২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 262

‘গালিগালাজ’ করা অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়

গালি একটি সামাজিক ব্যাধি। গালি দেয়া পাপের কাজ। গালিগালাজ করা কোনো সুস্থ মানসিকতার পরিচয় নয়। ভালো মানুষ কখনো গালি দেয় না। দিতেই পারে না। মুদ্রাদোষ বা অভ্যাসবশত অনেকেই কথায় কথায় গালি দেয়, অনেকেই হাসি-তামাশা ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দিয়ে বসেÑ এসবের কোনোটিই ঠিক নয়। গালি সম্বন্ধে হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘এমন দুই ব্যক্তি, যারা একে অপরকে গালমন্দ করল, তখন ওই গালির পাপ সে ব্যক্তির ওপরই পতিত হবে, যে প্রথমে গালি দিয়েছেÑ যে পর্যন্ত না নির্যাতিত ব্যক্তি সীমা অতিক্রম করে।’

এই হাদিসের আলোকে বোঝা যায়Ñ গালির সূচনাকারী ব্যক্তি অত্যাচারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি অত্যাচারিত। আর অত্যাচারিত ব্যক্তি ওই পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে যে পরিমাণ সে নির্যাতিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে গালি দ্বারা গালির প্রতিশোধ গ্রহণ না করাই উত্তম। অন্যথায় উত্তম ও অধমের প্রভেদ থাকবে না। এতে বোঝা যায় যে, কোনো মন্দ কাজের জবাব ভালো দ্বারা দেয়াই উত্তম। ইসলামের সৌন্দর্য হলো এমন কথা, কাজ ও বিষয় পরিহার করা যা নিরর্থক। অর্থাৎ যেসব কথা, কাজ ও বিষয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো ফায়দা নেই তা পরিহার করা। গালি দেয়ার ফলে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো উপকার হয় না বরং ক্ষতিই সাধিত হয়।

অতএব আমাদের উচিতÑ গালির অভ্যাস পরিত্যাগ করা। হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি।’ [বুখারি ও মুসলিম] জিহ্বার সংযত ও পরিমিত ব্যবহার সমাজ, পরিবারে ও রাষ্ট্রে শান্তি আসে। জিহ্বার ব্যবহার প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন আদম সন্তান ভোরে ঘুম থেকে উঠে তখন তার অঙ্গসমূহ জিহ্বাকে বিনয়ের সঙ্গে বলে আমাদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আমরা তোমার সঙ্গে জড়িত। সুতরাং তুমি ঠিক থাকলে আমরাও ঠিক থাকব। আর তুমি বাঁকা হলে আমরাও বাঁকা হয়ে পড়ব।’ কিন্তু জিহ্বা যেহেতু মনের মুখপাত্র তাই সব অঙ্গের কার্যকলাপ জিহ্বা দ্বারা প্রকাশ পায়। সে জন্য অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, মন্দ কথা, খারাপ উক্তি ও গালি থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে নীরব থেকেছে সে মুক্তি পেয়েছে।’  [তিরমিজি]।

ফাঁসি বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, জাতিসংঘে গুরুত্ব পাবে না: সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতি ইসলামি নেতাদের মৃত্যুদন্ড- কার্যকর করার বিষয়ে জাতিসংঘের কাছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও অন্যান্য দেশের কাছে নালিশ জানাতে চায় পাকিস্তান।

শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ। সর্বশেষ মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর দেশটি বিবৃতি দিলেও এবার এমন তথ্য জানানো হলো।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতি ইসলামি নেতাদের মৃত্যুদন্ড- কার্যকর করার বিষয়ে জাতিসংঘের কাছে পাকিস্তানের নালিশের বিষয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস।

পাকিস্তান বাংলাদেশি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড- কার্যকরের প্রতিবাদ করে বিষয়টি জাতিসংঘ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায় কিন্তু একটি স্বাধীনদেশের বিপক্ষে আরেকটি দেশের পক্ষ থেকে এই নালিশের কোন কূটনৈতিক গুরুত্ব আছে কিনা এ প্রসঙ্গে নাসিম ফেরদৌস বলেন জাতিসংঘে মানবাধিকার কমিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একদেশ আরেকেেদশর বিরুদ্ধে নালিশ করতে পারে। কিন্তু ফাঁসির বিষয়গুলো বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সুতরাং পাকিস্তানের সারতাজ আজিজ যা বলেছেন, কিভাবে বলেছেন এটা খুবই আশ্চর্য লাগছে। কারণ এই বিষয়টাতে তাদের কারো বিরোধিতা করা হয়নি এবং এটা আমাদের প্রচলিত আইনে আদালতের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তারই বাস্তবায়ন। এখানে নিজামীর প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ ছিল কিন্তু সে চায় নাই। সুতরাং এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় নাই বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমার বিশ্বাস জাতিসংঘ সেই জিনিসটাই তুলে ধরবে এবং এই অভিযোগ গ্রহণ করবে না। তবে বাংলাদেশের এই বিষয়ে আরও অনেক বেশি তৎপর হতে হবে, কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। যাতে পাকিস্তান বিষয়টি একেবারেই উত্থাপন করতে না পারে।

জাতিসংঘের কাছে বিষয়টা কতটা গুরুত্ব পাবে এর উত্তরে নাসিম ফেরদৌস বলেন, জাতিসংঘের কাছে যে কোন দেশ নালিশ করতেই পারে কিন্তু এটা যেহেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় সেহেতু জাতিসংঘের কাছে এটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা না। আশা করছি সেটা গুরুত্ব পাবে না। পাকিস্তান নালিশ করলেই যে, সেটা গ্রহণ করবে এমন না।

