নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি’র কার্য্যক্রম এখন মন্ডলপাড়া হাইকমান্ড অফিসমুখি। জেলা ও মহানগরের ত্যাগী নেতাকর্মীরা মন্ডলপাড়ায় হাইকমান্ড খ্যাত প্রভাবশালী বিএনপি নেতা এমএ মজিদের অফিসকেই মূল অফিস হিসেবে গণ্য করছেন। সকল ত্যাগী নেতাকর্মীর মিলন মেলা বসে এখন হাইকমান্ড অফিসে। গতকাল জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও মজলুম জননেতা এড. তৈমূর আলম খন্দকার হাইকমান্ড অফিসে গিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় এড. তৈমূরকে জড়িয়ে ধরে সাদরে বরণ করে নেন হাইকমান্ড নেতা এমএ মজিদ। এদিকে, জেলা ও মহানগর বিএনপি কমিটি নিয়ে আদালতে রিট হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করায় যে কোন সময়ে ভেঙে দেওয়া হতে পারে নব গঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি। তবে সে সেক্ষেত্রে কমিটিতে কিছুটা পুনবিন্যাসের চেষ্টা করা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে বর্তমান যে কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে হুবহু সেই কমিটিই নতুন করে ঘোষণা দিতে। আর তখন মহানগর বিএনপির যে অংশটি তথা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাটি আবারও মহানগরেই যুক্ত করা হবে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সিদ্ধিরগঞ্জকে মহানগর থেকে বাদ দিয়ে জেলাতে অন্তর্ভূক্ত করাটা গঠনতন্ত্র বিরোধী চরম সাংঘর্ষিক এবং এ ব্যাপারে আগামী সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির উপর প্রভাব পড়তে পারে আইনগতভাবে।
এদিকে, এ কমিটির এ অবস্থা নিয়ে আদালতে রিট করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার জনৈক বিএনপি নেতা এ ব্যাপারে আদালতে রিট করতে যাচ্ছেন। বিএনপির নেতাদের মতে, এ জটিলতার অবসান না হলে আগামীতে বিএনপি ছাড়াও সহযোগি সংগঠনও একই পন্থায় কমিটি গঠনের চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে সে জটিলতা প্রকট আকারে রূপ নিতে পারে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারী জেলা বিএনপির সাবেক কমিটির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সেক্রেটারী করে ২৬ সদস্যের জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। একইদিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক তিনবারের এমপি আবুল কালামকে সভাপতি ও বিলুপ্ত নগর বিএনপির সেক্রেটারী এটিএম কামালকে সেক্রেটারী করে ২৩সদস্যের মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা কমিটিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৯টি ওয়ার্ডকে রাখা হয়েছে। যদিও সিটি করপোরেশন এলাকাটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়েই গঠিত। সিদ্ধিরগঞ্জকে মহানগর থেকে বাদ দেওয়ার ফলে মহানগরের সীমাবদ্ধতা এখন বন্দরের কদমরসুল এলাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহর। সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী বন্দর ইউনিয়ন পড়বে জেলা কমিটিতে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনে সেটা মানা হয়নি।
প্রসঙ্গত ২৩ সদস্যের কমিটিতে সহ সভাপতি হলেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, বিদ্রোহী কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম সরদার, বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি হাজী নূরউদ্দিন, বিলুপ্ত নগর কমিটির সহ সভাপতি জাকির হোসেন, আইনজীবী নেতা সরকার হুমায়ূন কবির, ফখরুল ইসলাম মজনু, বেগম আয়েশা আক্তার। যুগ্ম সম্পাদক ২জন হলেন আজহারুল ইসলাম বুলবুল ও মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। সাংগঠনিক সম্পাদক তিনজন হলেন আবদুস সবুর খান সেন্টু, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু। সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন, মনিরুল ইসলাম সজল, মাহাবুবউল্লাহ তপন। কোষাধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনির। দপ্তর সম্পাদক হান্নান সরকার ও প্রচার সম্পাদক সুরুজ্জামান।
এর আগে ২০০৯ সালের অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয় সম্মেলন করে। সেখানে জাহাঙ্গীর আলম সভাপতি ও এটিএম কামাল হন সেক্রেটারী। গত কয়েক বছর ধরেই কমিটি গঠন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। গত ২২ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকেই কমিটি গঠন নিয়ে শুরু হয় তোড়জোড়। আর এ নিয়ে নেতারাও বেশ উদগ্রীব ছিল কমিটি গঠনে। এ অবস্থায় সোমবার বিকেলে ঘোষণা করা হয় কমিটি। কমিটিতে সহ সভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছে গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে।
২৬ সদস্যের কমিটিতে সহ সভাপতি হলেন শাহ আলম, খন্দকার আবু জাফর, জান্নাতুল ফেরদৌস, শাসমসুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, আজহারুল ইসলাম মান্নান, আবদুল হাই রাজু, মনিরুল ইসলাম রবি, ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদ, লুৎফর রহমান। যুগ্ম সম্পাদক লৎফর রহমান খোকা, এম এ আকবর। সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, নজরুল ইসলাম পান্না, মাসুকুল ইসলাম রাজীব। সহ সাংঠনিক সম্পাদক উজ্জল হোসেন, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান ও রুহুল আমিন। সদস্য পদে সাবেক এমপি রেজাউল করীম, গিয়াসউদ্দিন, বদরুজ্জামান খান খসরু, নজরুল ইসলাম আজাদ, আতাউর রহমান আঙ্গুর ও মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়া। এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয় সম্মেলন করে। সেখানে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সভাপতি, কাজী মনিরুজ্জামান সেক্রেটারী ও মুহাম্মদ শাহআলম হন সহ সভাপতি। এর পর ৭ বছর ধরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। তবে গত বছরগুলোতে আন্দোলন সংগ্রামে কোন ভূমিকাই ছিল না কাজী মনির ও শাহআলমের। বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেই চলতে হয়েছে তাঁদেরকে। ( যুগের চিন্তা)