২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 69

বিদায় লগ্নে কাঁদলেন এসপি হারুন

নিউজ প্রতিদিন: সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নারায়ণগঞ্জ জেলার বিদায়ী পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছেন বলে কাঁদলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ লাইন্সে বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হারুন বলেন, ‘সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছি। তবে তদন্তে এটি বের হবে।’

উল্লেখ্য,  নারায়ণগঞ্জের এই বিদায়ী পুলিশ সুপারকে (এসপি) বদলি করে পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (টিআর) করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় এসপি হারুনকে। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো সহকর্মীর দিকে কেউ পিস্তল তাক করবে, সেটা তো হতে পারে না। তাই ওই ব্যক্তি কত বড় সম্পদশালী বা শক্তিশালী সেটা আমি দেখিনি। কিন্তু বলা হয়েছে চাঁদা দাবি করেছি। মূল বিষয় হলো মামলা হয়েছে, পুলিশ রেইড দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার (শওকত আজিজের) ছেলেকে আনা হয়েছিল, মা স্বেচ্ছায় এসেছে। এগুলো আপনারা জানেন। তবুও বিদায়বেলায় আমি বললাম।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কথায় নয়, মন থেকে যেটা চেয়েছি সেটাই করেছি। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

নারায়ণগঞ্জে থাকা অবস্থায় মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন জানিয়ে এসপি হারুন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে দুই হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। কিছু ভুল থাকতেই পারে আমাদের। এরপরও যারা ভুল করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন নিয়েছি। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের পক্ষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, এমপি-মন্ত্রী কেউ তদবির করেননি। এটা আমাদের ভালো লেগেছে।’ এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন হারুন। তার কান্না দেখে পুলিশের অন্য কর্মকর্তারাও আপ্লুত হয়ে পড়েন।

প্রসঙ্গত, পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজের স্ত্রী ও পুত্রকে রাজধানীর গুলশান থেকে নারায়ণগঞ্জে তুলে নিয়ে যাওয়ার দুদিনের মাথায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে বদলি করা হয়।

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ব়্যাব-১১ এর সিইও কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নূরে আলম ও সুবাস সাহা।

শওকত চেয়ারম্যানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে চাই- আমজাদ হোসেন বাঁধন

নিউজ প্রতিদিন: পরিছন্ন রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবক আমজাদ হোসেন বাধন।যার নামের সাথে মিশে আছে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা,শামীম ওসমান ও আলহাজ্ব মো.শওকত চেয়ারম্যানের আর্দশ। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের সৈনিক হিসেবে পরিচিত বক্তাবলীর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সফল মেম্বার আমজাদ হোসেন বাঁধন।

২০০১ সালে ফতুল্লা তথা বক্তাবলীর প্রানপুরুষ আলহাজ্ব মো.শওকত আলীর ছায়াতলে এসে আশ্রয় নেন। সেই থেকে আছেন শওকত আলীর সাথে।

একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন নানান কথা। যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

আমজাদ হোসেন বাঁধন শুধু রাজনীতির সাথে জড়িত নন। সমাজসেবায় সমান পারদর্শী। তার কাছে অসহায় নারী- পুরুষ সহযোগিতার জন্য গিয়ে খালী হাতে ফিরে আসেনি কেউ। সাধ্যমত চেষ্টা করেন সহযোগিতার। এ নীতি গ্রহন করেছেন তার রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু মাটিও মানুষের নেতা বক্তাবলীর উন্নয়নের রূপকার সচ্ছ রাজনীতিবিদ আলহাজ্ব মো.শওকত আলীর কাছ থেকে।

১৯৯৯ সালে ছাত্রলীগের সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করেন। সেই থেকে আজো পর্যন্ত আছেন এই দলে। একবার ও দল পাল্টাননি।

রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে পূর্ব ও পশ্চিম চর গড়কূল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি এবং বক্তাবলী ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার হিসেবে জনগনের সেবা করে আসছেন।