এই বিষয়গুলো দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কোন দিকে নিয়ে যেতে পারে এ প্রসঙ্গে নাসিম ফেরদৌস বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক আবার বিবেচনা করে দেখা হবে। এই মুহূর্তে সম্পর্ক কোথায় যাবে বলা মুশকিল। তবে আশা করি পাকিস্তান একটু সংযত হবে। যদি এই ধরনের বক্তব্য দিতেই থাকে তাহলে কী হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।

প্রতিটি রায়ের পরে বা মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর বারবার বিবৃতি দেয়া হচ্ছে এটা কতটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে, এর উত্তরে নাসিম ফেরদৌস বলেন, এটা একেবারেই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। কারণ এটা একেবারেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমার বিশ্বাস পাকিস্তান এটা করছে তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য। এখন তাদের যে অবস্থান ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে তাদের যে প্রতিক্রিয়া হয় সেটা থেকে তারা এটাকে বিকৃত করছে। আমাদের রায় কিন্তু কোন ধর্মের বিরুদ্ধে না বা বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে না। ব্যক্তি বিশেষের উপরে হয়েছে তাদের কর্মকান্ডের কারণে। পাকিস্তানের অবস্থান একেবারে তাদের রাজনৈতিক কারণে।

পাকিস্তানের দাবি, জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝোলানো ১৯৭৪ সালে যে চুক্তি হয়েছিল সেটির লঙ্ঘন। কিন্তু ঐ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের কোন নাগরিকের অপরাধের বিচারের বিরোধীতা করার সুযোগ আছে কিনা এ প্রসঙ্গে নাসিম ফেরদৌস বলেন, আমি পাকিস্তানি নের্তৃবৃন্দকে বলব চুক্তিটি আবার ভাল করে পড়ে দেখতে। সেখানে কোথাও বলা নেই বাংলাদেশি কোন নাগরিকের বিচার করা যাবে না এবং এই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের  বিচার কখনও করা যাবে না। কারণ এ ধরনের কোন কথা আন্তর্জাতিক কোন চুক্তিতে থাকতে পারে না। চুক্তিতে যেটা ছিল তাদের ১৯৫ জন অপরাধীকে ফেরত দেয়া হয়েছে। চুক্তিতে তাদেরও যে বিচার করা যাবে না সেটাও বলা নেই। আমি তাদেরকে চুক্তিটি বারবার পড়ে দেখার জন্য অনুরোধ করব।

বাংলাদেশ ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতিতে যাচ্ছে-জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ

বাংলাদেশের ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। শুক্রবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বিশ্বসংস্থার উদ্বেগমূলক এই দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন মহাসচিব বান কি মুনের ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ। জুলহাস মান্নানসহ ব্লগারদের  হত্যা, বিচারবহিভূত হত্যাকান্ড, সাংবাদিক শফিক রেহমান- শওকত মাহমুদের কারা নির্যাতন, ফাঁসির দন্ড কার্যকর, বাংলাদেশ থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে ওই ব্রিফিংয়ে।

বাংলাদেশের সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি  সম্পাদকীয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের গনতন্ত্র ও বিচারহীন অবস্থার উন্নতিতে জাতিসংঘের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডোজারিক জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগের কথা জানিয়ে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সাংবাদিক শফিক রেহমান, শওকত মাহমুদের কারা নির্যাতনের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দন্ড কার্যকরের জের ধরে  তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয় বলে মত দেন তিনি।

ওবামাকে খুন করা উচিত-ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ‘খুন করা উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক এক পরিচারক। এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা।

সাবেক পরিচারক অ্যান্থনি সেনেকাল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মার্কিন সেনাবাহিনীর উচিত ওবামাকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে শত্রুপক্ষের এজেন্টের ভূমিকা পালনের দায়ে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা।’

অ্যান্থনি সেনেকাল ট্রাম্পের পরিচারক হিসেবে ৩০ বছর কাজ করেছেন। তবে ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবির তাৎক্ষণিকভাবে এই বক্তব্যের দায় প্রত্যাখ্যান করেছে। ট্রাম্প শিবিরের মুখপাত্র হোপ হিকস বলেন, ‘আমরা এই ধরনের মারাত্মক বক্তব্যের নিন্দা জানাই। অ্যান্থনি সেনেকাল ২০০৯ সালের জুন থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে নেই।’

মুসলিমদের প্রতি ওবামার দুর্বলতা আছে বলে সেনেকাল মনে করেন। এ কারণেই ওবামার প্রতি তাঁর তীব্র ক্ষোভ বলে মনে করা হয়। এর আগে সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনেকাল বলেছিলেন, ‘ওবামাকে হোয়াইট হাউসের সামনে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত।’ সেনেকাল হোয়াইট হাউসকে ‘হোয়াইট মস্ক’ (সাদা মসজিদ) হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

আবারও শ্রমিক নিবে মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া সরকার চারটি খাতে বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পরিবহন মন্ত্রী লিও তিয়ং লাই। দেশটির শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরোধিতার মুখে বিদেশি শ্রমিক নেয়া স্থগিত রাখায় শিল্পনির্ভর দেশটি বর্তমানে কর্মী সঙ্কটে ভুগছে।

এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা ম্যানুফ্যাকচারিং, নির্মাণ, প্ল্যান্টেশন ও আসবাব শিল্পে বিদেশি শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে দেশটির  ইংরেজি দৈনিক দা স্টার-এর অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মন্ত্রী লিও তিয়ং লাই’কে উদ্ধৃত করে স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘লোকবলের তীব্র সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে এসব খাতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য কাজ করছে এবং তা শেষ হলে অন্যান্য খাতের ওপর থেকেও ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদিও ‘শিগগিরই’ বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ঘোষণার ইংগিত দিয়েছিলেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন।

আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের সরকারে মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হলেও পরদিনই বিদেশি শ্রমিক নেওয়া স্থগিতের ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার।

গণমাধ্যম নীতিমালা আইন ও কমিশন

শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর  গণমাধ্যম প্রসঙ্গটি যেভাবে আলোচিত হয়েছে সেটি সম্ভবত এর আগে আর কখনও হয়নি। আমার নিজের ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে এই সময়ে আমাদের গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে এবং গণমাধ্যম তার নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা প্রয়োগ করতে পেরেছে। এই সরকারের একটি প্রশংসনীয় কাজ হচ্ছে গণমাধ্যমকে কেন্দ্র করে আইন, নীতিমালা ও কমিশন গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। এরই মাঝে সরকার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সরকার অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে। সম্প্রচার নীতিমালার আলোকে সম্প্রচার আইনের খসড়াও তৈরি করেছে। সর্বশেষ গত ৫ মে প্রেস ইন্সটিটিউটে এই খসড়া আইনটি নিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী উন্মুক্ত আলোচনা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী, তথ্য উপদেষ্টা, বর্ষীয়ান গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ অনেকেই সেই আলোচনায় অংশ নেন।

ব্যারিস্টার তানজিব উল আলমের নেতৃত্বাধীন একটি খসড়া কমিটি যার সাথে আমিও যুক্ত ছিলাম, সেই উপ-কমিটি আইনের খসড়াটি প্রস্তুত করে। এই খসড়া আইনটি প্রস্তুত করার ভিত্তিটি হচ্ছে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা। সেই নীতিমালাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত খসড়া ও চূড়ান্ত একটি বিষয়। অাইনের খসড়া নিয়ে আলোচনায় ছোটখাটো অনেক প্রসঙ্গ থাকলেও দুটি বড় প্রসঙ্গ ছিলো আলোচনার কেন্দ্রে। প্রথম যে প্রসঙ্গটি নিয়ে উত্তেজনাকর আলোচনা হয় সেটি ছিলো লাইসেন্সিংসহ সকল বিষয়ে কমিশন পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পাবে নাকি লাইসেন্সিং-এর ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ রাখা হবে। আমরা যখন আইনের খসড়া তৈরি করি তখন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। লাইসেন্সিংও কমিশনের একক নেতৃত্বে দেয়া হবে বলে সেই খসড়ায় উল্লেখ করা ছিলো। পরে মন্ত্রণালয় একটু সংশোধন করে তাতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয়টি যুক্ত করে। আলোচনায় অংশীজন এর বিরোধিতা করেন। দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি আমি উত্থাপন করি। প্রশ্নটি মৌলিক। সম্প্রচার কমিশন ও সম্প্রচার আইনে অনলাইন গণমাধ্যমকে কেমন করে একীভূত করা হবে। আজকের আলোচনায় আমি প্রধানত দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি নিয়েই আলোচনা করতে চাই। কারণ আমরা কমিশনের স্বাধীনতার প্রশ্নে মন্ত্রণালয়ের কোনো হস্তক্ষেপের পক্ষেই নই। তাই এটি আলোচনার বিষয় নয়। কমিশনকে সকল বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতেই হবে।

২০১৪ সালের আগস্টের ৬ তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করার আগে মন্ত্রিসভা খসড়া অনুমোদনের পর থেকেই জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পরও সেই আলোচনা অব্যাহত ছিলো।  সর্বশেষ গত ২৪ আগস্ট ১৪ ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে আর্টিক্যাল ১৯ সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন মিলে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে যেখান থেকে একটি অভিন্ন গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়নের দাবি ওঠে। আমি দাবিটি উত্থাপন করার পর বিএফইউজে নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান এই দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। এরপর দেশ টিভিতে আমি একই দাবির পুনরুল্লেখ করি। তখনও আলোচকগণ আমার সাথে একমত পোষণ করেন। তারপর বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটে এক সেমিনারে আমি একই বিষয়ে একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করি যাতে সকল গণমাধ্যমের জন্য একটি আইন, একটি নীতিমালা, একটি কমিশন ও একটি ওয়েজবোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

এতোদিন পর গত ৫ মে সেই আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করতে হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে যে পরিবর্তন হয়েছে তা হলো তুমুল আলোচিত সম্প্রচার নীতিমালা গেজেট হয়ে গেছে। এটি নিয়ে এখন আর আলোচনা করে কোন ফায়দা নাই। তার আলোকে আইন হচ্ছে। অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আমরা যখন আইনটির চূড়ান্ত খসড়া করে ফেলি তখন এর সাথে অনলাইন গণমাধ্যমকে যুক্ত করা হয়। বলা হয় যে, সম্প্রচার ও অনলাইন বিষয়ে দুটি আলাদা কমিশন করা যাবে না, একটি কমিশনই করতে হবে। অনলাইন নীতিমালায় আমরা আলাদা কমিশনের কথা বলেছিলাম। এজন্য আলাদা আইনও করতে হতো। কিন্তু সরকার যেহেতু একটি কমিশন করার কথা ভাবছে সেহেতু পুরো ব্যাপারটা তালগোল পাকিয়েছে। সম্ভবত এখন সময় হয়েছে বিষয়টিকে আবার নতুন করে দেখার। এই নিবন্ধে আমি নীতিমালা ও আইনের বিষয়বস্তুর চাইতে সম্প্রচার ও  অনলাইন গণমাধ্যম বিষয় দুটিকে সমন্বিত করার উপায় নিয়ে বেশি আলোচনা করতে চাই।

