বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় প্রাণ,পুষ্টি,তীর,রূপচাঁদা, এসিআই,ড্যানিশ,ফ্রেসসহ ৫২টি খাদ্যপণ্য ভেজাল বা নিম্নমান সম্পন্ন হিসেবে প্রমাণিত হওয়া এসব পণ্য বাজার থেকে তুলে ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
১২ মে রবিবার দুপুরে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলেন তারা।
আদেশের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার এর আগে যেমন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, প্রয়োজনে ভেজালের বিরুদ্ধেও একই রকম ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে ৯ মে বৃহস্পতিবার কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান জনস্বার্থে এ বিষয়ে একটি রিট দায়ের করেন।
আগামী ১০ দিনের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। এ সময় ভেজালের বিরুদ্ধে মাদকের মতো যুদ্ধ ঘোষণা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিএসটিআইয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে খোলা বাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা ক্রয় করে বিএসটিআইয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩১৩টি পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যার মাধ্যে ৫২টি পণ্য পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে।
৫২টি পণ্যের তালিকা:
১. রূপচাঁদা সরিষার তেল
২. তীর সরিষার তেল
৩. পুষ্টি সরিষার তেল
৪. প্রাণ লাচ্ছা সেমাই
৫. প্রাণ হলুদ গুড়া
৬. প্রাণ কারি পাউডার
৭. এসিআই পিউর ধনিয়া গুড়া
৮. এসিআই আয়োডিনযুক্ত লবন
৯. ড্যানিশ হলুদের গুড়া
১০. ড্যানিশ কারী পাউডার
১১. বাঘাবাড়ী স্পেশাল ঘি
১২. ফ্রেশ হলুদ গুঁড়া
১৩. মধুবন লাচ্ছা সেমাই
১৪. মিঠাই লাচ্ছা সেমাই
১৫. ওয়েল ফুড লাচ্ছা সেমাই
১৬. মেসার্স মুধবন (সিলেট) লাচ্ছা সেমাই
১৭. সান চিপস
১৮. সান হলুদ গুঁড়া
১৯. মোল্লা সল্ট আয়োডিনযুক্ত লবন
২০. মধুমতি আয়োডিনযুক্ত লবন
২১. ডুডলি নুডলস
২২. বনলতা ঘি
২৩. গ্রীণ ব্লিচিং (জিবি) সরিষার তেল
২৪. আরা ফুড ড্রিংকিং ওয়াটার
২৫. আল সাফি ড্রিংকিং ওয়াটার
২৬. মিজান ড্রিংকিং ওয়াটার
২৭. মর্ণ ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার
২৮. ডানকান ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার
২৯. আরা আর ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার
৩০. দিঘী ড্রিংকিং ওয়াটার
৩১. শান্ত ফুড সফট ড্রিংক পাউডার
৩২. জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার
৩৩. পিওর হাটহাজারী মরিচ গুঁড়া
৩৪. মিস্টিমেলা লাচ্ছা সেমাই
৩৫. কিং ময়দা
৩৬. রূপসা দই
৩৭. মক্কা চানাচুর
৩৮. মেহেদী বিস্কুট
৩৯. নিশিতা ফুডস এর সুজি
৪০. মঞ্জিলের হলুদ গুঁড়া
৪১. গ্রীনলেন মধু
৪২. কিরন লাচ্ছা সেমাই
৪৩. ডলফিন মরিচের গুঁড়া
৪৪. ডলফিন হলুদের গুঁড়া
৪৫. সূর্য মরিচের গুঁড়া
৪৬. জেদ্দা লাচ্ছা সেমাই
৪৭. অমৃত লাচ্ছা সেমাই
৪৮. দাদা সুপার আয়োডিনযুক্ত লবণ
৪৯. মদীনা/স্টারশীপ আয়োডিনযুক্ত লবণ
৫০. নুর স্পেশাল আয়োডিনযুক্ত লবণ
৫১. তিন তীর আয়োডিনযুক্ত লবণ
৫২. তাজ আয়োডিনযুক্ত লবণ
৬ মে বিএসটিআই কর্তৃক বাজারে এসব পণ্যে ভেজাল ধরা পড়ার পরও জব্দ না করা, সেগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা না নেওয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব ও তিন প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে আইনি নোটিশ পাঠায় ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে জবাব না পাওয়ায় এ রিট দায়ের করা হয়।
রিটে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পণ্য কেনো জব্দ করা হবে না বা বাজার থেকে কেনো প্রত্যাহার করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদন নিয়ে ২ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলন করে। এরপর ৩ ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্তে সংবাদ প্রকাশ হয়।