তার পিতা মো.সিদ্দিকুর রহমান ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ পরিবার হিসেবে পরিচিত।

আমজাদ হোসেন বাঁধন বলেন,এখন পযর্ন্ত আমার নামে কোন মামলা,জিডি ও অভিযোগ নাই। বক্তাবলীর পলিটিক্যাল বিউটি আলহাজ্ব মো. শওকত চেয়াম্যানের ভালবাসা পেয়েছি এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। তিনি যদি মনে করেন আমি বক্তাবলী ৯নং ওয়ার্ডের সভাপতি পদে যোগ্য, আমাকে দায়িত্ব দেন আমি সেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছি। শওকত চেয়াম্যানের নির্দেশের বাইরে কখনো যাইনি,যাবোনা। কেননা শওকত চেয়ারম্যান আমার আর্দশ ও নেতা।

ফতুল্লার বক্তাবলীতে ইয়াবাসহ গ্রেফতার-১

নিউজ প্রতিদিন: ফতুল্লার বক্তাবলীতে ৩শ’ পিস ইয়াবাসহ মোক্তার হোসেন ওরফে মরা মোক্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে বক্তাবলীর নবীনগর পূর্বপাড়ার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মোক্তার হোসেন নবীনগর পূর্বপাড়ার মৃত নুরু মিয়া ফকিরের ছেলে।

ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজেদ মিয়া জানান, মোক্তার হোসেন ওরফে মরা মোক্তার এলাকার চিহিৃত মাদক বিক্রেতা। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সে মাদক ব্যবসা করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

টাকার উপর ঘুমিয়ে ডিবির এস আই আরিফ

নিউজ প্রতিদিন: নারায়ণগঞ্জে দেখা যায় ডিবির এসআই মো. আরিফ বিপুল পরিমাণ টাকার উপর ঘুমিয়ে ছিলেন। আর এর পরেই কর্মকর্তার এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে উঠেছে। এত টাকা ডিবির এসআই হয়ে কোথায় পাচ্ছে প্রশ্ন জনমনে।

বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে ভাইরাল হওয়া ওই ছবিটি নিয়ে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও এর আশে পাশে এলাকায় ডিউটি করেন এসআই আরিফ সহ এক দল। বুধবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জে তাদের ব্যবহারের একটি গাড়ি রাস্তার পাশে পার্কিং করা ছিল। ওইসময় একাধিক ব্যক্তি গাড়ির ভেতরের কয়েকটি ছবি তোলেন। এতে দেখা যায় এসআই আরিফ বিপুল পরিমাণ টাকার উপর ঘুমিয়ে ছিলেন। এ টাকাগুলোর প্রতিটি বান্ডিল আকারে দেখা যায়। ১০০, ৫০০ সহ ১ হাজার টাকার নোটের বেশ কয়েকটি বান্ডিল ছিল সেখানে। তবে টাকার মোট অংক জানা যায়নি। পাশে ছিল তার ব্যবহৃত সরকারি ওয়ালেস।বুধবার সকাল থেকে ওই ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রায় তিন মাস পূর্বে সাদা রংয়ের গাড়ির ভিতর সিটে টাকা রাখা অবস্থায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরি। আর এমন অবস্থায় কেউ আমার এই ছবিটি তুলেছিল। যা আমার জানার বাইরে ছিল। এই ছবিটি নিয়ে কেউ কেউ অনলাইনে এখন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। যা খুবই দুঃজনক বলে মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়ান্দা শাখার (ডিবি) এস আই আরিফ।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থার আহবায়ক আবুল কালাম সদস্য সচিব বদিউজ্জামান

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ, সাংবাদিক পেশার মানোন্নয়ন ও সাংবাদিক কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে ৪ঠা অক্টোবর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থ্যা (নাজেসাকস)।