আমি আমার নিজের অবস্থান এভাবে সুদৃঢ় করে বলতে চাই যে,  প্রকৃতপক্ষে আজকের দিনে সম্প্রচার নীতিমালা বা অনলাইন নীতিমালা কিংবা সংবাদপত্র নীতিমালা নামে, চলচ্চিত্র নীতিমালা ইত্যাদি আলাদা আলাদা কয়েকটি (অন্তত চারটি) নীতিমালা প্রণয়ন করার কোনো যৌক্তিক কারণ নাই। আজকের দিনে সিনেমা হল, কাগজ, টিভি বা অনলাইন পোর্টাল বলতে আলাদা আলাদা কিছু নাই। এখন কাগজের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ থাকে। সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের থাকে ওয়েবসাইট বা অনলাইন স্ট্রিমিং। অনলাইনতো সংবাদপত্র আর সম্প্রচারের সম্মিলিত রূপ। সিনেমা এখন সবচেয়ে বেশি প্রদর্শিত হয় ইউটিউবে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সিনেমা ওরফে ভিডিওর সবচেয়ে বড় প্লাটফরম। অন্যদিকে আইপি টিভি-আইপি রেডিও জাতীয় প্রযুক্তির ফলে মোবাইল ফোন থেকে সিনেমা হল পর্যন্ত ডিজিটাল প্রযুক্তির যে দাপট তাতে কোনটাকে কোনটা থেকে আলাদা করা যাবে তা বলা কঠিন।

এখন ইচ্ছে করলে যে কেউ সরকারের সম্প্রচারের লাইসেন্স ছাড়া ইন্টারনেট প্রটোকলকে ব্যবহার করে রেডিও বা টিভি সম্প্রচার করতে পারেন। বস্তুত এটি বৈধ না অবৈধ সেটিও কোনো আইনে স্পষ্ট করে বলা নাই। আমরা মনে করি অবৈধ না হলেই সেটি বৈধ। অনলাইন গণমাধ্যম এখন এভাবেই চলছে। কোনো নীতিমালা এর জন্য নেই। কোনো আইন বা বিধি বিধান এর জন্য নেই। কোথাও এর উল্লেখও নাই। ফলে কোনো একটি অনলাইন গণমাধ্যম কারও কাছ থেকে কোনো লাইসেন্স না নিয়েই একই সাথে একটি কাগজের পত্রিকা, বেতার ও টেলিভিশনের সম্মিলিত প্রকাশনা ও প্রচারের কাজ করে যেতে পারে।  ভাবতে হবে যে, সেই গণমাধ্যমটির জন্য কোন নীতিমালা প্রযোজ্য হবে?

অন্যদিকে মিডিয়াতো কেবল কাগজ, টেলিভিশন, বেতার বা পোর্টালের মাঝে সীমিত  নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বড় ধরনের মিডিয়ায় পরিণত হয়েছে। ব্লগ নামক ইন্টারনেটভিত্তিক একটি কর্মকাণ্ড অন্য অনেক মাধ্যমের চাইতে শক্তিশালী মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। আমরা যদি গণজাগরণ মঞ্চের উদ্ভব ও বিকাশের দিকে তাকাই তবে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগের ক্ষমতার বিষয়টি আঁচ করতে পারবো। অন্যদিকে বাঁশের কেল্লা, রামুর ঘটনা ইত্যাদি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে তথ্যপ্রযুক্তি কতোটা শক্তিশালী মিডিয়ার জন্ম দিয়ে চলেছে। আমরা হয়তো এখনও আন্দাজই করতে পারছি না যে, ইন্টারনেট দুনিয়াটাকে কতোটা কেমন বদলে দিচ্ছে। ফলে একদিকে মিডিয়া বা গণমাধ্যমের সংজ্ঞা যেমন বদলাতে হবে তেমনি সনাতনী মানসিকতাকেও পাল্টাতে হবে। ডিজিটাল যুগের উপযুক্ত মানসিকতা ছাড়া এই যুগের কিছুই সামনে নেয়া যাবে না।

সেই কারণেই বহুদিন ধরেই আমি একটি জাতীয় গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলে আসছি। আমি আবার বলতে চাই যে, সম্প্রচার ও অনলাইন এই দুটি নীতিমালা প্রণয়ন করার কমিটিতেই আমি যুক্ত-তবুও আমি সম্পূর্ণভাবে অভিন্ন গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়নের পক্ষে।  একই সাথে আমি এটি মনে করি যে, প্রচলিত পত্রিকার ডিক্লারেশন পদ্ধতি, প্রেসের ডিক্লারেশন, টিভি-বেতারের লাইসেন্স, অনলাইন পোর্টালের লাইসেন্স, আইপি টিভি-আইপি রেডিও, কমিউনিটি রেডিও, ব্লগ বা অন্যসব  ডিজিটাল মাধ্যমের অনুমতি দেবার জন্য একটি নীতিমালা ও একটি কর্তৃপক্ষ থাকা উচিত। এখন ডিসি সাহেবরা কেন পত্রিকার ডিক্লারেশন দেবেন, সেটি আমি বুঝি না।

