৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 125

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বক্তাবলীতে কোন মাদক থাকবেনা-পুলিশ সুপার

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন,আগামী ৭ দিনের মধ্যে বক্তাবলীর মাদক ব্যবসায়ী ও জঙ্গীদের নামের  তালিকা তৈরী করে জমা দিন। এ মাসের মধ্যেই মাদক ব্যবসায়ী ও জঙ্গী বিরুধী চিরুনী অভিযান চালানো হবে।

শনিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে কানাইনগর স্কুলে মাঠে মাদক, সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ ও ভূমিদস্যুদের প্রতিরোধের দাবীতে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেয়া কালে তিনি এ কথা বলেন।

বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ ও বক্তাবলী কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এবং বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজ্বী শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ মঞ্জুর কাদের, বক্তাবলী ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি আবুল হোসেন প্রধান, জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন। আরো উপস্থিত ছিলেন-বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আফাজউদ্দিন ভূইয়া,সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো.বাবুল মিয়া,শফিক মাহমুদ,বক্তাবলী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম,আতাউর রহমান প্রধাণ, ভিপি আলমগীর,ইউপি সদস্য আখিল উদ্দিন,হাজ্বী মো.ফারুক, আ:মতিন,মো.রাসেল চৌধুরী মো.জলিল গাজী,মো.মনির হোসেন,আমজাদ হোসেন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোসা.হাজেরা বেগম,মো.মরিয়ম বেগম,মোসা.কুলসুম বেগন ও কমিউনিটি পুলিশিং  কমিটির কমিটির ৭নং ওয়ার্ড সভাপতি মো.দেলোয়ার প্রমূখ।

এ সময় আনিসুর রহমান মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ভূমিদস্যদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলেন, সব কিছু ছেড়েঁ দাও নইলে ১৫ দিনের মধ্যে অভিযান চালানো হবে কেউ রক্ষা পাবেনা।

এছাড়াও তিনি জঙ্গিবাদের তৎপরতা দেখলে পুলিশকে জানানোর জন্য জনসাধারনের প্রতি আহবান জানিয়ে আরো বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে বক্তাবলীকে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলবো। বক্তাবলীতে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি গড়ে তোলা হবে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহ্ মঞ্জুর কাদের এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের এলাকায় টেটাঁ বল্লমের ছড়াছড়িঁ। আমি চেয়েছিলাম সমাধান করতে যেন কেউ খুন না হয়। কিন্তু একজন খুন হয়ে গেছে, আমি ব্যর্থ।

তিনি আরো বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বক্তাবলীতে কোন মাদক থাকবেনা। আমাদের কোন পুলিশ সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিলে তার চাকুরী থাকবেনা।

সভাপতির বক্তব্যে হাজ্বী শওকত আলী বলেন, বক্তাবলী একটি রক্ষনশীল এলাকা। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন মাদক ব্যবসার জন্য বিলিন হয়ে যাচ্ছে। মাদক ও জঙ্গী নির্মূলে  পুলিশ সুপারের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে যাব।

ফতুল্লায় প্রবাসীর স্ত্রীর ফ্ল্যাট থেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফাহিমসহ আটক ২

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর স্ত্রীর ফ্ল্যাটে বসে এক বন্ধুকে নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মদ পান করার সময় পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন।

এসময় পুলিশ ওই বাসা থেকে ১৫টি বিদেশী মদের খালি বোতল ও একটি প্রিমিও প্রাইভেটকার ( ঢাকা মেট্রো-গ ৩৪-১৪৫৪)  জব্দ করে।

শুক্রবার ভোর রাতে ফতুল্লার আবাসিক এলাকা আফাজনগরের কুদ্দুস মিয়ার পাঁচতলা বাড়ির পঞ্চমতলার ফ্ল্যাট থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় পুলিশ প্রবাসীর স্ত্রীকে সকালে থানায় হাজির হওয়ার শর্তে বাসায় রেখে আসেন।

আটককৃতরা হলেন, শহরের দেওভোগ এলাকার জহিরুল হক সেলিম রেজার ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফাহিম (৩৫) ও তার বন্ধু রনি।

স্থানীয়রা জানান, ফাহিম নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা।

ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (আইসিপি) গোলাম মোস্তফা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে আফাজ নগর আবাসিক এলাকায় কুদ্দুস মিয়ার ৫ম তলার ফ্ল্যাটে মধ্য রাতে অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে দুইজনকে মদ পান করা অবস্থায় আটক করা হয়েছে। জানা যায় ওই ফ্ল্যাটে বিথি নামে এক নারী বসবাস করেন। তার দুইটি মেয়ে আছে, স্বামী জিয়াউল হাবিব আমেরিকায় বসবাস করেন।

