নিজস্ব প্রতিবেদক :বিএনপির রাজনীতিতে জাকির খানের সমর্থকদের সরব উপস্থিতিতে শঙ্কিত রয়েছে তৈমুর পন্থিরা।গত কয়েক মাস ধরে জাকির খানের পক্ষে বিএনপির বিশাল একটি অংশ রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম পন্থি নেতাকর্মীরা অনেকটা চিন্তিত হয়ে পরেছে। তবে জাকির খানকে ঘায়েল করতে তৈমুরের ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকারের হত্যা মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে জাকির খান সমর্থকদের আশঙ্কা। তবে দেশের বাইরে থেকেও জাকির খান বিএনপির রাজনীতিতে বড় ধরনের ফ্যাক্টর তা অনেকাট পরিস্কার। জাকির খান সমর্থকদের দাবি, ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলা নিয়ে নতুন করে রাজনীতি শুরু হয়েছে। এ হত্যা মামলা থেকে বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনকে রেহাই দেয়ার পর মামলার অপর আসামি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকে ফাঁসানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অভিযোগ, এর পেছনে রয়েছে জেলা বিএনপির বিভক্ত রাজনীতির খেলা।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের এক সময়ের দোর্দ- প্রভাবশালী ছাত্রদল নেতা বর্তমানে থাইল্যান্ড প্রবাসী জাকির খান গত
কয়েক মাস ধরে রাজনীতিতে আবারো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে করে জেলা বিএনপি সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার প্রুপের মধ্যে নতুন করে ভীতি দেখা দিয়েছে। তাদের ধারণা, স্থানীয় বিএনপির একটি গ্রুপের সরাসরি সমর্থন থাকায় জাকির খান রাজনীতিতে সক্রিয় হলে নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম গ্রুপ দুর্বল হয়ে যাবে। এ
কারণেই জাকির খানের বিরুদ্ধে লড়তে হাতিয়ার হিসেবে সাব্বির হত্যা মামলাটি বেছে নেয়া হয়েছে।সূত্র জানায়, জাকির খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪টি হত্যাসহ তিন ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। তারপরও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকারের বিপরীতে জাকির খানকে বিএনপির রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলার সাবেক এমপি ও তার অনুসারীরা। এই গ্রুপটি মূলত তৈমুর আলমের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর তৈমুর আলম খন্দকার জেলা বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর স্থানীয় বিএনপির কর্তৃত্ব তার হাতে চলে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাদের অবস্থান সুসংহত করতেই জাকির খানকে বেছে নিয়েছে। ওই গ্রুপের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জেলা ও শহর বিএনপির কমিটিতে স্থান না পাওয়া বিতর্কিত কয়েকজন নেতা। এসব গ্রুপের মাধ্যমে গত কয়েক মাসে জাকির খান গোপনে ঢাকায় বিএনপির হাই কমান্ডের কয়েকজনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে। জানা
গেছে, থাইল্যান্ডে হোটেল ব্যবসার মন্দা থাকায় জাকির খান দেশে ফিরে আসতে চাইছেন। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামমুখী বিএনপির রোডমার্চে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে শোডাউন করে তার কয়েক হাজার লোকজন। ওইদিন তারা জাকির খানের বিশাল ছবি ও ব্যানার বহন কর কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তৈমুর গ্রুপের আশঙ্কা, জাকির খান দেশে ফিরে এলে তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বে আঘাত আসবে। এ কারণে তারা এবার সাব্বির হত্যা মামলাটি দ্রুত শেষ করে জাকির খানকে ঠেকাতে চাইছেন।
১৯৮৯ সালে নাসিম ওসমানের (নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য) হাত ধরে
ছাত্রসমাজে যোগ দিয়ে জাকির খান নারায়ণগঞ্জের ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে নেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সঙ্গে নাসিম ওসমানের বিরোধ বাঁধে। পরে তিনি বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন জাকির খান। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে তার শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ৭ বছরের জেল হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্ত হন। সে সময়ের স্বরাষ্টমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দ্বিতীয় দফায় তার ৫ বছরের জেল হয়। আওয়ামী লীগের ৪ বছর তিনি জেলে থাকেন। ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হন। ২০০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হয় জাকির খান। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মা জেলে থাকে জাকির। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হওয়ার পর এ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে সুকুমবিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ‘গ্রেস’ নামে ৮ তলার একটি থ্রি-স্টার হোটেল কেনেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ও সাবেক সহ- সভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার শহরের মাসদাইর এলাকায়
নিজ বাড়ির অদূরে গুলিতে নিহত হন। হত্যাকান্ডের পর তার বড় ভাই তৈমুর আলম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা)আসনের তৎকালীন বিএনপিদলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিনসহ জাকির খানকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।