ইংরেজ আমলে ব্রিটিশরা তাদের শাসন পাকাপোক্ত করে প্রকাশ মাধ্যমকে শৃঙ্খলিত করার জন্য যে ব্যবস্থা চালু করেছিলো, সেটি পাকিস্তানও অব্যাহত রাখে। কিন্তু একই ব্যবস্থা এখনও কেন চালু রাখতে হবে সেটি আমি বুঝি না। ডিসিদের সাথে পত্রিকার ডিক্লারেশন কিভাবে যুক্ত সেটি আমি বুঝতে অক্ষম। একই সাথে তারা ছাপাখানার ডিক্লারেশন কেন দেবেন তাও আমি জানি না। এখন কি আমাদের বোঝা উচিত নয় যে, প্রযুক্তি ছাপাখানাকে এখন আর শীশার হরফের ছাঁচে রেখে দেয়নি। বরং এখন আমাকে ছাপাখানার  জন্য  অপেক্ষা করতে হয় না। লেসার প্রিন্টার দিয়ে যখন আমি যা খুশি, যেখানে খুশি ছাপতে পারি তখন ছাপাখানার কেন ডিক্লারেশন লাগবে সেটাও আমি জানি না। ছাপাখানাতো এখন আমার পকেটে। এমনকি আমি ঘরে বসে অফিসের প্রিন্টারে বা দুনিয়ার যে কোনো প্রান্তে প্রিন্ট করার ক্ষমতা রাখি। এখানে ডিসি সাহেবরা কি করতে পারেন?

সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে গণমাধ্যমকে জনস্বার্থ রক্ষা করতে হয়। তারা জনগণের জন্য কাজ করে এবং জনগণের জন্য উপাত্ত সরবরাহ করে। এইসব গণমাধ্যম যা করতে পারে তা সব প্রযুক্তিতেই করতে পারা উচিত। যা করতে পারে না তা কোনো প্রযুক্তিতেই করতে পারা উচিত নয়। এটি এমন নয় যে, আমি কাগজের পত্রিকায় ভুল তথ্য দিতে পারবো না কিন্তু ইন্টারনেটে দিতে পারবো। আবার কাগজের পত্রিকার সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড থাকবে কিন্তু সম্প্রচার বা-অনলাইনের জন্য থাকবে না, সেটি কেন তাও বুঝি না। প্রেস কাউন্সিল কি ভূমিকা পালন করে সেটিও আমি বুঝতে অক্ষম।

আমি মনে করি, সরকার হযবরল যুগের অবসান ঘটিয়ে ডিজিটাল যুগের জন্য একটি গণমাধ্যম নীতিমালা ও কমিশন গড়ে তুলবে এবং তারই আলোকে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সমন্বয় করবে। প্রতিটি প্রযুক্তির জন্য আলাদা ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা থাকতে পারে-এমনকি প্রযুক্তি নির্ভর নির্দেশনাও থাকতে পারে-কিন্তু নীতিমালার জঙ্গল তৈরি করা ঠিক হবেনা। প্রতিটি প্রযুক্তির জন্য আলাদা আলাদা কমিশন গঠন করাও ঠিক হবেনা। একটি কমিশনই সকল বিষয়ে দেখাশোনা করতে পারে। কমিশনের মধ্য থেকে বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য আলাদা আলাদা দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া যেতে পারে। সর্বোপরি সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব ভিন্ন থাকলেও ওয়েজবোর্ড নামক প্রতিষ্ঠানটি আলাদা হতে পারেনা। বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য বেতন কাঠামো আলাদা হবে কিনা সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে-কিন্তু কাউকে ওয়েজবোর্ডের আওতায় রেখে অন্যকে বাইরে রাখা ঠিক হবে না।

সার্বিকভাবে  এই অনুরোধটি আমি করতে চাই যে, সম্প্রচার নীতিমালা ও অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার সাথে কাগজের পত্রিকাগুলোর জন্য একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করে সবগুলোকে সমন্বিত করে সকল গণমাধ্যমের জন্যই একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। সেই নীতিমালার আলোকে একটি গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা হোক এবং ওয়েজবোর্ড সকল গণমাধ্যমের জন্য সম্প্রসারিত করা হোক। প্রেস কাউন্সিলকে গণমাধ্যম কমিশনে একীভূত করা হোক। এজন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করলেই হবে। গণমাধ্যম নীতিমালাকে ঘাটে ঘাটে না ভিড়িযে কাজের কাজটি করার জন্য অনুরোধ করছি। সুখবরটি হচ্ছে যে, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার যে খসড়াটি আমরা তৈরি করেছি সেটিকে সামান্য সংশোধন করেই একটি অভিন্ন গণমাধ্যম নীতিমালায় পরিণত করা যায়। এর ফলে গণমাধ্যম বিষয়ক বিভ্রান্তি খুব সহজেই দূর হতে পারে। বারবার নীতিমালা তৈরি করার ঝামেলার পাশাপাশি নতুন নতুন আইন, নতুন নতুন কমিশন গঠন করার সংকটও কেটে যাবে। যাহোক সরকার সবটা মিলিয়ে এমন একটি ভালো সিদ্ধান্ত নেবে কিনা জানিনা, বরং প্রস্তাবিত খসড়া সম্প্রচার আইনকে গণমাধ্যম নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে দুটি নীতিমালার বিষয়গুলোকে সমন্বিত করতে হলে কি করতে হবে সেটি আলোচনা করা যেতে পরে।

