৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 175

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এড.তৈমুর গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের আদালতপাড়া থেকে নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে তৈমুর আলম খন্দকারকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আদালতে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি পন্থি আইনজীবীরা।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরফুদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তার বিরুদ্ধে সদর থানার নাশকতার দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একাধিক নাশকতার মামলাও রয়েছে।
এদিকে তৈমুর আলম খন্দকারকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে বিক্ষোভ করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

তাদের অভিযোগ, তৈয়মুর আলম খন্দকার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে আদালতপাড়ায় প্রচারণার কাজে ছিলেন। এ সময় পুলিশ আইনজীবীদের সামনে থেকে টেনে-হেঁচড়ে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এভাবে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে একজন সাধারণ মানুষকেও গ্রেফতার করা আইন বহির্ভূত। তৈমুর আলমকে পুলিশ শত শত আইনজীবীর মধ্য থেকে যেভাবে টেনে-হেঁচড়ে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়, এটা আইন বহির্ভূত। আমরা দ্রুত তৈমুর আলম খন্দকারের মুক্তি দাবি করছি।

এক রাষ্ট্রপতি দাড়িয়ে আরেক রাষ্ট্রপতি বসে এমন ছবি না তুললে কী এমন ক্ষতি হতো? : কাদের সিদ্দিকী

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি অবসরের পর প্রথম বিদেশ সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তার এ সফরে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। বহু বছর থেকেই আমি তার পারিবারিক বন্ধু। তিনি আমার এক পরম হিতৈষী। লৌকিকতার বেড়াজাল ভেঙে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা খুবই বাস্তবের কাছাকাছি। তাকে ক্ষমতাবান দেখেছি, দেখেছি কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত রাজনৈতিক ঘূর্ণিপাকে কষ্টকর সময় পাড়ি দেওয়া একজন রাজনীতিক হিসেবে। রাষ্ট্রপতি ভবনে যেমন দেখেছি, তেমন এস-৩০ গ্রেটার কৈলাসে নিজস্ব ছোট্ট বাড়িতে দেখেছি। তার ছেলেমেয়ে অভিজিৎ, ইন্দ্রজিৎ ও শর্মিষ্ঠা মুখার্জি তিনজনকেই বেশ শিশুকালে দেখেছি।

শর্মিষ্ঠা মুখার্জিকে কোলে নিয়েছি কিনা খেয়াল নেই। কিন্তু কয়েক বছর তাকে গল্প শুনিয়েছি। ইন্দ্রজিৎ মুখার্জি পিন্টু ভীষণ দুষ্টু ও খুবই ছোট ছিল। জোর করেই কোলে বসে থাকত। বাচ্চাদের কোলের সঙ্গে কাঁধে-পিঠে চড়ার একটা সম্পর্ক থাকে। কতবার কাঁধে চড়েছে, পিঠে চড়েছে হিসাব করতে গেলে ভালো অঙ্ক শিখতে হবে। কোনো ঠুনকো কাচের মতো আমাদের সম্পর্ক নয়। সম্পর্কটা অনেক শক্ত।

শুভ্রা মুখার্জি বেঁচে থাকতে তা ছিল আরও শক্ত। ধর্মীয় ভিন্নতা ছাড়া আমি অমন মায়ের মতো মহিলা খুব একটা দেখিনি। তালকাটরা রোডের বাড়ি সে ৭ নম্বরই হোক আর ১৩ নম্বরই হোক, ২ নম্বর জন্তর-মন্তর আবার তালকাটরা, সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন— কোথাও তার গায়ে গরম লাগার কোনো লক্ষণ পাইনি। রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রথম যেদিন গিয়েছিলাম প্রণবদার সঙ্গে কথা বলার সময় তিনবার খবর পাঠিয়েছিলেন, ‘বাঘা যেন আমাকে না দেখে না যায়।’ তখন তিনি খুবই অসুস্থ। ভালো করে বিছানায় উঠে বসতেও পারতেন না।

সে অবস্থায়ও আমি যখন তার বিছানার পাশে বসে ছিলাম তখন তিনি চেয়ারে না বসে তার পাশে বিছানায় বসতে বলেছিলেন। বার বার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, ‘ভগবানের ওপর ভরসা রেখো, তোমার আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন কেউ তোমাকে তা থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। বাংলাদেশে আমরা বঙ্গবন্ধু আর তোমাকেই আপন জানি। নেতা, মহানেতা, মন্ত্রী সে তো আজ আছে কাল নেই। কিন্তু সারা দুনিয়ার নিপীড়িত মানুষের হৃদয়ে তোমার যে সংগ্রামী ছবি আঁকা আছে তা কেউ মুছতে পারবে না।

দেখো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ কত বছর, এই দিল্লিতে একজন জীবিত বীর বাঙালির নামও যদি কেউ মনে করে সে হচ্ছো তুমি। নেতাজি সুভাষের পর পশ্চিমবঙ্গে তোমার নাম সবার আগে উচ্চারিত হয়। তোমার থেকে অনেক বড় বড় বাঙালি এই পৃথিবীতে আছে। কিন্তু তোমার মতো সংগ্রামী বাঙালি, তোমার মতো ভালোবাসার বাঙালি দ্বিতীয় কেউ নেই।’

কথাগুলো যখন ভাবী তখন শিহরিত হই। একজন মানুষ কত উদার ও দরদি হলে ওভাবে বলতে পারেন। তাই তাকে হারিয়ে বড় অভাববোধ করি। জানি, কেউ চিরদিনের জন্য নয়, কিন্তু তবু যারা ভালোবাসেন, স্নেহ করেন তাদের অভাব বড় বেশি করে হৃদয়ে বাজে। মুখার্জি পরিবারের সঙ্গে পরিচয় সেও প্রায় ৪০ বছর। তাদের ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন দেখিনি। মানুষ হিসেবে একই রকম আচরণ করেছেন। পুরো পরিবারের সঙ্গে এ রকম ঘনিষ্ঠতা সবার হয় না। আমিও তো দেখি, আমি যাদের স্নেহ করি আমার ছেলেমেয়েরা হয়তো তাদের পছন্দ করে না। একজন করলে আরেকজন করে না। কিন্তু প্রণবদার বাড়িতে তা দেখিনি। প্রণবদা রাষ্ট্রপতি হওয়ার দু-তিন বছর আগের কথা। আমি কেবল গেছি হীরালাল এসে দাদার কাছে নিয়ে যাচ্ছিল। হীরালাল প্রণবদার বহু বছরের কর্মী।