এছাড়া বিথির ফ্ল্যাট থেকে আরো ১৪টি বিদেশী মদের বোতল খালি অবস্থায় পাওয়া যায়।

ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার আরেক পরিদর্শক (অপারেশন) মজিবুর রহমান জানান, স্থানীয়রা পুলিশকে জানিয়েছে বিথির ফ্ল্যাটে প্রতিদিন প্রাইভেটকারে একাধীক ব্যবসায়ীরা এসে সকাল থেকে ভোর রাত পর্যন্ত মদের আড্ডা জমাতো।

একই সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপও চালাতো। এতে মাতাল হয়ে অনেকেই ফ্ল্যাটের বাহিরে বের হয়ে মাতলামী করতো। এনিয়ে ওই এলাকায় বসবাসকারী লোকজন অতিষ্ট হয়ে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন। এরপর এলাকাবাসীর অভিযোগ তদন্ত করে অভিযান চালানো হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ওই ফ্ল্যাটে দুই ব্যাক্তিকে মদ পানের সময় আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ফাহিম নামে একজন নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ওই ফ্ল্যাটে একটি প্রিমিও প্রাইভেটকার নিয়ে এসেছেন। উদ্ধার করা মদের খালি বোতলের সঙ্গে সেই প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

খালেদা ও তারেকের বিরুদ্ধে সাজানো রায়ের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে আইনজীবিদের বিক্ষোভ মিছিল।

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর বিরুদ্ধে সাজানো রায়ের প্রতিবাদে ও বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আইনজীবীরা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোটেক সাখাওয়াত হোসেন খান এর নেতৃত্বে আইনজীবী ঐক্যের মিছিলটি আদালত এলাকা প্রদক্ষিন শেষে আইনজীবী সমিতির সামনে সমাবেশে আইনজীবী নেতৃবৃন্দ রায়কে প্রত্যাখান করে তারা বলেন, এক দফার নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়ার জন্য এমন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার এ রায় দিয়েছে। তাদের সেই আশা ভঙ্গ করে দেবে এ দেশের জনগন। রাজনৈতিক ফয়দা আদায় করার চেষ্টা করছে এই রায়ের মাধ্যমে।
মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এটা আসলে একটা ফরমায়েশি রায়। সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেষ্টা করছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, এই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার জন্য বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গায়েবী মামলায় জড়াচ্ছে। নৃশংস একটা হত্যা কান্ডে বিরোধী দলীয় নেতাদের জড়িয়ে বিরোধী দলীয় নেতাদের কলঙ্কিত করার জন্য একটা প্রয়াস করছে আওয়ামী সরকার। রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করার চেষ্টা করছে এই রায়ের মাধ্যমে। তিনি বলেন, আমি একজন আইনজীবি হিসেবে আমার মামলার কাগজ পত্র দেখার সুযোগ হয়েছে। এই মামলায় যে সকল বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে তাদের ভিত্তি খুবই দূর্বল। তাদেরকে সাজা দেওয়ার মতো কোন সাক্ষ্যপ্রমাণে কিছু নেই। অথচ সরকার আদালতকে দিয়ে সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। ন্যায় বিচার করা হয়নি। এই রায় দিয়ে সরকার একটা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই রায় আমরা প্রত্যাখ্যান করছি, রায়কে রাজনৈতিক করার কারণে দেশের জনগন এই রায় প্রত্যাখান করছে। সমাবেশ বক্তব্য রাখেন, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাড: সরকার হুমায়ূন কবির, এ্যাড: আবদুল হামিদ খান ভাসানী, এ্যাড: বেনজির আহম্মেদ, এ্যাড: রফিক আহম্মেদ, এ্যাড: কাজী আবদুল গাফফার, এ্যাড: আনোয়ার প্রধান, এ্যাড: ওমর ফারুক নয়ন, এ্যাড: সিমা সিদ্দিকী, এ্যাড: মানিক মিয়া, এ্যাড: শেখ আঞ্জুমান আহাম্মেদ রিফাত, এ্যাড: ফজলুর রহমান ও এ্যাড: মোজাম্মেল হক মল্লিক প্রমুখ।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে-নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা, ফতুল্লার ভুইঘর এবং সোনারগাঁয়ের বেশ কিছু স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সোনারগাঁ থেকে সাতটি তাজা ককটেলসহ বিএনপির তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এ খবর নিশ্চিত করেন।