আমি আগেই বলেছি যে প্রচণ্ড আগ্রহ ও দাবি থাকার পরও কাগজ, সম্প্রচার ও অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য একটি অভিন্ন নীতিমালা, অভিন্ন আইন বা অভিন্ন কমিশন হবার সম্ভাবনা প্রায় নেই। এরই মাঝে কাগজের গণমাধ্যমকে আলাদা করেই রাখা হয়েছে। কেউ সেই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন না। কাগজরে গণমাধ্যমের অংশীজন বা সরকার কেউ এটি নিয়ে আলোচনাই করতে চান না। ১৯৭৪ সালের প্রেস এন্ড পাবলিকেশন আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন বা অন্যান্য প্রচলিত আইনের খড়্গ থাকার পরও কেউ চায় না কাগজের গণমাধ্যমের কোনো নীতিমালা হোক। যেহেতু সম্প্রচার নীতিমালার পর অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালাও চূড়ান্ত স্তরে আছে এবং যেহেতু একটি আইন ও একটি কমিশন দিয়ে দুটি খাতকে সমন্বিত করার চেষ্টা করা  হচ্ছে সেহেতু বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

আমরা খসড়া আইনটির আলোকে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারি।
১) এখন সম্প্রচার আইনকে যেভাবে অনলাইন গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে তাতে আইনের নাম সম্প্রচার ও অনলাইন গণমাধ্যম হিসেবে নামকরণ করতে।  কমিশনের নামও তাই করতে হবে। সম্প্রচার আইনের ভেতরে অনলাইনের প্রসঙ্গগুলো যুক্ত করতে হবে এবং আইনের মূল কাঠামো ঠিক রেখে হলেও প্রচুর পরিমার্জনা করতে হবে।

২) খসড়া সম্প্রচার আইনে অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞাই নেই। ফলে আইনে এর একটি সংজ্ঞা যোগ করা দরকার। অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার আলোকে এই সংজ্ঞাটি নির্ধারণ করতে হবে। আমি মনে করি সম্প্রচার ও সম্প্রচার কার্যক্রমসহ আরও বেশ কিছু সংজ্ঞা আছে যা আরও স্পষ্ট করে সহজ বাংলায় প্রকাশ করতে হবে। সংজ্ঞায় ইন্টারনেট, নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল কনটেন্টস, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, আইপি টিভি, ভিডিও স্ট্রিমিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ, ওয়েবসাইট, ই-মেইল ইত্যাদির সংজ্ঞাও থাকতে হবে।

৩) ৪ নং ধারায় কমিশনের নাম পরিবর্তন করতে হবে। এটি কেবলমাত্র সম্প্রচার কমিশন হতে পারে না। কোনোভাবেই সম্প্রচার কমিশন  অনলাইন গণমাধ্যমকে সমন্বয় করতে পারবে না।

৪) ১২ নং ধারায় কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর বিবরণে অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য নির্দেশিকা প্রস্তুত করার কথা থাকতে হবে। খ উপধারায় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা যুক্ত হতে হবে। ঘ) উপধারায় অনলাইন গণমাধ্যম অফিস শব্দ যোগ করতে হবে। এমনি করে যেখানে যেখানে সম্প্রচার নীতিমালা কথাটি আছে।

৫) ১৯ ধারায় লাইসেন্সের বিষয়টিতে কেবলমাত্র আইপি টিভি রয়েছে। অনলাইন গণমাধ্যমের আর কোনো বিষয় এতে নেই। নিউজপোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,ব্লগ বা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম সম্পর্কে খুবই স্পষ্ট করে লাইসেন্সের বিষয়, লাইসেন্স না থাকলে তার শাস্তির বিষয় ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে।

পুরো খসড়াটি পড়ে আমার মনে হয়েছে এক কাজের জন্য প্রণীত আইনকে খুব সহজে অন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত করা যায় না। অনেক চেষ্টা করে খসড়া আইনটিতে অনলাইন গণমাধ্যমের বিষয়গুলোকে যুক্ত করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। কামনা করবো এইসব বিষয়ে সরকার বিদ্যমান অবস্থার পাশাপাশি ডিজিটাল যুগের মিডিয়ার রূপান্তরটি মাথায় রেখে কাজ করবেন। অন্যথায় আমরা জগাখিচুরিতেই থেকে যাব।

নিজ গ্রাম সাঁথিয়ায় নিজামীর দাফন সম্পন্ন

মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকরের পর জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর লাশ কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পাবনার সাঁথিয়ায় তার নিজ গ্রাম মনমথপুরে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার সকাল ৭টা ১৮ মিনিটের দিকে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সকাল ৭টা ১২ মিনিটের দিকে তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়।

বুধবার সকাল ৬টার দিকে তার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স সাঁথিয়ার সীমানায় প্রবেশ করে।

নিজামীর জানাজায় ইমামতি করেন তাঁর ছেলে ব্যারিস্টার নাজীব মোমেন। পুরো দাফনের সময় বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশ মোতায়েন ছিল। এর আগে আজ ভোরে নিজামীর লাশ মনমথপুর গ্রামে পৌঁছলে তা গ্রহণ করেন তাঁর চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন ও ভাতিজা আবদুর রহিম খান।

মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকর করা হয়। মরদেহ দাফন করার জন্য সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। আগে-পিছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশ প্রহরায় মরদেহ ঢাকার শাহাবাগ, মহাখালী, উত্তরা, গাজীপুরের চন্দ্রা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে তার গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়ায় নেওয়া হয়।

