বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সে দেশের সরকারী বাহিনী পরিচালিত সুপরিকল্পিত ও বর্বরোচিত ‘জেনোসাইড’-এর ঘটনায় আমি গভীরভাবে বেদনাহত ও উৎকণ্ঠিত।’ অনতিবিলম্বে এই জেনোসাইড বন্ধের জন্য আমি মায়ানমার সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, যেন আর একটি মানুষও হত্যাকাণ্ড, উচ্ছেদ ও নির্যাতনের শিকার না হয়।
রবিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, সংখ্যালঘু একটি জাতিগোষ্ঠীর ওপর এমন পৈশাচিক নির্মূলাভিযানে প্রতিটি বিবেকবান মানুষ স্তম্ভিত। তাদের সকলের হৃদয় বেদনামথিত। এমন ঘৃণ্য ও নিষ্ঠুর কার্যকলাপের নিন্দা জানাবার কোনো ভাষা নেই।
তিনি বলেন, বর্তমানে ‘রাখাইন’ নামে পরিবর্তিত এককালের স্বাধীন ও গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যমণ্ডিত আরাকান অঞ্চলে পরিচালিত এই গণহত্যা অভিযানে সরকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় ভিন্ন সম্প্রদায়ের দাঙ্গাবাজরাও অংশ নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিধর্ম বিদ্বেষী আক্রোশ চরিতার্থ করতে তাদেরকে গুলি ও জবাই করে এবং পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করে তাদেরকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছে রোহিঙ্গা নারীদের। দুগ্ধপোষ্য শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গভীর পরিতাপ ও দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কোনো সামরিক জান্তা নয়, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির নেতৃত্বে পরিচালিত মায়ানমারের প্রশাসনই এ অমানবিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হোতা। যিনি নিজে দীর্ঘকাল নির্যাতিত হয়েছেন তিনি কী করে এমন পৈশাচিক তাণ্ডবকে অনুমোদন করছেন, ভেবে আমরা স্তম্ভিত হচ্ছি।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে হত্যা, উৎপীড়ন ও উচ্ছেদের জন্য দায়ী প্রতিটি ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, মায়ানমারের এই জেনোসাইডের বিরুদ্ধে আমি আমার প্রিয় দেশবাসীসহ সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষদের সোচ্চার হবার এবং নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াবার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, প্রতিটি মানবতাবাদী রাষ্ট্রের সরকার, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব, জাতিসংঘ ও ওআইসিসহ প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার আহ্বান, কেবল কথামালা নয়, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বলিষ্ঠ এমন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসুন, যাতে মায়ানমার সরকার গণহত্যার কালো হাত গুটিয়ে নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অপরাধীদের শাস্তিবিধানে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা সব সময়েই নিকট প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশকে স্পর্শ করেছে। ঘনবসতিপূর্ণ এবং লোকসংখ্যানুপাতে বাসযোগ্য জমির ক্রমসংকোচনের এ দেশে এখনো অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী আগে থেকেই আশ্রয় নিয়ে আছে। এতে আমাদেরকে সামাজিক অনেক সমস্যাও ভোগ করতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও গণহত্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনকারী জাতি হিসেবে জীবন রক্ষায় আশ্রয় প্রার্থী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কারণে যতদূর সম্ভব আশ্রয় দেয়ার জন্য আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিবেশী অন্যান্য দেশ এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতিও আমি অভিন্ন আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সেই সঙ্গে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, কেবল শরণার্থীদের আশ্রয় ও সাহায্য দেয়ার মধ্যেই কোনো সমাধান নিহিত নেই। রোহিঙ্গারা যাতে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে জীবন-সম্পদ-সম্ভ্রমের অখণ্ড নিরাপত্তা ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ মাতৃভূমিতে বসবাস করতে পারে সেই নিশ্চয়তা বিধান কল্পে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে আমি বিশ্বসমাজকেও অবিলম্বে সক্রিয় হবার এবং এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।