দেশজুড়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও কোনো তদন্ত ছাড়াই সরকার বলে দিচ্ছে এগুলো বিরোধী দলের কাজ। অথচ জনগণ বিশ্বাস করে বিরোধী দলকে দোষারোপ করতেই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে সরকার। তাই জনগণ ক্ষমতাসীনদের প্রতিটি অপকর্মের প্রতিশোধ নেবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান মুক্তি পরিষদ’ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহার ও দলীয় নেতা কর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) নির্বাচিত মেয়র আলহাজ অধ্যাপক এম এ মান্নানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ সভার আয়োজন করা হয়।
দেশজুড়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে প্রশাসনের নির্যাতনের কারণে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন সেখান থেকে তাদের আটক করে কারাগারে নিক্ষেপ করছে। অথচ কারা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে সরকার তাদের ধরতে পারছে না। এতে জনগণের মনে প্রশ্ন জাগে, এসব হত্যা সরকারের লোকেরা করছে কিনা?
অধ্যাপক এম এ মান্নানের বারবার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অধ্যাপক এম এ মান্নানকে বারবার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু কেন, তার দোষ কী? তিনি বিপুল ভোটে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নামে কোনো মামলা ছিল না, তিনি এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটাই কি তার দোষ? আসলে গাজীপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকেরা সব লুটপাট করে খাবে। সেজন্যই প্রশাসন দিয়ে মান্নানকে গ্রেপ্তার করিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের উদ্দেশে রিজভী আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বসে বিবৃতি দিলে জনগণ তা বিশ্বাস করে না। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কত লোক নিহত ও পঙ্গু হয়েছে তার হিসেব কি করেছেন? ক্ষমতার ঠাণ্ডা ঘরে বসে আছেন, তাই প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারছেন না। পঙ্গু হাসপাতালে যান, দেখেন- আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়ে কত মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। জনগণ আপনাদের প্রতিটি অপকর্ম-নির্যাতনের প্রতিশোধ নেবে। সদ্যসমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্বাচনই হয়নি। নির্বাচনের নামে সরকারের পছন্দের লোকদের বেছে নেয়া হয়েছে। এ নির্বাচন নাটকের মাধ্যমে ১২৫ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা এবং হাজার হাজার লোককে পঙ্গু করা হয়েছে। এ অবস্থার উত্তোরণে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ভোটারবিহীন সরকারকে রাস্তায়-রাস্তায়, পথে-ঘাটে, অফিস আদালত সর্বত্রই প্রতিরোধ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে ন্যায়সঙ্গত ভাবে। বিএনপির ক্ষমতায় আসার জন্য এ প্রতিরোধ নয়, জনগণের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য এ প্রতিরোধ। গণতন্ত্রকে আজ বন্দি করে রাখা হয়েছে। মানুষের চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে। আন্দোলনই হবে সে বন্ধ তালার চাবি। যে চাবি দিয়ে বন্ধ তালা খুলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে পারবো।