পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা। গলায় তৃষ্ণা। সামনে শীতল শরবত। দস্তরখানে বাহারি খাবারও হাজির। কিন্তু আপনি খাচ্ছেন না। অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষা করছেন সময়ের, নির্দেশের। আযান পড়লেই মুখে তুলে নেবেন সুন্নতি খাবার খেজুর। ভাঙ্গনে রোজা। আযানের এক মিনিটের আগেও স্পর্শ করেননি আপনি এ খাবার। কেন? কারণ মনে তাঁর (আল্লাহর) প্রতি ভালবাসা। তাঁর নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধা। তাকে সন্তুষ্ট করার জন্যই আপনার এ ত্যাগ। তবে তিনি কি প্রতিদান দেবেন এ ত্যাগের?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সেই বান্দা যে ইফতার সঠিক সময়ে করে। (তিরমিযী, মেশকাত)। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন প্রিয়তম বান্দার। কাকে? যে সঠিক সময়ে ইফতার করে। যে খাবার সামনে নিয়ে বসে থেকেও খায় না। সে অপেক্ষা করে সময়ের। ওলামায়ে কেরাম বলেন, ইফতার রোজাদারদের জন্য একটি আনন্দময় সময়। সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নত এবং সূর্যাস্তের আগে ইফতারি সামনে নিয়ে বসে থাকা মোস্তাহাব।
হাদিসে ইফতার সম্পর্কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ কল্যাণের সঙ্গে থাকবে ততকাল, যতকাল তারা শিগগির ইফতার করবে’ (বোখারি শরীফ)। এ হাদিসে সময় হয়ে যাওয়ার পর ইফতারে বিলম্ব না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যথাসময়ে ইফতার করার জন্য। ইফতার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে অধিকতর প্রিয় তারাই, যারা আগেভাগে ইফতার করে’ (তিরমিজি)।
নবীদেরও স্বভাব ছিল ইফতারে দেরি না করা। (তাবারানী কাবীর, মাজমাউজ যাওয়ায়িদ ২য় খন্ড; ১০৫ পৃ) এ হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, ইফতারের নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরি করা মোটেই উচিত নয়। যদি কেউ ইচ্ছা করে ইফতারে দেরি করে তাহলে সে রাসুলুল্লাহর (স.) নির্দেশ অনুযায়ী কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে এবং আল্লাহর নিকট অপ্রিয় হবে।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রত্যেক নেক আমলের প্রতিদান ১০-৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন। তবে রমযান মাসের রোযার প্রতিদান এর ব্যতিক্রম। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেন, যেহেতু আমার বান্দাবান্দীরা আমাকে না দেখেও আমার ভয়ে আমার হুকুম পালনার্থে এবং আমার সন্তুষ্টি অর্জনার্থে দিনের বেলা পানাহার (বৈধ কামাচার) ত্যাগ করেছে, তাদের প্রবৃত্তি দমন করেছে, সুতরাং আমি নিজ হাতে তাদের এই ত্যাগের বিনিময় দান করবো। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, আমিই এসব রোযাদারের প্রতিদান। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ)