বক্তাবলী পরগণা ফরায়েজী জামাত বা আন্দোলন সম্পর্কে কিছু কথা-মাসুম সরকার

384

নিউজ প্রতিদিন ডটনেট : যদিও নাম বদলে এখন ‘জামাতের’ জায়গায় ‘আন্দোলন’ ঢুকানো হয়েছে, কিন্তু ইসলাম প্রচার ও প্রসারে কথিত বক্তাবলী পরগণায় এই সংগঠনের আন্দোলনের কতটুকু অবদান সেটা অবশ্যই মূল্যায়নের সময় এসেছে। উক্ত সংগঠনের সাথে দীর্ঘ ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন, এমন একজনকে আমি ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিন্তু তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি! জিজ্ঞেস করেছিলাম নামাজের জন্য জরুরী সূরা এবং অন্যান্য দোয়া দরুদ গুলো সঠিকভাবে পারেন কিনা। তিনি লাজুক হাসি দিয়ে দুর্বলতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন।

বিগত প্রায় পাঁচ বছর আগের সেই ঘটনায় তাকে ফের জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান(যেটা ফরজ) না রাখেন, তাহলে আপনি স্বাধীনতার পর থেকে এই সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে ব্যক্তিগত ভাবে কতটুকু লাভবান হয়েছেন? অথবা আপনার মতো এমন অনেক মানুষ আছেন আমাদের এলাকায়, যাদের ন্যূনতম আমল করার ব্যক্তিগত সামর্থ্য নেই তথা ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান নেই। তাদেরই বা কি লাভ হয়েছে পীরদের পিছু পিছু ঘুরে??

তিনি নির্বাক হয়ে অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

এবার আসি উক্ত সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে, আমাদের জন্মের অনেক আগে থেকে শুরু করে বিগত ২০/২৫ বছর আগেও যারা এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত মেধা, শ্রম ও সামাজিক ঐক্য মিলিয়ে প্রতাপের সহিত অত্র অঞ্চলে সম্মানের সাথে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন, যদিও ব্যক্তিগত ভাবে অনেকেই কিছু বিতর্কের সাথে জড়িত ছিলেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের সামাজিক ছত্রভঙ্গ অবস্থা, অনৈক্য, মতভেদ, মতবিরোধ, হিংসা বিদ্বেষ, সামাজিক ও বংশগত বিভাজন এই সবই হয়েছে অদূরদর্শিতা ও নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে অথবা নেতৃত্বের সংকীর্ণ মানসিকতার কারণে।

ধর্মীয় ও সামাজিক এই অবক্ষয়ের দায় উক্ত সংগঠনের পীর এবং সাথে জড়িত বা নেতৃত্বে থাকা কেউ একজনও কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। কারণ এখানে থাকা কথিত ময়ালি প্রধানের সাথে অনেকেই আছেন এবং ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান অথবা মেম্বার, পঞ্চায়েত প্রধান, সামাজিক নেতা ইত্যাদি। আর যেখানে নেতৃত্বের অনেকেই নিজ পরিবারের সদস্য বা স্বজনদের অন্যায় অপরাধের বিচার করতে পারেন না, সেখানে ময়ালি প্রধান পদবী সাধারণ মানুষের সাথে উপহাস করা ছাড়া আর কিছু নয়।

পীরদের নেতৃত্বে একটি ধর্মীয় সংগঠন যেটার স্থানীয় নেতা আপনারা, সেখানে ধর্মীয় রীতিনীতির প্রচলন, মানুষের ধর্মীয় শিক্ষা, ধর্ম জানা ও মানার বাধ্যবাধকতা থাকবে না কেন? যেভাবে পীরদের বাৎসরিক মাহফিলের জন্য সমস্ত কাজকর্ম ফেলে এসে মিটিং করা হয়, অর্থ সংগ্রহ করা হয়। ঠিক একই ভাবে সমাজের ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী অথবা সর্বস্তরের সামাজিক দূরবস্থার জন্য আপনারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন না কেন? এলাকার সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনাদের সোচ্চার থাকতে দেখা যায় না কেন? প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনাদের নেতৃত্ব দিতে হবে কিন্তু শিক্ষার মান উন্নয়নে উদাসীনতা কেন?? আমাদের ডিক্রীরচর কেন্দ্রিক এই সংগঠনের সকল কাজকর্ম, অথচ এখানে নদী ভাঙ্গন নিয়ে আপনাদের উদাসীনতা কেন??এই দায় আপনারা কিভাবে এড়াবেন??

