নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলায় আরো ৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ

41

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলায় আরো ৪ সাক্ষী আদালতে তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। সোমবার নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন আগামী ১ আগষ্ট।
গতকাল আদালতে যারা সাক্ষ্য প্রদান করেছেন তারা হলেন- র‌্যাব-১১’র সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার বর্তমানে পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোবারক হোসেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে জব্দ তালিকার সাক্ষী কামাল হোসেন, জব্দ তালিকার অপর সাক্ষী আবদুল হেকিম এবং নিহত আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের মোবাইল ফোনটি যার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সেই ইয়াছিন শিপন। ৭ খুনের ঘটনার পর নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের মোবাইল ফোনটি ইয়াছিন শিপনের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়ায় সে সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
আদালতে সাক্ষী দিতে এসে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মোবারক হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ২৭ জুন র‌্যাব-১১’র আদমজীস্থ প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় ৭ খুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চিঠি দিয়ে জানতে চান, র‌্যাব-১১’র তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, উপ অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানা কোন কোন্ মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করতো তা জানাতে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার চিঠি পেয়ে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে জানান, র‌্যাব-১১’র তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ০১৭৭৭৭১১১০০ ও ০১৭১৩৩৭৪৪৯০, মেজর আরিফ হোসেন ০১৭৭৭৭১১১৫৫ এবং লে. কমান্ডার এমএম রানা ০১৭৭৭৭১১১১১ নম্বর ব্যবহার করতেন। এছাড়া ৭ খুনের ঘটনায় জব্দ করা র‌্যাব সদস্যদের ব্যবহৃত ৩টি গাড়ি তিনি ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টম্বর তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে নিজ জিম্মায় নেন। জিম্মায় নেওয়া গাড়ি গুলোর মধ্যে ছিল একটি সাদা রঙের মিতশুবিশি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্টো-চ-৫১-৭৪৫৪), একটি নীল রঙের টয়োটা হাইএস (ঢাকা মেট্টো-চ-৫৩-৬২১৫) এবং একটি সীলভার রঙের টয়োটা মাইক্রোবাস (ঢাকা-মেট্টো-চ-৫৩-৭২৩৬)।
জব্দ তালিকার সাক্ষী ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাটাশুর হাজী ম্যাসের তৃতীয় তলার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৩ মে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ একই তলার বাসিন্দা ইয়াছিন শিপনের কাছ থেকে একটি নকিয়া এন-৭০ মডেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
জব্দ তালিকার অপর সাক্ষী আবদুল হেকিম বলেন, ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল বন্দর উপজেলার শান্তিরচরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের সঙ্গে যে দড়ি এবং বস্তা উদ্ধার হয়েছিল পুলিশ তাকে ওইসব জিনিস জব্দ করার ঘটনায় সাক্ষী করেছে।
সাক্ষী ইয়াছিন শিপন বলেন, তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাটাশুর হাজী ম্যাসের বাসিন্দা। তার মোবাইল ফোন নষ্ট হয়ে গেলে চাচা আবদুর রহিম রতন তাকে একটি মোবাইল সেট এনে দেন। ২০১৪ সালের ৩ মে পুলিশ তার কাছ থেকে সেই মোবাইল সেটটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
ইয়াছিন শিপনের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোনটি ৭ খুনের ঘটনায় নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকারের ছিল। নজরুল ইসলাম ও চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণের পর চন্দন সরকারের গাড়িটি ঢাকার নিকেতনে নিয়ে রেখে আসা হয়। ওই গাড়ির ভেতরে ছিল মোবাইল ফোনটি। গাড়ির গ্লাস ভাঙ্গা থাকায় ইয়াছিন শিপনের চাচা আবদুর রহিম রতন গাড়ি থেকে মোবাইল ফোনটি পান। পরে ফোনটি ভাতিজা শিপনকে দেন। ওই ঘটনায় পুলিশ আবদুর রহিম রতন এবং তার ভাতিজা ইয়াছিন শিপনকে গ্রেফতার করে। বেশ কিছুদিন তারা জেলে থাকার পর জামিন পান। পরে তাদের ৭ খুনের ঘটনায় সাক্ষী করা হয়।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, গতকাল আদালতে ৪ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১ আগষ্ট।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাসহ সাত জনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল ৬ জনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন ১ মে আরো একজনের লাশ একই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহযোগী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় তার জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ৩৫ জনকে আসামি করে গত বছরের ৮ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।