বাড়িতে দেখা-সাক্ষাতের দায়িত্ব তার। কী এক অসুখে একসময় কুঁজো হয়ে গিয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে অনেকটাই সোজা হয়েছে। বড় ভালো মানুষ সে। দাদা তখন তার অফিসে কাজ করছিলেন। দিদিকে যারা দেখাশোনা করেন তাদের মধ্যে রাধা বা লক্ষ্মী কেউ একজন ছুটে গিয়ে দিদিকে বলেছিল, ‘বিবিজি, আপকা রাজা ভাই হ্যায় না? ও আয়া।’ আমি দিদির ড্রইংরুমে গিয়ে বসতেই ছুটে এসে বলছিলেন, ‘বাঘা তুমি জানো, ওরা তোমাকে কী বলে? ওরা মনে করে তুমি কোনো রাজা।’ এ রকম অনেক ঘটনা অনেক সময় ঘটত। প্রণবদা তখন রাষ্ট্রপতি। গিয়েছিলাম প্রদ্যুৎ গুহের ছেলের বিয়েতে। রাষ্ট্রপতি ভবনের এক মাঠে আয়োজন করা হয়েছিল।

আমাদের এক পরম হিতৈষী তপন চক্রবর্তীর সঙ্গে সেখানে দেখা হয়েছিল। দুর্দিনে ভদ্রলোক আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেককে থাকতে দিয়েছেন, খেতে দিয়েছেন। এক অভাবনীয় লোক ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে যখন প্রণবদা এলেন, আমি যেতে যেতেই পাশে বসিয়েছিলেন। আমি, তার ছেলে অভিজিতের মেয়ে এই তিনজন। কয়েক মিনিট পর উঠে আসতে চেয়েছিলাম। ১৫-২০ মিনিট উঠতে দেননি। তাই বসে ছিলাম। যখন যেখানে দেখা হয়েছে সেখানেই এক আলাদা গুরুত্ব দিয়েছেন।

এই তো সেদিন ১৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকা এসেছিলেন। আমি ১২ জানুয়ারি রাতে ফোন করে আমার বাড়িতে আসতে পারবেন কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বলেছিলেন, ‘এ যাত্রায় আর হবে না। সবাইকে নিয়ে তুমি এসো।’ ১৫ তারিখ সকালে সোনারগাঁওয়ে ফোন করেছিলাম। দু-তিন বার ফোন করে দাদাকে পাইনি। কারণ তার রুমে ফোন দেওয়া বারণ ছিল। মেয়ে মুন্নী এসেছিল। তাকেও পাইনি। বহু বছর দাদার কাজ করে পদম। শেষে তাকে ফোন করেছিলাম। পদম ছিল না, ওর বউ ছিল। সে বলেছিল, আমি জানাচ্ছি। প্রণবদার তখন ধানমন্ডিতে যাওয়ার কথা ছিল।

তারপর গণভবনে, তারপর খুব সম্ভবত অর্থমন্ত্রীর নৈশভোজ, তারপর হোটেলে ফেরা। আমার ধারণা ছিল তার পরদিন অথবা ১৭ তারিখ দেখা হবে। কিন্তু ৭টার দিকে অ্যাম্বাসি থেকে ফোন পেলাম, সোয়া ৯টায় সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এত জ্যাম বলার মতো না। পরে পিছিয়ে এসে সংসদ ভবনের ভিতর দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে সোনারগাঁওয়ে গিয়েছিলাম। ৫-৬ মিনিট দেরি হয়েছিল। দেরি হয়ে ভালোই হয়েছিল।

আমি যখন করিডর দিয়ে যাই তখন হাসানুল হক ইনু বেরিয়ে আসছিলেন। ঠিক সময়ে গেলে হয়তো ৪-৫ মিনিট বসে থাকতে হতো। তা হয়নি। প্রায় ৪০ মিনিটের মতো ছিলাম। আরও থাকলেও হয়তো আপত্তি ছিল না। কত কথা আর বলা যায়। একসময় চলে এসেছিলাম। দিদি মারা যাওয়ার পর দাদাকে দেখাশোনার কিছুটা হলেও অভাব বা ব্যত্যয় ঘটেছে। একজন মানুষ বিছানায় পড়ে থাকলেও যে বাড়ির কাজ দেখাশোনা করতে পারেন, শুভ্রা মুখার্জি তার উজ্জ্বল প্রমাণ। তিনি অনেক দিনই তেমন কাজকর্ম করতে পারতেন না। কিন্তু যারা বাড়িতে ছিল বা থাকত তারা ত্রুটিমুক্ত কাজ করত। কোনো কাজের ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যেত না। এখন তিনি নেই, ত্রুটি আছে কিনা বলতে পারব না।

কিন্তু দাদার দেখাশোনার কিছুটা যে অযত্ন হয় না, তা বলতে পারব না। ব্যক্তিগতভাবে যে পর‌্যায়ে আমাদের সম্পর্ক সেখানে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করতে কোনো বিধিনিষেধ নেই। আমরা উভয় পরিবারই খুবই খোলামেলা। সেদিন আমার স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা মুন্নীর সঙ্গে যে কথাবার্তা বলেছে তাও ছিল খোলামেলা। আমার স্ত্রীর দেওয়া শাড়ি ওর যে খুবই পছন্দ হয়েছে তা বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। গত ২০ বছরে যখনই গেছি তখনই প্রণবদাকে গামছা উপহার দিয়েছি। এবারও দিয়েছিলাম। আমাদের কথাবার্তার সমস্ত সময়ই তিনি গামছা গলায় নিয়েই ছিলেন এবং কয়েকবার চোখে-মুখে গামছা লাগানো দেখে অভিভূত হয়েছি।

