটিই তো স্বাভাবিক। এরপর শামীম ওসমান অনুষ্ঠান স্থলে এসে কিছুক্ষণ নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালামের সাথে গল্প করেন। এসময় সমসাময়িক নারায়ণগঞ্জ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তাঁর সাথে কথা বলেন। এরপর শামীম ওসমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ খেতে বসেন। সবাইকে এক টেবিলে দেখে নতুন বছরে নারায়ণগঞ্জে স্বস্তির সুবাতাস বইতে শুরু করলো বলেও উপস্থিত অনেকে মন্তব্য করেন। খাওয়া শেষে শামীম ওসমান আর বেশিক্ষণ দেরী করেননি। পুলিশ সুপার ও তাঁর পত্নী শামীম ওসমানকে বিদায় বেলায় এগিয়ে দিতে আসেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বাসভবনে বৈশাখে অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট মাহবুুবুর রহমান মাসুম, সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান শামীমসহ অন্যান্য সাংবাদিকগণ। শামীম ওসমান আসার আধাঘন্টা আগে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি ও যুগের চিন্তা পত্রিকার সম্পাদক আবু আল মোরছালীন বাবলা। খাবার পর্ব শেষে পুলিশ সুপারের সাথে মোরছালীন বাবলা কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা যায়।
এছাড়া এসপির বাসভবনে আয়োজন করা বৈশাখী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা যুব লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির, বন্দর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে পুলিশ সুপারের এমন আয়োজনকে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছেন সবাই। কঠোর নিরাপত্তা আর নানা নিয়ম কানুনের বেড়াজালের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসী উদযাপন করছে নতুন বছরকে। লাল-সাদা পোশাকে কিবা বাঙালির প্রিয় পোশাক পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরে সব বয়সী নারী-পুরুষরা আনন্দে মেতেছেন। পুলিশ সুপারের বাসভবনে ঢাক, ঢোল, গান আর ব্যতিক্রমী আয়োজন উৎসবের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।