 

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম জানান, উপজেলার কাঁচপুর, মোগড়াপাড়া চৌরাস্তাসহ চারটি পয়েন্টে ৮-১০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এরমধ্যে তারা কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে উপজেলা তাঁতীদলের সভাপতি ইসমাইল সিকদারকে ককটেলসহ গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা আয়ুব প্লাজার সামনে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় মার্কেটে আসা ক্রেতা ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আয়ুব প্লাজার তৃতীয় তলায় বর্তমান জাপা সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার রাজনৈতিক কার্যালয় রয়েছে। তবে ওই সময় সাংসদ কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না।’

ওসি জানান, সাতটি তাজা ককটেলসহ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক এনামুল হক রবিন, পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক নুর নবী মাস্টার ও উপজেলা তাঁতীদলের সভাপতি ইসমাইল সিকদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার চেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে, নগরীর গলাচিপা এলাকার ৩-৪ স্পটে ৪-৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। গলাচিপা ডিএইচএল গলির ভেতরে একটি এবং আশপাশের এলাকায় এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি কামরুল ইসলাম জানান, দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর গলাচিপা এলাকায় ৪-৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে কয়েকটি বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত জব্দ করে। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

একই সময়ে ফতুল্লার ভুইঘর এলাকায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা একটি ঝটিকা মিছিল বের করে কয়েকটি ককেটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ধাওয়া দিলে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি এস এম মঞ্জুর কাদের জানান, ভুইঘরে একটি মিছিল থেকে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। পুলিশ যাওয়ার আগেই মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় ৩-৪টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, রায় ঘোষণার পরপরই নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লার ভুইঘর ও সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ও কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ডসহ কয়েকটি স্থানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। সোনারগাঁয়ে ককটেলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য জায়গায় কারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এসব ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় শুনে খালেদা জিয়া-নেতাকর্মীদের যে নির্দেশ দিলেন!

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় শুনেছেন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বহুল আলোচিত এ হামলা মামলার রায় শোনেন তিনি।

খালেদা জিয়া বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের খবর পেয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ছিলেন। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপি ও হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার মামলার রায়ের মতোই ছেলে তারেক রহমান ও দলীয় নেতাদের মামলার রায়ের ঘটনায় দলকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই অনুসারে বড় কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। রায় শোনার পরও ‘বিশেষ বার্তা’ বাহক দ্বারা দলীয় নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দি খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য ভিআইপি ৬১২ নম্বরের যে কেবিনে ভর্তি আছেন, টেলিভিশন নেই সেখানে। তাই রায় জানার সুযোগ নেই। তিনি চাইলে জেল কোড অনুযায়ী টেলিভিশন পাবেন। তবে সেখানে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ছাড়া অন্য কোনো চ্যানেল দেখতে পারবেন না।

বিএসএমএমইউ পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, জেল কোড অনুযায়ী তিনি (খালেদা জিয়া) যেসব সুবিধা পাবেন, তার সবক’টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি চাইলে টেলিভিশন দেওয়া হবে। না চাওয়ায় এখন পর্যন্ত টেলিভিশন দেওয়া হয়নি।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বুধবার বিকেলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। এর আগে চিকিৎসকরা পৃথকভাবে দেখা করলেও পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল বোর্ড তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারেননি। তার আগের পরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেছেন তারা।

পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি গত মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার তার রক্ত পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খালেদা জিয়াও এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে। ধাপে ধাপে তার আরও বেশকিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ জলিল চৌধুরী বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্য তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার কথা জানালে তিনি তাতে সম্মতি দেন। বৃহস্পতিবার তার রক্ত পরীক্ষা করা হবে। ওই পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তার চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ শুরু হবে।

এর আগে গত সোমবার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বলেছিলেন, খালেদা জিয়া গেঁটে বাতজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তার ডায়াবেটিসসহ বেশকিছু রোগ অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আছে। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে আনার পর মূল চিকিৎসা শুরু হবে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কতদিন তার চিকিৎসা চলবে, তা নির্দিষ্ট করে এখনই বলতে পারছে না মেডিকেল বোর্ড।

গত ৬ অক্টোবর থেকে খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। ইউনাইটেড বা বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর রিট করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে শুনানির পর গত ৪ অক্টোবর তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার এবং এ জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