পত্রপত্রিকায় এসেছে নির্বাচনের আগে আগে তার এই সফর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেত্রীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে বোঝাপড়া। আমার সঙ্গেও তো বেশ অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। আমার কিন্তু তেমনটা মনে হয়নি। পত্রপত্রিকা ও ফেসবুকে নানা ধরনের মন্তব্য দেখেছি। সত্যিই আমরা অনেক সময় কাউকে নিঃস্বার্থ সম্মান দিতে পারি না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে প্রণব মুখার্জি সম্পর্কে যতটা বলা হয়, অতটা তিনি করেননি। ভোটার ছাড়া অমন নির্বাচন অন্ততপক্ষে প্রণব মুখার্জি যে চাননি, তা আমি জোর গলায় বলতে পারি।

অন্যরা সবাই চেয়েছিলেন আমার কাছে তেমনও মনে হয় না। কারণ শিবশঙ্কর মেননকে আমি ব্যক্তিগতভাবে জানতাম। তিনি অসম্ভব ধরনের মেধাবী ছিলেন। হ্যাঁ, সুজাতা সিংসহ আরও কয়েকজন ছিলেন, যারা যেনতেনভাবে ভারতীয় স্বার্থে নির্বাচনী কার্যকলাপ এগিয়ে নিয়েছেন। সে যাই বলুক, ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রহসন গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে শত বছর পিছিয়ে দিয়েছে।

সেই সঙ্গে পাহাড়প্রমাণ বদনামের ভাগিদার হয়েছেন ভারতীয় নেতৃবৃন্দ। পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের নির্বাচনকে কেউ কখনো স্বীকার করেনি, করবেও না। আমাদের দেশে দুর্বল বিরোধী দলের কারণে পাতানো নির্বাচনের বিষফোঁড়া থেকেই গেল। সেটা ফেটে এখনো বিষবাষ্প বেরিয়ে যেতে পারছে না। যে বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, সেই বঙ্গবন্ধুর দলের এ রকম একটি নিন্দনীয় পদক্ষেপ সবার মাথা হেঁট করে দিয়েছে।

নিশ্চয়ই নির্বাচন নিয়ে ভারত তার কথাবার্তা বলছে বা বলবে। কিন্তু তা প্রণব মুখার্জির মাধ্যমে নয়। মনে রাখতে হবে, বিজেপি সরকারে প্রণব মুখার্জি মোটেই কিছু নন। প্রণব মুখার্জি নিঃসন্দেহে ভারতের একজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা। তাকে নিশ্চয়ই বিজেপিও সম্মান করে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনের সাধারণ একজন থিঙ্কার যা ভাবেন, প্রণবদা অন্তত বিজেপির কাছে তার চেয়ে বেশি নন।

ভারতের একমাত্র বাঙালি সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির এই সফর অসাধারণ সুন্দর সৌহার্দ্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বলা যেত, শুধু ভারতীয় হাইকমিশনে তার সঙ্গে দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ওইসব ছবি না তুললে অনেক ভালো হতো। সাবেক রাষ্ট্রপতিকে যেভাবে জানি, চিনি তার মধ্যে কোনো অহংকার নেই, উচ্চনাসিকা নেই। তিনি সবসময় একই রকম জীবনযাপন করেছেন। আমি কখনো তাকে উত্তেজিত দেখিনি। তার সংসারে যে জোয়ার-ভাটা যায়নি, তা কিন্তু নয়। তার পরও একজন অত্যন্ত সংযত মানুষ হিসেবে তাকে সবসময় পেয়েছি। ছবির কথা, সারা জীবনে তার সঙ্গে আমার ছেলেমেয়ে, ভাইবোন কত ছবি তুলেছি তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু কখনো এমন হয়নি যে, আমি সামনে বসি তোমরা পেছনে দাঁড়াও।

শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যেভাবে পাশে বসে ছবি তুলেছেন অতটা কাছাকাছি মা-ছেলে একত্রে বসে। তাহলে এখানে হাইকমিশনে অমন হলো কেন? শুধু একা প্রণব মুখার্জি চেয়ারে বসলেন আর সবাই পেছনে দাঁড়িয়ে, প্রণবদার মতো একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিও দাঁড়িয়ে ছিলেন। এটা কী করে হলো? চাণক্যের দেশ ভারত। তাদের কূটনৈতিকরা এটুকুও কী বোঝেন না, ও রকমভাবে ফটোসেশন করায় মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হবে। ওভাবে ছবি তুলতে প্রণব মুখার্জি কখনো উৎসাহী ছিলেন এটা গলায় গামছা নিয়ে বললেও (নামাবলি প্রণাম) আমি মেনে নেব না।

কারণ এক দিনে কারও চরিত্র বা অভ্যাস বদল হয় না। প্রণব মুখার্জি ও ধরনের মানুষই নন। তাই যে-ই করে থাকুক পরিকল্পনাটি কাঁচা হাতের খুবই কম বুদ্ধির। অমন ছবি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য অসম্ভব ধরনের ক্ষতিকর। ওতে কী বোঝা যায়? বোঝা যায় বড় ভাই, ছোট ভাই অথবা মুরব্বিপনা। আমি তো এক দিনও তাদের বড় ভাই সাজা বা মুরব্বিপনার আভাস পেলাম না। কতবার কতজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে, কথাবার্তা হয়েছে। আমরা যেমন সুসম্পর্ক চাই, তারাও তেমন চান।

খুব বেশি যে মাতব্বর হতে চান, তা তো কখনো মনে হয়নি। যা সত্য আমি সবসময় তাই বলার চেষ্টা করেছি। যতক্ষণ বেঁচে থাকব ততক্ষণ তাই বলব। এতে লাভ-ক্ষতি যা হওয়ার হবে। দেশের ক্ষতি না হলেই হলো। বেশ কয়েক বছর আগে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন। ছয়জন রাঁধুনি সঙ্গে নিয়েছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তখন রাষ্ট্রপতি ভবনে। তিনি তাকে একবার রেঁধে খাইয়েছিলেন। আমি খুব মর্মাহত ও অসম্মানবোধ করেছিলাম। দিল্লিতে গিয়ে তাকে রেঁধে খাওয়ানো ঠিক হয়নি।

