নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক-পুলিশ সংর্ঘষে পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক।

51

নিউজ প্রতিদিন:নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী ইপিজেডে বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে রপ্তানিমুখি একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা  সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ আহত হয়েছেন অর্ধশত শ্রমিক।

সোমবার সকাল ৭টার দিকে প্রথমে আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় সোয়াদ ফ্যাশন নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশের লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। সেখান থেকে শ্রমিকদের হটিয়ে দেয়া হলে আবার ৮টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে। সেখান থেকে তাদেরকে সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সাথে আবারও সংঘর্ষ হয়।

এতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে এবং একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে ও শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অর্ধশত শ্রমিক।

সেখান থেকে সাত শ্রমিককে আটকের অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা। আহত শ্রমিকদের বিভিন্ন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের এসপি জাহিদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে আছে, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো শ্রমিককে আটক করা হয়নি। তাদেরকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর বকেয়া বেতন, ছুটি ও ফান্ডের টাকা পরিশোধ না করায় এবং শ্রমিকদের না জানিয়ে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেয়া হয়। এতে তারা সড়কে বিক্ষোভ করে।

বিক্ষোভকারী পোশাক শ্রমিকরা জানান, সোয়াদ ফ্যাশনে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। ৫-৬ মাস ধরে ঠিকমতো বেতন পরিশোধ করছে না কারাখানা কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে বোনাস, ছুটি ও রিজার্ভ ফান্ডের টাকাও দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় এসব পোশাক শ্রমিকরা বাসা সংসার চালাতে পারছেন না।

সোয়াদ ফ্যাশনে কর্মরত আরিফ হোসেন ও শ্রমিক সবুজ বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের না জানিয়ে হঠাৎ কারখানা বন্ধ করে দেয়। শুনতে পেরেছি মালিক অন্যত্র কারাখানা বিক্রি করে দিয়েছেন। একই সাথে বিগত চার বছরের ছুটি, ফান্ড ও রিজার্ভের টাকাও আমাদেরকে পরিশোধ করা হয়নি। আমরা বেপজার কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি। তারা বলছে, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না।

সোয়াদ ফ্যাশনের অপর শ্রমিক নুরজাহান বেগম বলেন, আমাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ কারাখানা বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ। আমরা ঘর ভাড়া দেব কোথায় থেকে আর খাবার জোগাড় করব কোথায় থেকে? আমরা এই মুহূর্তে কোথায় চাকরি পাব? আমাদের পরিবার নিয়ে হতাশায় আছি। আমরা আমাদের সব পাওনা চাই। আমাদের ৫ মাসের বেতনের দাবিতে বাধ্য হয়ে আজ রাস্তায় নেমেছি।

পোশাক শ্রমিকরা বলেন, অথচ এর আগে মালিক পক্ষ বেতন নিয়ে গড়িমসি করলে আমরা বেপজার কাছে গেলে এই সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আজ তারা বলছেন তারা কিছুই জানেন না।

এদিকে বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা সকাল থেকে ইপিজেড গেট সংলগ্ন আদমজী-ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখায় সকাল থেকেই সড়কের দুই দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে সড়কটিতে একেবারেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।