খালেদা জিয়া, তারেকের নাম না বলায় মৃত্যুদণ্ড: বাবর

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারসপারসন তারেক রহমানের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেননি বলেই মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।

১৪ বছর আগে ওই গ্রেনেড হামলার সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বুধবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাবর বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। এটি ইতিহাসের জঘন্যতম একটি ঘটনা। এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সর্বোচ্চ সাজা আমিও চেয়েছি।

সাজা ঘোষণার পর তিনি আদালতকে বলেন, আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেয়া হল। আমি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম বলিনি। তাই আমাকে এই সাজা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন তাহাজ্জুত নামাজ পড়ি এবং আল্লাহর কাছে এই ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করি। আমি আল্লাহর কাছে এই ঘটনার বিচার চাই।

নারকীয় সেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে নৃশংস ওই গ্রেনেড হামলা বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।

ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বুধবার বেলা ১২টায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা আলোচিত দুই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

বাবর-পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৭ জনের যাবজ্জীবন

২১ শে আগস্ট হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদসহ ১৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন। দুপুর বারোটার কিছু আগে আদালতে রায় পড়া শুরু হয়। এর আগে বিশেষ নিরাপত্তায় সকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতে অভিযুক্ত ৩১ আসামিকে হাজির করা হয়। আদালতের বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে অসংখ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মী ও অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি নিহত হন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় আজ

২১ আগস্টের বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলার রায় আজ। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আনা পৃথক দুই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। প্রায় ১০ বছর বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দীন এ রায়ের দিন ধার্য করেন।
গ্রেনেড হামলার প্রধান টার্গেট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শুরু থেকেই নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে নানা চেষ্টা করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আনা দুই মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৯ জন। এদের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জঙ্গি মাওলানা তাজউদ্দিন আহমেদসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন, বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন। যুক্তিতর্ক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের কাছে দুই মামলার ৪৯ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান ইত্তেফাককে বলেছেন, দেশের আপামর জনগণ এই মামলার রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। রায় ঘিরে নিরাপত্তা রায়কে ঘিরে যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ আদালতের চারপাশের সড়কে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশ সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। শহরজুড়ে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। সব মিলে রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি নেই। এ মামলায় বিচারক যে রায় ঘোষণা করবেন অবশ্যই তা কার্যকর হবে। তিনি বলেন, রায় ঘিরে কোনো কিছু হবে না। অনেকে মনে করছেন শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি হবে, কিন্তু আমি মনে করি এগুলো কোনো কিছুই হবে না। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রায় ঘিরে নিরাপত্তার সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেউ যদি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা করে তবে কঠোরভাবে তা দমন করা হবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেদিনের ঘটনা দেশব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী ও বোমা হামলার প্রতিবাদে ১৪ বছর ৪৯ দিন আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ সমাবেশের আয়োজন করেছিল। এই সমাবেশ শেষ হওয়ার মুহূর্তে চালানো হয় পৈশাচিক গ্রেনেড হামলা। এ হামলায় নিহত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভী রহমানসহ ২৪ জন। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আহত হন প্রায় ৪শ’ নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এদের অনেকেই এখনও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লি­ন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন।
মামলার তদন্ত
ঘটনার পর দিন (২২ আগস্ট) বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের নির্দেশে তরিঘড়ি করে মতিঝিল থানায় (বর্তমানে পল্টন থানা)  উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা (মামলা নম্বর ৯৭) করেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতা (প্রয়াত) আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী থানায় মামলা করতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। এরপরই ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা শুরু করে চারদলীয় জোট সরকার। হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয় আওয়ামী লীগের ওপর। এখানেই শেষ নয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ঘটনা তদন্তে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে। এক মাস ১০ দিনের মাথায় ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়ে কমিশন বলে সংগৃহীত তথ্য প্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে ইঙ্গিত করে এ হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশি শক্তি জড়িত। তবে ওই প্রতিবেদন বিদেশি শক্তির  নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া সে সময়ের জোট সরকার যুক্তরাজ্যের তদন্ত সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে তদন্তের জন্য আমন্ত্রণ জানালেও তারা সরকারের অসহযোগিতায় বিরক্তি প্রকাশ করে চলে যায়।
তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা
অপরদিকে হামলার পর তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এতে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরে, একজন ছাত্র, একজন আওয়ামী লীগ কর্মীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক। অথচ পরবর্তী তদন্তে তাদের কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ায়  মামলার কার্যক্রম থেমে যায়।
প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন শুরু
২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবির। কিন্তু মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তাকে বার বার হোঁচট খেতে হয়। একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার (যিনি মামলার পলাতক আসামি) রোষানলে পড়তে হয় তাকে। মামলার অন্যতম আসামি হামলার গ্রেনেড সরবরাহকারীর বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে গ্রেফতার করার সময় সরাসরি তাকে হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও মামলার তদন্ত কর্তকর্তা ছিলেন অনড়।
মামলার  প্রথম চার্জশিট
ঘটনার তিন বছর ৯ মাস ২১ দিন পর ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির চার দলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে সিএমএম আদালতে দু’টি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। ওই বছরই মামলা দু’টির কার্যক্রম দ্রুত বিচার আদালত-১-এ স্থানান্তর করা হয়। এ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা) ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) মামলা দু’টির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এর আদালতে এ মামলার বিচার শুরু হয়।
মামলার সম্পূরক চার্জশিট
২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু প্রথম অভিযোগপত্রে গ্রেনেড সংগ্রহ, সরবরাহকারী, আক্রমণের পরিকল্পনাকারী আসামিরা শনাক্ত এবং অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনক্রমে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এবার মামলাটি অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই প্রথম অভিযোগপত্রের ২২ জন ছাড়াও তারেক রহমানসহ আরো ৩০ জনের (মোট আসামি ৫২ জন) বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১২ সালের ১৮ মার্চ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ফের বিচার শুরু হয়। তবে এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়। এরা হলেন— জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শহিদুল আলম বিপুল।
অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর রাষ্ট্রপক্ষের ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আসামিপক্ষে ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলায় ১৪৪টি আলামত ও ৫৫টি বস্তু প্রদর্শন  করা হয়েছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর এ মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। মামলার যুক্তিতর্কের ১১৯ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়েছে ২৯ কার্যদিবস আর আসামি পক্ষ নিয়েছে ৯০ কার্যদিবস। শুনানি শেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালত জামিনে থাকা ৮ আসামির জামিন বাতিল করে ও রায়ের দিন ঘোষণা করে।