কিন্তু সেদিন যে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন এখানে ৫০বার তাকে রেঁধে খাওয়ালেও সেটা সম্মানের হতো, বাঙালি জাতির গৌরবের নিদর্শন হতো। যখন যেখানে যেটা মানায় সেটাই করা উচিত। সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমাদের দেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিসহ অন্যান্য প্রবীণ নেতাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা জাতীয় অবমাননার শামিল। এই ক্ষয় কত দিনে ঘুচবে বা মিটবে তা স্রষ্টাই জানেন, আমরা কেউ জানি না। সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত দেওয়া হয়েছে। এতে নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও এক হাজারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে সিটি করপোরেশনের আইন বিষয়ক কর্মকর্তা জিএম এ সাত্তার বাদী হয়ে ওই অভিযোগটি দায়ের করেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আইভীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্যই গত ১৬ জানুয়ারি লাঠিসোটা, অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়।

অভিযোগে প্রধান আসামি করা হয়েছে ঘটনার দিন অস্ত্র বের করা নিয়াজুল ইসলামকে। এছাড়া অভিযুক্ত অন্যরা হলেন অস্ত্র প্রদর্শন করা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, ঘটনাস্থলে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন ও চঞ্চল মাহমুদ।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের দায়িত্বরত ওসি আবদুর রাজ্জাক জানান, একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখনো মামলা রেকর্ড করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ নিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি সংঘর্ষ হয় মেয়র আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। এতে সিটি মেয়র আইভীসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। সেদিন মানবঢাল তৈরি করে আইভীকে রক্ষা করেন তার কর্মী-সমর্থকেরা। এ সময় আইভীর গায়ে ঢিল লাগে বলে অভিযোগ করা হয়। পরে আইভী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, এই ঘটনার জন্য শামীম ওসমান সরাসরি দায়ী।

ঘটনার দুদিন পর গত ১৮ জানুয়ারি বিকালে মেয়র আইভী সিটি ভবনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওইদিন বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এনে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ)। তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ড. বরেণ চক্রবর্তী, আবদুজ জাহেদসহ পাঁচ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়।

দুই দিন পর্যবেক্ষণ শেষে গত ২০ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় বলে জানান অধ্যাপক ড. বরেণ চক্রবর্তী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মেয়র আইভী হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাবেন বলে জানা গেছে। এর আগে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঘটনার দিন অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলাম খান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত প্রায় ৯০০ থেকে ১০০০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

ফুটপাত দিয়ে আমার নারায়ণগঞ্জবাসী চলাফেরা করবে-আইভী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জ তার কথাতেই চলবে-এটা সাফ জানিয়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র আমি। আমার সিটির লিডার আমি, আমার কথায় নারায়ণগঞ্জ চলবে। কারণ আমার নগরের দায়িত্ব আমার এবং নারায়ণগঞ্জবাসীর, অন্য কারও নয়।’

পাঁচ দিনের চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল ছেড়ে নারায়ণগঞ্জে ফিরে গেছেন আইভী। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তিনি কথা বলেন সংবাদ সম্মেলনে।

গত ১৮ জানুয়ারি বিকালে নগরভভনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আইভী। স্থানীয় চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠিয়ে দেন ঢাকায়। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ)।

পরদিন আইভীকে দেখতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, নারায়ণগঞ্জের মেয়রের স্ট্রোক করেছিল। দুই দিন পর্যবেক্ষণ শেষে গত ২০ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় বলে জানান তার চিকিৎসক বরেণ চক্রবর্তী। আজ দুপুরে আইভী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।

পাঁচদিন হাসপাতলে থাকার পরও আইভীর কথায় আগের মতোই সেই তেজস্বী ভাব দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনা নিয়ে শামীম ওসমানের সঙ্গে তার পুরনো বিরোধ চাঙ্গা হয়েছে, সেই হকার উচ্ছেদ নিয়ে আবার কঠোর অবস্থানের কথাই জানান তিনি।

মেয়র আইভী বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে আমার নারায়ণগঞ্জবাসী চলাফেরা করবে। এটা হকারদের ব্যবসার জায়গা নয়। ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটবে, আর হকাররা ব্যবসা করবে নির্দিষ্ট জায়গায়। যেখানে মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না।’

হকারের বিষয়টিতে আইভী যে শামীম ওসমানকে এক বিন্দু ছাড় দেবেন না, সেটি তিনি স্পষ্ট করেই ইঙ্গিত দেন হাসপাতাল ছাড়ার আছে। তিনি বলেন, ‘আমি যে যুদ্ধে নেমেছি সেটা নীতি বা আদর্শের যুদ্ধ, ক্ষমতার যুদ্ধ নয়।’

এরই মধ্যে শামীম ও আইভীকে ঢাকায় ডেকে পাঠানোর খবর প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে আইভী অসুস্থ হওয়ার পর এই বিষয়টি আর গতি পায়নি। নারায়ণগঞ্জের মেয়র বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুদ্র কর্মী। আমি অনেকবার পরীক্ষা দিয়েছি। আমার আর পরীক্ষা দেয়ার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। আমি সারা জীবন শেখ হাসিনার ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে কাজ করে যেতে চাই।’

নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে আইভী বলেন, ‘আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। আমি আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নারায়ণগঞ্জবাসী বিশেষ করে পুরো দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যারা আমার বিপদের দিনে আমার খোঁজখবর নিয়েছে।’

আইভী বলেন, ‘যে সাহসী আইভীকে তারা চেয়েছিল, সাহসী নারায়ণগঞ্জবাসী আবার জেগেছে। অস্ত্রের ঝনঝনানির কাছে শান্তির যে জয়, নৈতিকতার যে জয়- তাকে কেউ হারাতে পারে না। এটা নারায়ণগঞ্জবাসী দেখিয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জ শহরকে শান্তিময় হতেই হবে- এমন মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমার কোনো অভিযোগ নেই। রাজনীতিতে এরকম হবেই।’

গত ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফুটপাত থেকে হকারদেরকে উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন এবং পুলিশ। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমান চাইছেন হকাররা আবার বসুক সেখানে। এ নিয়ে দুই পক্ষের কথার লড়াই গত ১৬ জানুয়ারি রূপ নেয় সংঘর্ষে। আহত হন আইভীসহ ৫০ জনেরও বেশি। আর এ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইভী ও শামীমের সঙ্গে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, দুই জনকেই বলেছেন সংযত হয়ে কথা বলতে।