এই সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থানে মোঃ আবুল কালাম আজাদকে আহবায়ক ও বদিউজ্জামানকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্য কমিটি গঠন করা হয়। এই আহবায়ক কমিটি সোমবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা দেওয়া হয়।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, এম.এম হাসান, আবুল কাসেম তারা, আব্দুর রশিদ, মোঃ শহীদুল ইসলাম ও মোঃ মোস্তফা কামাল। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন টেলিভিশন, প্রিন্ট ও অনলাইন পোর্টালের সংবাদকর্মী।

সংস্থার আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই সংস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুদূর প্রসারী। সাংবাদ কর্মীদের ঐক্য, সমৃদ্ধি, কল্যাণকর কাজে আত্মনিবেদিত রেখে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাওয়াই এই সংস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

এসপি হারুন প্রত্যাহার

নিউজ প্রতিদিন: পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজের স্ত্রী ও পুত্রকে রাজধানীর গুলশান থেকে নারায়ণগঞ্জে তুলে নিয়ে যাওয়ার দুই দিনের মাথায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে বদলি করা হলো।

এর আগে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, শওকত আজিজের গাড়ি থেকে ২৮টি গুলি, ১ হাজার ২০০টি ইয়াবা বড়ি, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ৪৮ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, শওকত আজিজ ও তাঁর গাড়িচালকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়েছে। গাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও পুত্র ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়েছিল।

শওকত আজিজ আজ রোববার বিকেলে বলেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় হারুন অর রশীদ তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। সে কারণে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজকে তাঁদের গুলশানের বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যান। আর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা ক্লাব থেকে তাঁর গাড়িটি হারুন অর রশীদের লোকজন নিয়ে গিয়ে নাটক সাজান।

গুলশানের বাসায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশের অভিযানের একটি ভিডিও শওকত আজিজ ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। সেটি দিয়েছেন বিভিন্ন মিডিয়াকে। সেখানে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ পুলিশের সদস্যরা শওকত আজিজের স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে হারুন অর রশীদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

হারুনকে বদলি করে পুলিশ সদর দপ্তরের (ট্রেনিং রিজার্ভ) হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ–সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এমপিওভুক্ত হলো চা বিক্রেতা খালেকের স্কুলটি

নিউজ প্রতিদিন: ষাটের দশকে চা বিক্রি করে ৭ হাজার টাকা জমিয়ে ৫২ শতক জমি কেনেন আবদুল খালেক। এরপর ওই জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। গত সপ্তাহে তাঁর স্বপ্নের বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এ খবর পেয়ে খালেক (৯১) আনন্দে আত্মহারা। শনিবার (২ নভেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর গ্রামে ওই বিদ্যালয়ের অবস্থান। বিদ্যালয়ের নাম নলুয়া চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয়।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি নলুয়া চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ছয়জন শিক্ষক ও কর্মচারী দুজন রয়েছেন। এর বাইরে খণ্ডকালীন শিক্ষক আছেন চারজন। শিক্ষার্থী আছে ৪৩৭ জন। বিদ্যালয়ে বর্তমানে জায়গার পরিমাণ ৯৩ দশমিক ৫০ শতক। বিদ্যালয়ের টিনশেডের ঘরটি জরাজীর্ণ। তবে নতুন করে একটি চারতলা ও একটি একতলা ভবন হবে বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আবদুল খালেক লাঠিতে ভর করে শিক্ষক মিলনায়তনে আসছেন। তাঁর পেছনে একদল খুদে শিক্ষার্থী। শিক্ষকেরা তাঁকে এগিয়ে আনেন।

এমপিওভুক্তির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আবদুল খালেক বলেন, ‘এই এলাকা শিক্ষাদীক্ষায় মেঘাচ্ছন্ন ছিল। আমি শিক্ষার আলো ছড়াতে জমি দিয়েছি। কেবল আমি নই, পুরো এলাকাবাসী এমপিওভুক্তিতে খুশি। আমি এই এলাকার ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে পেরেছি। এটাই আমার সার্থকতা।’