নাকি মনে করেছেন, আপনাদের দ্বারা এলাকায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে, সামাজিক ও শিক্ষার মান উন্নয়ন হয়েছে?

যদি তাই মনে করে থাকেন তবে আমি অনুরোধ করবো শহর ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এই সমাজে বসবাস করুন, এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের সন্তানদের পড়ালেখা করতে দিন। তখন হয়তো বুঝতে পারবেন এখানে আপনাদের নেতৃত্ব দেওয়া এলাকার সাধারণ মানুষ কোথায় বসবাস করছে। আর তখন এখানে আপনাদের কতটুকু অবদান সেটাও সরাসরি অনুধাবন করতে পারবেন।

কোন কারখানায় রাতে চুরি হলে কারখানার মালিক কিন্তু সেই রাতে পাহারা দেওয়া দারোয়ানকে ধরবে, কারখানার ম্যানেজারকে নয়। দীর্ঘ সময় ধরে আপনারা যারা নেতৃত্বে ছিলেন, একটু ভেবে দেখুন সেই সময়কার সামাজিক সকল সমস্যার জন্য আপনারাই দায়ী।

আস্তানার পীরেরা যেখানে আসেন, থাকেন, মানুষের বাড়িতে গিয়ে খান এবং অর্থ সংগ্রহ করেন। অবশ্যই সেখানকার মানুষের ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে পীরদের ধারণা থাকতে হবে। সুদ, জুলুম, অন্যের হক নষ্ট করা সহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কাজের অন্ধকারে আমাদের সমাজ ডুবে যাচ্ছে, নবীর (সাঃ) কথিত ওয়ারিশদের কাজ কি শুধু বছরে একবার দুইবার এসে ওয়াজ করে টাকা নিয়ে যাওয়া? যদি তাই হয় তবে এই সমাজ থেকে এসব অন্ধকার দূর করার দায়িত্ব কাদের?? মুখে বললেন রাসুলের উত্তরসূরী কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত পন্থায় কাজ না করলে, সেটা কি রাসূলের অবমাননা নয়?

একটি ধর্মীয় সংগঠন চলবে কিন্তু সেখানে ধর্মীয় রীতিনীতি থাকবে না, এটা যেমন হতাশার, তেমনি এটার সাথে জড়িত মানুষের দৌড়ঝাঁপ চরম হাস্যকর ও সাধারণ মানুষের সাথে ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। পদ পদবীর জন্য লবিং সহ আরো নানান বিষয় নিয়ে অনেক কথা ছিলো, সেসব আরেকদিন বলবো আশাকরি।

এই বিষয়টি নিয়ে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। কারণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের কথার মায়াজালে পড়ে তারা সেই সাধারণ জীবন যাপনই করেন। মাঝখানে কথার ফুলঝুরি নিয়ে এসে কিছু মানুষ আজীবনকার সুবিধাভোগী। মিনতি করি খিচুড়ি নষ্ট হয়ে গেছে সেটা ফেলে দেওয়া যাবে কিন্তু পাত্রটা যেন পরিস্কার করা হয়। খেয়াল রাখতে হবে নষ্ট খিচুড়ি ফেলতে গিয়ে খালি জায়গা পেয়ে সেখানে যেন দূষিত বাতাস ঢুকে না যায়। তবেই সেটাতে রেখে যেকোন হালাল খাবার খাওয়া যাবে।

পরিশেষে বলতে চাই কৃত্রিম দানবীর, শিক্ষানুরাগী, সমাজ সেবক, গরীবের বন্ধু, ধর্মানুরাগীদের হেদায়েত নসিব হোক, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ বেঁচে যাবে। আর ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্ব দিবেন তারা যেন অতীতের মত সাধারণ মানুষকে দিল্লিকা লাড্ডু খাওয়ানোর চিন্তা থেকে বের হয়ে আসেন। শুধু পদ পদবীর জন্য নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতা পরিহার করে তারা যেন যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নেতৃত্ব দেন, এলাকার সচেতন মহল আপনাদের কাছে এটাই কামনা করেন।