সাংবাদিকের পকেটে ইয়াবা ঢোকাতে গিয়ে জনরোষে পালিয়ে গেল পুলিশ !

107

সাংবাদিকের পকেটে ইয়াবা বড়ি ঢোকাতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা খেলেন পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও তার সহযোগি দুই কনস্টেবল। পরে প্রায় আধা ঘন্টা ক্ষুব্দ জনতার হাতে অবরুদ্ধ থাকার পর ক্ষমা চেয়ে পালিয়ে যায় ওই পুলিশ সদস্যরা।
ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তার লিজা ফিলিং স্টেশনের সামনে। এ ঘটনায় পুলিশের ওই এসআই সহ তিনজনের শাস্তির দাবিতে পুলিশ সদর দপ্তর ও পুলিশ সুপারের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মাজহারুল ইসলাম আলোকিত সময়ের স্থানীয় প্রতিনিধি।
লিখিত অভিযোগে মাজহারুল ইসলাম উল্লেখ করেন, গত সোমবার রাতে প্রেসক্লাব থেকে রিকশাযোগে বাড়ি ফেরার পথে মোগরাপাড়া চৌরাস্তার লিজা ফিলিং স্টেশনের সামনে সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম ও তার সহযোগি দুই কনস্টেবল হারুন মিয়া ও হালিম মিয়া দৈনিক আলোকিত সময় পত্রিকার সোনারগাঁ প্রতিনিধি মাজহারুল ইসলামের পথরোধ করে। এ সময় তার পকেটে ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে সে চিৎকার করে রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে চলে আসে। চিৎকার শুনে মোগরাপাড়া চৌরাস্তার কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরাসহ স্থানীয় জনতা ছুটে আসেন। পরে সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম উপস্থিত জনতাদের বলে যে পুলিশ তার পকেটে ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওই এসআই ও দুই কনস্টেবলের কাছে জানতে চাইলে এসআই মফিজুল ইসলাম জানায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা আছে। পরে উপস্থিত সবাই গ্রেপ্তারী পরোয়ানার কাগজ দেখতে চাইলে এসআই মফিজুল কোন কাগজ দেখাতে পারেনি। এসময় উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে এসআই ও দুই কনস্টেবলকে প্রায় আধাঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে এসআই মফিজুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগি কনস্টেবল ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কেটে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার রাত ১০ টার দিকে লিজা ফিলিং স্টেশনের সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের দেখা পান একজন পথচারীর সঙ্গে জবরদস্তি করে পকেটে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পথচারীর চিৎকার শুনে সামনে এগিয়ে গেলে পুলিশ সদস্যরা জানায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ারা আছে। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা কোন গ্রেপ্তারী পরোয়ারার কাগজ দেখাতে পারেনি। পরে পুলিশ সদস্যরা ক্ষমা চেয়ে কেটে পড়েন।

সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সোনারগাঁয়ের আনন্দবাজারে যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার, সোনারগাঁ ডিগ্রী কলেজের সামনে অটোরিকশা চালককে গলাকেটে হত্যাসহ খুন, গণডাকাতি ও মাদকের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় গত ১৫ মে দৈনিক আমাদের আলোকিত সময় পত্রিকায় “আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, আতঙ্কে সোনারগাঁবাসী” সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এ সংবাদ প্রকাশের পর থেকে সোনারগাঁ থানার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিচ্ছে। এর জের ধরে গত সোমবার রাতে প্রেসক্লাব থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমার পকেটে ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সোনারগাঁ থানার এসআই মফিজুল ইসলাম ও তার সহযোগি দুই কনস্টেবল হারুন মিয়া ও হালিম মিয়া।
জানা যায়, প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে সম্প্রতি একের পর এক খুন, মাদকের ছড়াছড়ি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বড় বড় অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকার কারনে অপরাধের মাত্রা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোনারগাঁয়ে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ অবনতির পেছনে এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা থানা পুলিশকে দায়ী করে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। গত ১০ মে ও ২০ মে থানা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম মাদক বিরোধী সভায় পুলিশের কঠোর সমালোচনা করেন।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।