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গল্প শোনান আবদুল খালেক। তিনি বলেন, ‘এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষায় নিমজ্জিত। মানুষের মধ্যে কিছুটা কুসংস্কারও রয়েছে। এর মধ্যেও এলাকার হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষিত তরুণ বিএ পাস করেছে। গ্রামের মানুষজন ওদের নাম বিকৃত করে উচ্চারণ করত। বিষয়টি আমার মতো একজন নগণ্য চা–দোকানদারের মনে দাগ কাটে। চা বানাতে গিয়ে একদিন প্রতিজ্ঞা করলাম, গ্রামের মানুষদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। এই ভাবনা থেকেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিই। তাই তো, নিজের কেনা ৫২ শতক জমি বিলিয়ে দিই প্রতিষ্ঠানের জন্য। এখন আমার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শত শত শিক্ষার্থী। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের সামনে বসে চা বানাই, আর শিক্ষার্থীদের হই–হুল্লোড় দেখি। এসব দেখে পরান জুড়িয়ে যায়। মনে শান্তি পাই। মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে দুষ্টুমি করে। আমার স্ত্রী, সন্তান না থাকায় ওদেরই আমার সন্তান এবং নাতি-নাতনির মতো মনে হয়।’

আবদুল খালেক আরও বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল দেখে যাওয়া। সেটি দেখেছি। এখন চাই একদিন এখানে কলেজ হবে।’

নলুয়া চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফখরুদ্দিন বলেন, ‘তিনি (আবদুল খালেক) আমার বাবার সহপাঠী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেন। তাঁর অবদান এলাকাবাসী সারা জীবন মনে রাখবে।’

নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আবদুল খালেক সরলমনা ও উদার মানসিকতার লোক।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মজিদ বলেন, আবদুল খালেকের ত্যাগ এলাকাবাসী মনে রাখবে। তাঁর মতো শিক্ষাবান্ধব লোক প্রতি এলাকায় থাকা দরকার।

জামায়াত শিবির চক্র দলে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবেঃ- এম শওকত আলী

নিউজ প্রতিদিন: ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদল বলেছেন, আমাদের সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে যারা ২০০৮ সালের পর আওয়ামীলীগের প্রবেশ করেছে তারা কিছুতেই পদ পদবী পাবে না। তারা সাধারন সদস্য হয়ে থাকতে পারবে। আর কোন ভাবে যদি কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী ঢুকে যায় তাহলে তাকে বের করে দেয়া হবে। এছাড়াও কমিটি গঠনে যদি কোন হাইব্রিড ব্যক্তিকে অন্তর্ভূক্ত করা হয় এমন কোন প্রমান পাওয়া যায় তাকেও কমিটি থেকে বাদ দেয়া হবে।

শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে বক্তাবলী বাজারে বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, শওকত আলী সাহেবের আমলে বক্তাবলী উপশহরে পরিনত হয়েছে। কিন্তু আমি বলতে চাই বক্তাবলী উপ-শহর নয় শহরে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি এলাকা পাকা রাস্তা হয়েছে। এই এলাকায় মানুষ গাড়ি দিয়ে চলাচল করছে। বক্তাবলীতে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত পৌছে দেয়া হয়েছে। বক্তাবলীর উন্নয়নের জন্য শওকত আলী সব সময় চিন্তা করেন। শওকত আলীর নেতৃত্বে এই বক্তাবলীতে একটি ব্রিজ হবে সেটাই প্রত্যাশা করছি। নারায়ণগঞ্জ হতে বক্তাবলীর সাথে যোগাযোগের সু-ব্যবস্থা করতে শওকত আলী সাহেব শামীম ওসমানকে চাপ সৃষ্টি করে থাকে।