সংঘর্ষের পর দিন নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সড়ক ছাড়া অন্য সড়কে বিকাল পাঁচটার পর হকার বসার অনুমতি দেয় সিটি করপোরেশন। আর পরদিন আইভীর অসুস্থতার খবর পেয়ে হকাররা বঙ্গবন্ধু সড়কেও ফিরে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে সেখানে বসতে দেয়নি।

স্বরসতী পূজা উপলক্ষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা

আজ ২২ জানুয়ারী’১৮ বিকাল ৩টায় স্বরসতী পূজা উপলক্ষে আমলাপাড়া সার্বজনীন স্বরসতী পূজা কমিটির পক্ষ থেকে একটি চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । এই প্রতিযোগিতায় ৫০ জনের মতো প্রতিযোগী অংশগ্রহন করে অনুষ্ঠানটি সাফল্যমন্ডীত করে তোলে । আগামী ২৩ জানুয়ারী রাত ৮ টায় ১ম,২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীদেরকে ক্ষুদ্র পরিসরে সংবর্ধনা দেয়া হবে।

সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাচ্ছে!

হুমায়ুন আজাদ ১৯৮৫ সালে আত্মবিশ্বাসের সাথে লিখেছিলেন, আমি জানি সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। এখন ২০১৮। হুমায়ুন আজাদের কবিতাটির বয়স এখন ৩৩। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আবার এই ৩৩ নিয়েই লিখেছিলেন, ‘তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি।’ সুনীলের কথা কেউ না রাখলেও ৩৩ বছর পর দেখা যাচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কথা রেখেছেন। তার ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হচ্ছে। সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাচ্ছে।

পাঠক ভাবতে পারেন হঠাৎ করে কী এমন হলো যে এমন নেতিবাচক কথা বলতে হলো? গত দুই তিনদিনে যারা পত্রিকায় চোখ রেখেছেন, ফেসবুকে স্ক্রল করেছেন তারা নিশ্চয় তিনটা খবর কয়েকবার পড়েছেন। দুইটা ভিডিও কয়েকবার দেখেছেন। না দেখলে বা না পড়লে সময় করে পড়ে নিন। বাংলাদেশে থাকবেন আর এইসব খবর পড়বেন না, ভিডিও দেখবেন না, তাহলে তো পিছিয়ে যাবেন।

প্রথমেই দেখতে হবে শমরিতা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনের একটি ভিডিও। আন্দোলনরত মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে যাবার হুমকি দিয়ে শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এম মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে সরকার। যারা ইতরামি করবে, খুলি উড়িয়ে দেব।’

বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়কার ভিলেন ডিপজলের মুখ থেকে এ ধরণের ডায়ালগ শোনা যেত। ডিপজল এখন আর ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেন না। ফলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে ভিলেন সংকট। ডিপজলের জায়গা দখল করতেই মকবুল হোসেন এই পন্থা বেছে নিলেন নাকি এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকেই।

গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তিনি আরও কিছু শব্দ বলেন। যা ভদ্রলোকের লেখা ও পড়া উচিত না। প্রকাশ্য রাস্তায় শিক্ষার্থীদের গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেওয়ার বুলি উচ্চারণের মধ্য দিয়ে মকবুল হোসেন কথা রাখলেন। সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে, কথাটা এভাবে ‘কথা রাখবে’ কেউ কি ভেবেছিলেন?

জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারী দাশ লিখেছিলেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ আমাদের দেশে যে কথা বলার চেয়ে কাজ করার ছেলে বেশি হয়ে যাচ্ছে তার আরেকটি প্রমাণ কক্সবাজারের রামুর সাংসদ সাইমুম সারওয়ার।

তিনি খুলি উড়িয়ে দেওয়ার কথা না বলে কাজ করে দেখিয়েছেন। গত রোববার তুই-তুকারি করে শিক্ষকের ছেলেকে গায়েব করে দেওয়ার হুমকির সাথে গলা ধাক্কা দিয়েছেন শিক্ষকের। কুসুমকুমারী দাশের কথা এভাবে প্রয়োগ হবে সেটা হয়তো কবি নিজেও ভাবেননি। এর আগে আমরা দেখেছিলাম নারায়ণগঞ্জের সাংসদ নাসিম ওসমান এক শিক্ষককে লাঞ্ছনা করেন। যদিও সেই শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছিল সারাদেশ। এবার কেউ টু শব্দটি করছে না।

যেমন টু শব্দ করছে না নাসিম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জের আরেক সাংসদ শামীম ওসমানের কীর্তিতেও। মঙ্গলবার তার লোকজন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াত আইভির উপর হামলা করে। অস্ত্র উঁচিয়ে মারতে আসে। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে মেয়র আইভিসহ শতাধিক নেতাকর্মী ও সাংবাদিককে আহত হন।

গত মেয়র নির্বাচনে আমরা দেখেছিলাম শামীম ওসমান আইভিকে বোন ডাকছেন। একসাথে আইসক্রিম খেলেন। বোনকে শাড়ি উপহার দিলেন। বোন আবার সেই শাড়ি পরে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলেন। নির্বাচনের আগেই ভাই বললেন, আইভির বিজয় কনফার্ম। হলোও তাই। তখন সবাই ভেবেছিল অপরাধের জনপদে শান্তি ফিরে আসবে। সব বিরোধের অবসান হবে।

কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনায় চরম আশাবাদীও হতাশ হতে বাধ্য। এভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দীর্ঘদিন পর দেখল এদেশের জনগণ। এতে করে প্রমাণ হলো শামীম ওসমানরা এখনো শামীম ওসমানই রয়েছেন।

তিনদিনের ব্যবধানে সরকারের তিন সাংসদ মকবুল, সাইমুম, ওসমান নিজ নিজ কর্ম দিয়ে তাদের কীর্তির চেয়েও তারা কতটা ‘মহান’ সেই প্রমাণই যেন দিলেন। এসব ক্ষেত্রে তারাই কেবল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। এভাবে চলতে থাকলে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দটাকেই মানুষ এড়িয়ে চলতে শুরু করবে।( উৎসঃ চ্যানেল আই)