মরদেহ ঢাকা থেকে বাড়ি পর্যন্ত নেওয়া নির্বিঘœ করতে পুলিশ ও আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে নেয়। এজন্য ঢাকা থেকে সাঁথিয়া পর্যন্ত মহাসড়কের প্রতি আধা কিলোমিটার পর পর সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।

য়য়য়১১মঙ্গলবার রাত ১১:৩০ মিনিটে কারা ফটক থেকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ দু’টি অ্যাম্বুলেন্স ও আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছয়টি গাড়ি কারা ফটক থেকে চানখার পুল দিয়ে পাবনার মুখে রওনা রওনা হয়। কালো গ্লাসের অ্যাম্বুলেন্সগুলোর কোনটিতে নিজামীর মরদেহ তা জানা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, কারাগার থেকে বেরিয়ে ফার্মগেট, উত্তরা হয়ে বাইপাইল দিয়ে টাঙ্গাইল হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে পাবনার সাঁথিয়ায় যায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স। এ জন্য মহাসড়কের গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ অংশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

ফাঁসি কার্যকরের পরেই সাঁথিয়ায় আনন্দ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা নিজামীকে সাঁথিয়ায় কবর না দেওয়ার দাবি জানান। রাতে সাঁথিয়া পৌর সদরে আনন্দ মিছিল বের করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা। মিছিলটি পৌর সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

কবর খননসহ মরদেহ দাফন সম্পন্ন করে নিজামীর স্বজনরা। এলাকায় এখানো আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছে।

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ গড় পাসের হার ৮৮.২৯

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। এবার পাসের হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ২ হাজার ১৪০ জন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসিতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ২২ ও কারিগরি বোর্ডে ৮৩ দশমিক ১১ শতাংশ।’

গত বছর আট বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৭২, মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ২০ ও কারিগরি বোর্ডে ৮৩ দশমিক ০১ শতাংশ ছিল।

গণভবনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতিতে বুধবার সকাল ১০টার দিকে আটটি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের সার-সংক্ষেপ তুলে দেন।

দুপুর ১টায় সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ফলাফল ঘোষণা করবেন।

গত বছর এসএসসি-সমমানে পাসের হার ছিল ৮৭. ০৪ শতাংশ আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী।

চলতি বছর পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে এসএসসিতে ১৩ লাখ ৪ হাজার ২৭৪ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৫ এবং এসএসসি ভোকেশনালে (কারিগরি) ৯৮ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। যার ৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৩৩ জন ছাত্র এবং ৮ লাখ আট হাজার ৫৯০ জন ছাত্রী।

আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসি, মাদ্রাসা বোর্ড দাখিল এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফল www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

এছাড়া যেকোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করেও ফল পাওয়া যাবে।

এসএসসির ফল পেতে SSC লিখে স্পেস দিয়ে বের্ডের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল পাওয়া  যাবে।

আর মাদ্রাসা বোর্ডের জন্য DAKHIL স্পেস MAD স্পেস ২০১৫ লিখে ১৬২২২ ও কারিগরি বোর্ডের জন্য SSC স্পেস TEC স্পেস ২০১৫ লিখে ১৬২২২ পাঠালে ফল জানা যাবে।

আওয়ামী লীগ চায় বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে,বিএনপি চায় সরকারের পতন,

গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং স্থিতিশীল পরিবেশ চায় জনগণ। গণতান্ত্রিকভাবেই  বিএনপি অহিংস আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাতে চায়। বিএনপির একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে এ কথা বলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি নেতা রিজভী বলেছেন, অবৈধ সরকার উৎখাতে প্রস্তুত জনগণ। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমাদের কাছে এমনও খবর আছে, তারা (বিএনপি) ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে, বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মুসলিম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেছেন, আমার মনে হয়, কেউ যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করলে, সেটা মোটেও অযৌক্তিক হবে না।

ইসরায়েলে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের প্রমাণ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, একটা কেন, আমাদের কাছে এ ধরনের অনেক তথ্য আছে। যেগুলো জোড়া দিলে কালই বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার। আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এ অবৈধ সরকার উৎখাতে প্রস্তুত জনগণ। এজন্য বিএনপির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রয়োজন নেই।

রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের পতন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ সরকারের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই, তারা যে কোনো সময় ঝড়ে পড়বে। এ অবৈধ সরকার উৎখাতে জনগণ প্রস্তুত রয়েছে। বিএনপি জনগণকে নিয়েই রাজনীতি করে। তাই বিদেশে গিয়ে বিএনপি সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের করছে বলে যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।

তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের পতনে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নেমে আসবে। তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সময়ের দাবি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এ সরকারের আমলে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় মৃত্যুদ- থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। নজিরবিহীনভাবে ফাঁসির আসামিকে দ- থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৫ জন মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২২ জনকেই ক্ষমা করেছে অবৈধ ও ভোটারবিহীন বর্তমান সরকার।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা-মোসাদকে ব্যবহার করে বিএনপি বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ বিষয়ে সরকারের কাছে খবর আছে বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার (১০ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাহরিয়ার আলম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া; যিনি একাধিকবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পাকিস্তান তার হয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে ওকালতি করছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। জামায়াতের মুখোশ আগেই উন্মোচিত হয়েছে, যতই দিন যাচ্ছে বিএনপির মুখোশও উন্মোচিত হচ্ছে। তারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে বিব্রত করার জন্য, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু তাই নয়, আমাদের কাছে এমনও খবর আছে, তারা (বিএনপি) ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে, বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মুসলিম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে তারা তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে। এটা যে কতো বড় অপরাধ! আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে এসব সাক্ষ্য প্রমাণকে এক জায়গায় করে বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার আদৌ আছে কিনা। নৈতিক অধিকারের বাইরে গিয়ে বলবো, তাদের কোনো অধিকারই নেই। কারণ, তারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সেই উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে।