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের সফল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো.শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন,জামায়াত শিবির চক্র যাতে দলে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আফাজউদ্দিন ভূইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক কামরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক জাহিদুল হক খোকন, থানা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল হোসেন প্রধান, জেলা পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ কলেজের সাবেক ভিপি আলমগীর হোসেন, থানা আওয়ামীলীগের সহ-প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি হাকিম চৌধুরী, বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: বাবুল মিয়া, শফিক মাহমুদ, ফতুল্লা থানা যুবলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রেহান শরীফ বিন্দু, থানা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এমএ মান্নান, সহসভাপতি শরীয়তউল্লাহ বাদল, যুগ্ম সম্পাদক নাজির হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাশফীকুর রহমান শিশির, বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ইফতেখারুজ্জামান শাহিন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ সামেদ আলী, থানা আওয়ামীলীগ নেতা মালেক খন্দকার, বক্তাবলী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সদর উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আতাউর রহমান প্রধান, রাসেল চৌধুরী, আব্দুল জলিল গাজী, মনির হোসেন, আমজাদ হোসেন, ওমর ফারুক, আখিল উদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. দেলোয়ারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

প্রাণহীন নারায়ণগঞ্জ যুবলীগ

নিউজ প্রতিদিন: দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের ব্যানারে সব ধরনের কর্মকান্ড বন্ধ রয়েছে। ভুলতে বসেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের কথা। জেলা যুবলীগের ব্যানারে সর্বশেষ কবে, কখন, কোথায় কর্মসূচি পালন করেছে তা অনেকেরই মনে নেই। যে কারণে ভুলতে বসেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের কথা। যারা যুবলীগের পদ দখল করে আছেন, তারা এখন মূল দলের গুরুত্বপূর্ন পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। যে কারণে মূল দলের কর্মকান্ড নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে জেলা যুবলীগের পদ আকড়ে থাকা নেতারা। এদিকে মেয়াদ উর্ত্তীণ জেলা যুবলীগ নতুন করে গঠন করা এখন সময়ের দাবীতে পরিনত হয়েছে। যুবলীগের পদের বাইরে থাকা নিপু,শরীফ,সানি,মান্নানদের কারণেই নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের অস্থিত্ব টিকে রয়েছে।ফলে তাদের হাতেই জেলা যুবলীগের নেতৃত্বে তুলে দেয়ার জোড় দাবি তৃণমূলের।

তবে দীর্ঘদিন ধরে জেলা যুবলীগকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন পদের বাইরে থাকা বেশ কিছু নেতা। যুবলীগের কমিটি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা কিংবা গুঞ্জন থাকলেও এখনি সময়ই নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি গঠন করার এমন দাবি যুবলীগের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের বয়স ১৪ বছর। মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে অনেক আগে। কিন্তু তারপরও জেলা যুবলীগ নতুন করে গঠন নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতারা মূল দলে চলে গেলেও নতুন করে জেলা যুবলীগ গঠনের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। জেলা যুবলীগের সভাপতি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ভিপি বাদল ও হেলাল আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তারপরও তারা যুবলীগ ছাড়ছেন না।

এ নিয়ে যুবলীগের মাঠ পর্যায়ে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। কেউ কেউ প্রকাশ্যে জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সমালোচনা করছেন। কিন্তু তারপরও কোন কাজ হচ্ছে না। জেলা যুবলীগের ব্যানারে কোন কর্মকান্ড নেই। অথচ এক সময় নারায়ণগঞ্জ যুবলীগ রাজপথ প্রকম্পিত করতেন। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখতে জেলা যুবলীগই যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে জেলা যুবলীগের কোন অস্থিত্ব নেই। তবে জেলা যুবলীগের রাজনীতিকে ধরে রেখেছেন পদের বাইরে থাকা বেশ কিছু নেতা। এদের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়াত আলম সানি, ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোঃ শরীফুল হক, জানে আলম বিপ্লব,ফতুল্লা থানা যুবলীগ নেতা আজমত আলী, সাব্বির আহমেদ জুলহাস অন্যতম বেশ কিছু নেতা। যুবলীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের নেতৃত্বে আহসানুল হক নিপু ও শরীফুল হকের হাতে তুলে দেয়া প্রয়োজন।

