ব্যালট ছিনতাই, কেন্দ্র দখল ও সংঘর্ষের ঘটনায় সারা দেশে অন্তত বিএনপির ১০ জনসহ ১৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জনের খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দ্বিতীয় দফায় ৬৩৯ ইউপিতে ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে ভোট বর্জন করেছেন প্রার্থীরা।
এর মধ্যে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহী ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মতিন তোতা, ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, জামালপুর জেলার কুলকুচা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী, ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউপির বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সিরাজ উদ্দিন ভোট বর্জন করেছেন।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় এক বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী, সীতাকুণ্ড জেলার সোনাইছড়ি, বারবকুণ্ড ও কুমিড়া ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী, শেরপুর জেলার উরপা ইউনিয়নেরর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী, ও কুষ্টিয়া জেলার খলিশা ইউনিয়নের জাসদ সমর্থিত প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।
এ ছাড়া জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম (বিএনপি), মাহমুদপুর ইউপির নুরে আলম তালুকদার রুনু (বিএনপি), নামলা ইউপির নুরুল হক জংগি(বিএনপি) ভোট বর্জন করেছেন।
বিএনপির ১০ জনসহ ১৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জন
ব্যাপক অনিয়ম-সহিংসতা, দুপুরের আগেই নিহত ৩
দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
এবারের ভোটে দুপুরের আগেই সারা দেশে ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট আর ব্যাপকহারে নির্বাচনী সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
এ সব সংঘর্ষে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে শিশু, যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ায় অজ্ঞাত এক হকার ও জামালপুরের শ্যামপুর ইউনিয়নে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
ভোট গ্রহণ চলাকালে সংঘর্ষ ও গুলিতে তারা নিহত হন বলে যুগান্তরের প্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২২ মার্চ প্রথম দফার নির্বাচনে সহিংসতায় সারা দেশে অন্তত ২১ জন নিহত হন। তবে সেদিন ভোট চলাকালে কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেছিল না। সন্ধ্যার পর ভোট গণনা শুরু হলে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে এ সব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রাজধানী ঢাকার অদূর কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির মধ্যে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০ দিকে ইউনিয়নের মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শহিদুল ইসলাম শুভ ঢালিকান্দি গ্রামের আলাল মোল্যার ছেলে। এ ঘটনায় আরও দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আয়নালের নেতৃত্বে ২০/৩০ জন ওই কেন্দ্রে গিয়ে জালভোট দেয়ার চেষ্টা করে।
প্রতিপক্ষ বিএনপির লোকজন তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় উভয়পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে শিশু শহিদুলসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হন।
প্রথমে তাদের স্থানীয় মডার্ন হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শিশু শহিদুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়।
যশোর ব্যুরো প্রধান জানান, যশোর সদর উপজেলার ভাতুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুস সাত্তার বিশে (৭০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
তিনি পেশায় একজন ফেরিওয়ালা, বাড়ি যশোর শহরের খোলাডাঙায়।
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছেন প্রিজাইডিং অফিসার মো. সেলিম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভাতুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ও ১০ থেকে ১৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আবদুস সাত্তার। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এ ছাড়া জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে রফিকুল ইসলাম (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উত্তর বালুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
তবে মেলান্দহ থানার ওসি নাসিমুল ইসলাম জানান, দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কির সময় রফিকুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি ‘হার্ট অ্যাটাকে’ (হৃদরোগে) মারা যান।
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জন কেনেডি জামবিল যুগান্তরকে জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সকালে দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে ঝামেলা হয়। পরে ওই কেন্দ্রে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে উপজেলা সদরে নিয়ে আসার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
এদিকে, নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সারা দেশে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অন্ত ১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ছাড়া সংঘর্ষে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করতে বাধ্য হয়ে নির্বাচন কমিশন। যশোরে জাল ভোট দেয়ার সময় প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ ৩ জনকে আটক করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯ ইউপিতে ২ হাজার ৬৬২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ২১ হাজার ২৫৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৬ হাজার ৪৯৮ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী রয়েছেন।
এর মধ্যে ১৭টি রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে ১ হাজার ৪৯৩ জন ও স্বতন্ত্রভাবে ১ হাজার ১৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অর্থাৎ প্রতি ইউপিতে গড়ে প্রায় দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপের নির্বাচনে বেশিরভাগ স্থানে আওয়ামী লীগ ও একই দলের বিদ্রোহীদের মধ্যে সহিংসতা ঘটেছিল। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশংকা করছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
এ ধাপে ৩৩টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওইসব ইউপিতে সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ভোট হবে।
নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার ৩৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ২৩২ জন ও নারী ভোটার ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার ৭০৭ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬ হাজার ২০৫ ও ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩২ হাজার ২১টি।