চেক জালিয়াতির অভিযোগে ব্যবসায়ী জোনায়েদ কবির গ্রেফতার

নিউজ প্রতিদিন ডটনেট : নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার আলিরটেক ইউনিয়ন এর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ জুনায়েদ কবিরকে চাঁদার দাবিতে অসংখ্যবার হুমকি দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী বাহিনী। চাঁদার দাবিতে কখনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ,কখনো বাড়িতে হামলা ,আবার কখনো ফোনে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসী বাহিনী।

গত ১৫ ই ডিসেম্বর অয়ন ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী মাহদী গার্মেন্টসের পরিচালক জোনায়েদ কবিরের নিকট ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং চাঁদা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে বলে তার বড় ভাই মাসুম রানা জানান।

তিনি আরো বলেন, ২০ লক্ষ টাকা চাঁদার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেপড়ে লেগেছে এবং একের পর এক হুমকি ও ব্যবসা ভাংচুর করে যাচ্ছে।

গত ২৮ই ডিসেম্বর ২০ লক্ষ টাকা চাঁদার জন্য মাহাদী গার্মেন্টসে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে সবকিছু তছনছ করে ফেলে এবং নগদ টাকা ও প্রতিষ্ঠানের চেক বই নিয়ে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। অয়ন ওসমান তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকে ২০ লক্ষ টাকার চেক জমা করে এবং চেক পাস না হওয়ার তার ছোট ভাইয়ের নামে থানায় মিথ্যা মামলা করে, যার ফলে কোন আইনি নোটিশ ছাড়াই গত ১৭ই জানুয়ারি পুলিশ তার ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে যায় বলে তার বড় ভাই মাসুম রানা জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীতা নিয়েই দুই পরিবারের দ্বন্ধ

ডেস্ক নিউজঃ দুই পরিবারের লড়াইয়ের শুরু প্রায় পাঁচ দশক আগে। দুটি পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরীক্ষিত পক্ষ। খান সাহেব ওসমান আলীর পরিবার আর আলী আহমেদ চুনকার পরিবার প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী হওয়াকে ঘিরে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। সে সময় আলী আহমেদ চুনকা আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র লড়ে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন খোকা মহিউদ্দিনকে। খোকা আওয়ামী লীগ ও ওসমান আলীর পুত্র শামসুজ্জোহা পরিবারের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।

এই দ্বন্দ্বের জেরটা আরো জোরালো হয় ১৯৮০ সালে। এবার বিরোধের বিষয় জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। প্রতিযোগী সেই শামসুজ্জোহা ও চুনকা। এবার সরাসরি শামসুজ্জোহাকে হারিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন চুনকা। মাঝে কয়েক বছর বিরতি দিয়ে দুই পরিবারের বিরোধ সামনে আসে নারায়ণগঞ্জ নগর পিতার আসনটি নিয়ে।

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়েছিলেন চুনকা কন্যা আইভী। কিন্তু সেই সমর্থন পেয়েছিলেন শামসুজ্জোহা পুত্র শামীম ওসমান। ফল সেই আগের মতোই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে নগরভবনে যান আইভী। মাঝে মিইয়ে থাকা দুই পরিবারের বিরোধটা এবার তুঙ্গে ওঠে। নানা ঘটনা আর শামীম-আইভীর বাকযুদ্ধ উত্তপ্ত রাখে জেলা রাজনীতিকে। আইভী দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হওয়ার ক্ষেত্রে দৃশ্যত বাধা ছিল না ওসমান পরিবার।

কিন্তু জেলার লোকজন বলছেন, আদতে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে লড়েই দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হন আইভী। দীর্ঘ পাঁচ দশকে দুই পরিবারের রাজনৈতিক বিরোধ এতদিন বাকযুদ্ধ আর আলোচনার মধ্যেই ছিল। দলের নেতারা কাছে ডেকে বিরোধ মিটিয়ে দিয়েছেন দফায় দফায়।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তা রাজপথে গড়ায়। শামীম-আইভীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা উত্তাপ ছড়ায় রাজনীতির ময়দানে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিব্রত দলের নেতারা। বিরোধ মেটাতে বরাবরের মতোই নেতারা উদ্যোগ নিচ্ছেন এমন আলোচনা হচ্ছে।

যেখান থেকে দ্বন্দ্বের শুরু:

শুরুটা স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে। সে সময় পৌর চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য আলী আহাম্মদ চুনকা নিজের দল আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়েও পাননি, সমর্থন পান মহিউদ্দিন আহম্মেদ খোকা ওরফে খোকা মহিউদ্দিন। খোকার এই সমর্থন পাওয়ার পেছনে প্রত্যক্ষ শক্তি ছিলেন ওসমান পরিবারের একেএম শামসুজ্জোহা। চুনকা মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বারস্থ হওয়ার পরও সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন। এর পর থেকে চুনকা পরিবার ও ওসমান পরিবারের মধ্যে শীতল দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

১৯৮০ সালে জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলনে শামসুজ্জোহা ও চুনকা সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চুনকা জয়ী হন। ১৯৮৪ সালে আলী আহাম্মদ চুনকার মৃত্যুর পর ৮৬ সালে তার মেয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী বিদেশে পড়তে গেলে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠে একক কর্তৃত্বের দাবিদার হয়ে উঠে ওসমান পরিবার। তবে ওই সময়ে শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপিকা নাজমা রহমানের নেতৃত্বে সংগঠিত থাকে চুনকার নেতাকর্মীরা। ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করেন নাজমা রহমান। কিন্তু শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম ওসমান ও তার ভাই জাতীয় পার্টির মনোনীত নাসিম ওসমানের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে শামীম ওসমানের সঙ্গে দূরুত্ব তৈরি হয় নাজমা রহমানের। শহরের উত্তর-দক্ষিণের রাজনীতি নাজমা রহমানের মাধ্যমে জিইয়ে থাকে অনেক দিন। ১৯৯২ সালে চুনকা কন্যা আইভী দেশে ফিরে শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হন। অল্প সময়ে ব্যবধানে তিনি আবার বিদেশে ফিরে যান। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনের কয়েকদিন আগে দেশে ফিরে নির্বাচন করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এই দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায় ২০১১ সালের ৩০শে অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ৩৭ বছর আগের ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটে। সেইবার প্রতিদ্বন্দ্বী চুনকা কন্যা আইভী ও জোহা পুত্র শামীম ওসমান। তখনও আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন মেলেনি চুনকা পরিবারের, তবে জয় ছিনিয়ে নেন চুনকা কন্যা আইভী। শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেন আইভী। জনপ্রিয়তায় বড় ধরনের হোঁচট খান শামীম ওসমান। ওই নির্বাচন ঘিরে শামীম-আইভি একে অপরকে দোষারোপ ও বাক বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন প্রকাশ্যেই। এরপর থেকে আরো নানান ঘটনায় দুই পরিবারের দু’জনেই পরস্পরকে দোষাদোষী করতে দেখেছে দেশের মানুষ। এমনকি আলোচিত ত্বকী হত্যা ও সাত খুনের ঘটনায়ও দোষাদোষী চলে সমান তালে। একে অপরকে খুন, গুম, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