এই দুই নেতা জেলা আওয়ামী লীগের নানা কর্মকান্ড সফল করতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে অংশ নিয়ে থাকেন। যে কারণে জেলা যুবলীগের নেতৃত্ব পাওয়ার দাবিদার এই দুই নেতা। অন্যদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়াত আলম সানিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের শীর্ষ পদে আনা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন যুবলীগের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনে আবদুল কাদির সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বৈরি সময়ে ওই সম্মেলনে ছিল আওয়ামীলীগের দুই পক্ষের অবস্থান। এছাড়াও সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা জাকিরুল আলম হেলালকে করা হয় সিনিয়র সহ-সভাপতি, আসিফ হোসেন মানুকে সহ-সভাপতি ও শাহ নিজামকে করা হয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ইসকন কতটা ভয়ংকর : গোলাম মওলা রনি

ইসকন নামটি নিয়ে এ মুহূর্তের বাংলাদেশে যে অন্তহীন বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা যে শেষ অবধি কোন পরিণতি ডেকে নিয়ে আসে তা স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ইসকনকে ঘিরে রাজ্যের সন্দেহ, অবিশ্বাস, ভ’য়ভীতি এবং আরো বহু অ’শ্রাব্য গু’জব ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

দেশের সাধারণ মানুষ তার চিরাচরিত স্বভাব ও অভ্যাস অনুযায়ী, কোনো ধরনের বাছবিচার না করেই ইসকনকে উগ্র হিন্দুত্ববাদের একটি ভ’য়ঙ্কর জ’ঙ্গি সংগঠন বিবেচনা করে, যার যা মুখে আসে তাই বলে যাচ্ছে।

তারা মনে করছে, ভারতের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং বিজেপি যুগপৎভাবে তাদের বাংলাদেশ মিশন সম্পন্ন করার জন্য সব রকম ক্ষমতা এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে ইসকনকে বাংলাদেশের মাটি-মানুষ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে বরবাদ করার জন্য সুদূরপ্রসারী পরি’কল্পনা নিয়ে লেলিয়ে দিয়েছে।

ইসকন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের উল্লিখিত সন্দেহ শুরু হয়ে যায় কয়েকজন অনলাইন কর্মীর জোরালো তৎপরতার কারণে, যারা বহুবিধ বাহারি প্রচারে ইসকন সম্পর্কে মানুষের মনে ভ’য় ধরিয়ে দিয়েছে। অন্য দিকে সরকার, আওয়ামী লীগ ও ইসকন কোনো রকম প্রতিক্রিয়া না দেখানোর কারণে জনমনে স’ন্দেহ আরো ঘনীভূত হতে শুরু করেছে।

কারণ জনগণ মনে করছে, ইসকনের পেছনে ভারতের মদদ থাকার দরুন তারা হয়তো সব কিছুকে থোড়াই কেয়ার করছে- অন্য দিকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের ভারতপ্রীতি ও ভারতভীতির কারণে তারা ইসকন নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম নয়।

এহেন পরিস্থিতিতে স’ন্দেহপ্রবণ ভীতু শ্রেণীর লোকেরা সময় সুযোগ পেলেই নিজেদের মধ্যে ইসকন নিয়ে নানাবিধ আলাপ-আলোচনা করে এক দিকে যেমন নিজেদের ভ’য়ভীতি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে- তেমনি সেই ভয় দিয়ে জ্যামিতিক হারে অন্যান্য মানুষকে আক্রান্ত করে ছাড়ছে।

বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা হয়তো কিছুই জানতাম না, যদি না তারা তাদের নিয়মিত কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে একটি প্রথাবিরোধী কর্ম না করে বসত। তারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করে এবং ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে দিয়ে তাদের হরিনামের কীর্তন গাওয়ায়।