কমনওয়েলথ মিনিস্টারিয়াল অ্যাকশন গ্রুপের (সিমেগ) বৈঠকে পাকিস্তান খালেদার পক্ষে ওকালতি করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সে বৈঠকে আমরা উপস্থিত ছিলাম না, অন্যান্য যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের থেকে সত্যতা পেয়েছি। এতে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন না পেয়ে তারা বিদেশিদের ওপর নির্ভর করা শুরু করেছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বর্তমান রাজনীতি প্রমাণ করে বিএনপি-জামায়াতের ওপর বাংলাদেশের মানুষের আস্থা নেই। আর বিএনপির এসব কর্মকা- প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষের ওপর তাদেরও আস্থা বা বিশ্বাস নেই। তাদের ভবিষ্যত এদেশের মানুষের ওপর নির্ভর করছে না। তারা মনে করছে, তাদের ভবিষ্যত নির্ভর করছে সেইসব রাষ্ট্রের ওপর যাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আমার মনে হয়, কেউ যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করলে, সেটা মোটেও অযৌক্তিক হবে না,’ বলেন তিনি।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের প্রমাণ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, একটা কেন, আমাদের কাছে এ ধরনের অনেক তথ্য আছে। যেগুলো জোড়া দিলে কালই বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার। এসব ষড়যন্ত্র রক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবে সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবসময় যোগাযোগ রক্ষার করার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইসরায়েলের বাইরে পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। এসব চক্রান্তে বিএনপি জামায়াত অতীতেও সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও পারবে না।

ইসরায়েল-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, এ কারণে (বিএনপির সঙ্গে বৈঠক) ইসরায়েলের কাছে ধরনা দেওয়ার কিছু নেই। ইসরায়েল প্যালেস্টাইনে মানুষ হত্যা করছে। প্যালেস্টাইনকে দখল করে রেখেছে। সেখানকার মানুষকে নাগরিক অধিকার দিচ্ছে না। আমরা সবসময় একটা স্বাধীন সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র দেখতে চাই। সেখানে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের এনগেজমেন্টে (সম্পর্কে) যাওয়ার চিন্তাই করি না আমরা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তার বড় প্রমাণ মোসাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি করা এবং তাদের সহায়তা চাওয়া। তিনি বলেন, তাই বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বিএনপি পাকিস্তানের আদর্শে লালিত একটি রাজনৈতিক দল। আর বেগম খালেদা জিয়া মূলত এ দেশের মানুষের কোনো নেতা নন, তিনি পাকিস্তানের এজেন্ট।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া পিটিআই রোডস্থ নিজ বাসভবনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান, মেম্বারদের সাথে এক মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন। হানিফ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার জরিপে বর্তমান সরকার দেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষের জনপ্রিয়তায় রয়েছে। এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর জনগণ দ্বারা প্রত্যাখাত দল বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলরা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে নিজেদের ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের পরে পাকিস্তান যে প্রতিক্রিয়া দেয় খালেদা জিয়া ও তার দলের পক্ষ থেকেও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া আসলে বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণ করছেন। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান যেমন মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের গুপ্তচর ছিলেন, ঠিক তেমনি বেগম জিয়াও পাকিস্তানের গুপ্তচর। গতকাল মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছেন। তিনি দেশে বসে পাকিস্তানের সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যস্ত থাকেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে বেগম জিয়া নিয়মিত মাসোহারা পান। অন্য কোনো দেশ হলে খালেদা জিয়া এতদিনে রাজনীতি করার যোগ্যতা হারাতেন। তাই আমি সরকারকে অনুরোধ জানাবো অবিলম্বে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৮৫ অভিবাসী শ্রমিক আটক

মালয়েশিয়ার পেনাংয়ের বিভিন্ন বিপণি বিতানে অভিযান চালিয়ে ৮৫ অভিবাসী শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার ইমিগ্রেশন পুলিশের ৯০ জন সদস্য এই আটক অভিযান পরিচালনা করেন।

আটক হওয়া অভিবাসীদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর। তাঁদের মধ্যে ১১ জন নারী রয়েছেন।

পেনাং ইমিগ্রেশনের সহকারী পরিচালক আবদুল রহমান স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার ডটকমকে বলেন, এসব অভিবাসীর কাছে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করার বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তাঁরা সবাই নির্ধারিত সময়ের পরও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। পেনাং, কেদাহ, পার্লিস ও পেরাকের অভিবাসন কর্মকর্তারা যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেন।

আবদুল রহমান আরো জানান, আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকের সংখ্যা বেশি।

মালয়েশিয়ার নাগরিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় এ অভিযান পরিচালনা করে দেশটির অভিবাসন বিভাগ।

অভিযানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কাজ করা বাবুর্চি ও ওয়েটারদের বিশেষভাবে খোঁজা হয়। মোট ৪০টি ফুড কোর্টে অভিযান চালিয়ে এই ৮৫ জনকে আটক করা হয়।

অধিকতর তদন্তের জন্য এসব খাবারের দোকানের মালিকদেরও তলব করেছে অভিবাসন বিভাগ। দেশটির ১৯৬৩ সালের অভিবাসন আইনের ৩৯-এর বি ধারা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।