টেলিভিশনে সরাসরি সমপ্রচারিত টক-শোতেও শামীম ওসমান ও আইভীর মারমুখী বাক্য বিনিময় ও শক্তি প্রদর্শনের চ্যালেঞ্জ করতে দেখা গেছে। এমনকি সিটি করপোরেশনের ময়লা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করা হয়েছে। আইভীকে কোণঠাসা করতে শামীম ওসমানের লোকজন অশ্লীল লেখা ও আইভীর বিকৃতি ছবি দিয়ে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড বানিয়ে সারা শহর ছেয়ে দিয়েছেন। মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ করে বিষোদগার করেছেন। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকে বিগত ৫ বছর।

এবারের সিটি নির্বাচনেও প্রথম থেকেই ওসমান পরিবার চুনকা কন্যা আইভীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি তৃণমূল থেকে প্রার্থী হিসাবে যে তিন জনের নাম কেন্দ্রের কাছে মনোনয়নের জন্য পাঠানো হয়েছিল সেখানেও ছিল না আইভীর নাম। এর পেছনেও ওসমান পরিবার কলকাঠি নেড়েছিল বলে মনে করেন আইভীর ঘনিষ্ঠজনরা। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ আইভীকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়। কেন্দ্রের নেতারা আইভী-শামীমের বিরোধ নিরসনে ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মধ্যস্থতা করেন।

তারপর চলে নানা নাটকীয়তা। আইভীর সমর্থনে সংবাদ সম্মেলন করেন ও আইভিকে উপহার পাঠান শামীম ওসমান। এমনকি নৌকায় ভোট দিয়েছেন তা প্রমাণ করতে তিনি মিডিয়ার সামনে ব্যালট পেপার প্রদর্শন করেন নির্বাচনী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। নির্বাচনে বিজয়ী হন আইভী। প্রথম বাজেটের দিন ওসমান পরিবারের মেজ ছেলে সেলিম ওসমান ঘোষণা দিয়ে আইভীর পাশে বসেন। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেন উপস্থিত সবাই। সেখানে সেলিম ওসমান মেয়রকে নগরের উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মেয়রও তার কাছে সহযোগিতা চান। এবং যৌথ উদ্যোগে নিতাইগঞ্জ থেকে দীর্ঘদিনের অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ হয়।

কিছু দিন ভালোই চলছিল সব কিছু। কিন্তু নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ফুটপাথ হকার মুক্ত করতে বার বার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন মেয়র। কিন্তু সকালে উচ্ছেদ হলে বিকালেই অদৃশ্য ইশারায় হকাররা যে যার মত বসে পড়ে। মোট কথা ইঁদুর বিড়াল খেলা চলতে থাকে হকার উচ্ছেদ নিয়ে। এজন্য মেয়র প্রশাসনের অসহযোগিতাকে দায়ী করেন। একপর্যায়ে ২৫শে ডিসেম্বর থেকে প্রশাসন শহরের ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদ শুরু করে। ২৯শে ডিসেম্বর হকাররা ছুটে যান এমপি শামীম ওসমানের কাছে।

তিনি হকারদের উদ্দেশে বলেন, মেয়র আইভীর নির্দেশে হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান আমার জানা নাই। আপনারা তার কাছে যান। তিনি আপনাদের ব্যবস্থা করবেন। না করলে আমি দেখবো। এরপর ৩১শে ডিসেম্বর হকাররা স্মারকরিপি নিয়ে মেয়র আইভীর কাছে যান। মেয়র তাদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ৫ লাখ নগরবাসীর ভোগান্তি সৃষ্টি করে ফুটপাথে হকার বসতে দিতে পারি না। আমি হকার্স মার্কেট করে দিয়েছি সেখানে বসেন। প্রয়োজনে শুক্রবার, শনিবার শহরের ৪টি পয়েন্টে বসেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসতে দেয়া হবে না। ৩রা জানুয়ারি হকাররা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনিও মেয়রের ভাষায় কথা বলেন এবং বৈধ হকারদের তালিকা তার কাছে জমা দিতে বলেন।

পরে ১৩ই জানুয়ারি হকাররা যান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানের কাছে। তিনিও আইভীর প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে হকারদের বিকল্প ৪টি জায়গায় বসার পরামর্শ দেন। হকাররা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে ১৩ই জানুয়ারি রাতে সেলিম ওসমান হকারদের পক্ষে সুপারিশ করে মেয়রকে চিঠি দেন। ১৪ই জানুয়ারি বিকালে মেয়র চিঠির জবাব দেন। জবাবে মেয়র সেলিম ওসমানের কিছু প্রস্তাব নাকচ করে বাকিগুলোর সঙ্গে আরো যুক্ত করেন। সেলিম ওসমান মেয়রকে চিঠির জবাব দেয়ায় ধন্যবাদ দেন এবং প্রস্তাবিত জায়গায় হকার বসা নিয়ে তিনি বিদেশ থেকে এসে আলোচনা করবেন বলে জানান প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে।

এদিকে ১৪ই জানুয়ারি হকাররা নিয়মিত সমাবেশের একপর্যায়ে বলেন, এবার আমরা গরিবের বন্ধু এমপি শামীম ওসমানের কাছে যাবো। তিনি আমাদের গরিবের নেতা। তিনিই সব সমাধান করবেন। ১৫ই  জানুয়ারি বিকালে চাষাড়া পৌর মার্কেটের সামনে সমাবেশে করেন হকাররা।