ফতুল্লার বক্তাবলীর ধলেশ্বরী নদী থেকে ৩ লক্ষ টাকার কারেন্ট জাল জব্দ।

মা ইলিশ সংরক্ষন অভিযান পরিচালনা করে ফতুল্লা থানাধীন বক্তাবলীর ধলেশ্বরী নদী থেকে ২০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করেছে বক্তাবলী নৌ-পুলিশ। যার আনুমানিক মূল্য ৩ লক্ষ টাকা।

৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার) দুপুর ১টায় সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ ও বক্তাবলী নৌঁ-পুলিশ ফাঁড়ির এস আই নুরুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কারেন্ট জাল গুলো জব্দ করেন।

জব্দকৃত জাল গুলো আগুনে পুড়িয়ে  ধ্বংশ করা হয়।

সুপ্রিমকোর্টে বিএনপি ও আ.লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের হাতাহাতি

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের বসার জন্য নির্দিষ্ট হল রুমের চেয়ার-টেবিল সরিয়ে সংবাদ সম্মেলন করাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি ও হট্টগোল হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে সোমবার (৮ অক্টোবর) আপিল বিভাগে নিয়োগ পান তিন বিচারপতি। সেই নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন ডাকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। মঙ্গলবার দুপুরে সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে সম্মেলনটি শুরু হয়।

মূলত এই হলটি সাধারণ আইনজীবীদের বসার নির্ধারিত স্থান। কিন্তু চেয়ার-টেবিল সরিয়ে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করায় বিপাকে পড়েন সাধারণ আইনজীবীরা।  এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপি নেতাদের সঙ্গে  আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমনসহ অন্য আইনজীবীরা কথা কাটাকাটিসহ হট্টগোলে জড়িয়ে পড়েন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এ ঘটনার নিন্দা জানান।

জানতে চাইলে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন বলেন, ‘আইনজীবী সমিতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। সে কারণে হল রুমের চেয়ার-টেবিল সরিয়ে সেখানে তারা সংবাদ সম্মেলন করছে।

এই হল রুমে অনেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীও বসেন।  অথচ যারা বিচারপতিদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছে, তারা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের বসার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা কেন রাখে না?

আমরা এর প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়। এ নিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। আমরা ঘটনাটি সিনিয়র আইনজীবীদের জানিয়েছি। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।