সেখানে শামীম ওসমান উপস্থিত হয়ে বলেন,  আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে হকার বসবে। এটা আমার অনুরোধ নয়, নির্দেশ। আমি শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকবো, আপনাদের কেউ মারলে আপনারা মার খাবেন। কিভাবে পাল্টা মাইর দিতে হয় আমার জানা আছে।

শামীম ওসমানের এই বক্তব্যে অবাক হন সিটি মেয়র। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসবে না। হকারদের জন্য প্রয়োজনে আরো বিকল্প জায়গা করে সেখানে পুনর্বাসন করবেন। একথাগুলো ১৬ই জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে মিডিয়ার সামনে বলবেন। সেই মতে তিনি নগরভবন থেকে পায়ে হেঁটে রওনা হন।

এদিকে পূর্ব ঘোষণা মতে দুপুরের পর থেকে হকাররা ফুটপাথে বসার জন্য শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন। শামীম ওসমানের লোকজন শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়। যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। রাজপথে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয় সন্ত্রাসীরা। ওই সংঘর্ষে আইভী নিজেও আহত হন। ঘটনার আগে ও পরে শামীম-আইভী অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন একে অন্যের বিরুদ্ধে।

ওসমান পরিবার:

বিভিন্ন সময়ে চমকপ্রদ অনেক খবরের শিরোনাম হওয়া শামীম ওসমানের পূর্ববর্তী তিন পুরুষের রাজনৈতিক ইতিহাস অনেক বৈচিত্র্যময়। ওসমান পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিষ্ঠাতা খান সাহেব ওসমান আলী ১৯০০ সালে তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। ত্রিশের দশকে তিনি নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর নারায়ণগঞ্জেই স্থায়ী হন। খান সাহেব ওসমান আলীর রাজনৈতিক জীবনের শুরু ১৯৪৬ সালে তৎকালীন ঢাকার নবাব হাবিবুল্লাহর জামানত বাজেয়াপ্ত করে এমএলএ নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

১৯৩৫ সালে খান সাহেব ওসমান আলী নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া রেললাইন সংলগ্ন স্থানে গড়ে তোলেন ঐতিহাসিক বায়তুল আমান। বিভিন্ন সময়ে ওসমান পরিবার দাবি করে যে বঙ্গবন্ধুর পদচারণায় এই বায়তুল আমানে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। এরপর রাজনীতির মাঠে আসেন ওসমান পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম খান সাহেব ওসমান আলীর ছেলে একেএম শামছুজ্জোহা। ৭০-এর প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচনে তিনি পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালে খান সাহেব ওসমান আলী মৃত্যুবরণ করেন। এই পরিবারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১৯৭৩ সালে শামছুজ্জোহা জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ অবদান রাখায় ২০১২ সালে তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়। একেএম শামছুজ্জোহার তিন ছেলে- নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তিনিও তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তার মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত সেলিম ওসমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৯৬ সালের নির্বাচনে জ্জোহা পুত্র শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান সংসদেও তিনি এই আসনের এমপি।

চুনকা পরিবার:

১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আলী আহম্মদ চুনকা। স্বাধীনতার পর তিনি আওয়ামী লীগের পাশাপাশি শ্রমিক রাজনীতি করতেন। দিন দিন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন চুনকা। তিনি নারায়ণগঞ্জের প্রথম নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান। দুবার নারায়ণগঞ্জের পৌর চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।

১৯৮০ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বী ওসমান পরিবারের একেএম শামছুজ্জোহাকে হারিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আলী আহম্মদ চুনকার পাঁচ সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি পেশায় চিকিৎসক। ১৯৮৪ সালে চুনকার মৃত্যুর পর ১৯৮৬ সালে তিনি বৃত্তি নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওদেসা নগরের পিরাগভ মেডিকেল ইন্সটিটিউটে পড়তে যান।

পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আইভী রাজনীতির মাঠে যোগ দেন ১৯৯২ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার মধ্য দিয়ে। ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের পৌর মেয়রের পদে ছিলেন আইভী। এরপর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তিনিই দেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র।

সূত্র: মানবজমিন

মেয়র আইভীকে দেখতে হাসপাতালে ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে দেখতে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে যান। সেখানে কাদের আইভীর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেন।

পরে ওবায়দুল কাদের আইভীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইভী মাইনর স্ট্রোক করেছিল। তার ব্রেনে হ্যামারেজ হয়েছে। তবে এখন ভয়ের কিছু নেই। সে আউট অব ডেঞ্জার।’ তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আরো চার থেকে পাঁচ দিন তারা আইভীকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন।’

এ সময় নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের সঙ্গে আইভীর লোকদের সংঘর্ষের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি ওবায়দুল কাদের। এরআগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তিনতলায় চিকিৎসাধীন সাংবাদিক শরীফউদ্দিন সবুজ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমসহ আহতদের দেখতে গিয়ে মেয়র আইভী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর জরুরি ভিত্তিতে বিকেলে তাকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে আনা হয়।

পরে আইভীকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার সমস্যা চিহ্নিত করতে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন ল্যাবএইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান লেলিন।

প্রসঙ্গত, শহরে হকার উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন মেয়র আইভীর সমর্থকরা। এতে মেয়র আইভী, সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মেয়র আইভী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে আইভীকে হাসপাতালাতে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। আইভীর সমস্যা চিন্হিত করতে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। পরিবর্তন ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ল্যাবএইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান লেলিন।

তিনি জানান, মেয়র আইভী সিসিইউতে আছেন। এখানে অজারভেশনে থাকবেন। নরমাল ইনসিডেন্ট উনার ব্লাড পেসার কম ছিল। আমরা এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। সিটি স্কেন করা হবে, তারপর বলা যাবে সমস্যা কোন জায়গা থেকে আসছে। ব্রেইন নাকি হার্টের সমস্যা হয়েছে- তা বলা যাবে।

তিনি আরও জানান, ‘এর মধ্যে মেয়র আইভীর সমস্যা চিন্হিত করতে পাঁচজন ডাক্তারকে নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’

এর আগে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তিনতলায় চিকিৎসাধীন সাংবাদিক শরীফউদ্দিন সবুজ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমসহ আহতদের দেখতে এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ঢাকা আনা হয়।