শিশুরা তাদের সহজাত কৌতূহল এবং আন্তরিকতা নিয়ে সমস্বরে জয় হরি বা জয় হরিবল ইত্যাদি শব্দের সমাহারে কীর্তন গাইতে গাইতে ইসকনের দেয়া খাবার খেতে থাকে। এই দৃশ্য যখন ফেসবুকের মাধ্যমে সারা দেশে চাউর হয়ে যায়, তখন ধর্মপ্রাণ মুসলমান জনসাধারণ, ইসলামী দলগুলোর নেতৃবৃন্দ এবং ইসলামপন্থী সাংবাদিক ছাড়াও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা দারুণভাবে ক্ষেপে যান।

তারা মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কোমলমতি বালক-বালিকা ও শিশুদেরকে পূজার প্রসাদ বলে কথিত খাদ্য বিতরণ করে শিশুদের মুখে হরিবল বাণী উচ্চারণ করিয়ে তাদেরকে হয়তো হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করছেন বলে সন্দেহ করতে থাকেন।

ইসকন নিয়ে সারা দেশে বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন ইসকনের ধর্মগুরু তথা নেতৃবৃন্দের সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের কিছু ছবি, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবী এবং ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক বলে চিহ্নিত লোকজনের অন্তরঙ্গ ছবিগুলো ফেসবুকে চলে আসে।

সেসব ছবিতে দেখা যায়, ইসকনের ধর্মগুরুরা নিজেদের মন্দিরে বাংলাদেশের উল্লিখিত লোকজনকে সংবর্ধনা দিচ্ছে- অথবা তারা ওই সব লোকের কর্মস্থলে গিয়ে দেখাসাক্ষাৎ করেছে। ছবিতে ইসকন নেতাদের অঙ্গভঙ্গি, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা এবং ফল-ফুলের সমাহার দেখে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক-সমঝোতা বা বোঝাপড়া রয়েছে। এসব ছবি ব্যাপক হারে প্রচার হওয়ার পর ইসকন সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা বাড়তে থাকে।

ইসকন নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে আমি শত শত মানুষের অনুরোধ পেয়েছি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত লেখার জন্য। একটি লেখা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি এ সংগঠনটি সম্পর্কে যা জানতে পারি তা রীতিমতো কৌতূহলোদ্দীপক। তারা এ সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে কিভাবে কোমলমতি শিশু সন্তানদের টার্গেট করে নিজেদের মন্ত্র ওই সব শিশুর মন-মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয় এবং নিজেদের ধর্মে দীক্ষিত করে তা রীতিমত বিস্ময়কর।

সংগঠনটির নেতাদের শিশু নির্যাতন, শিশুদেরকে যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি কুকর্মের কারণে তাদেরকে দেশ-বিদেশে বহু মামলা-মোকদ্দমা মোকাবেলা করতে হয়েছে; যার মধ্যে কয়েকটি মামলায় তাদের সাজাও হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তারা যে হিন্দুধর্মের প্রচার-প্রসারের জন্য কাজ করছে; সেই হিন্দুধর্মের প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব ধর্মগুরু-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং হিন্দু রাষ্ট্রশক্তি তাদেরকে দু’চোখে দেখতে পারে না।

আপনি যদি ইসকন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তবে প্রথমেই ইসকন শব্দের পুরো রূপটি জানতে হবে। ইংরেজিতে আইএসকেসিওএন (ISKCON) শব্দের পুরো রূপটি হলো ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কন্সাসনেস, যা পশ্চিমা দুনিয়ায় হরে কৃষ্ণ মুভমেন্ট বা হরে কৃষ্ণ আন্দোলন নামে পরিচিত।

১৯৬৬ সালে মার্কিন মুল্লুকে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অভয় করনারাভিন্দ নামের একজন হিন্দু ধর্মযাজক এটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সংগঠনটিকে ব্যাপকভাবে পরিচিত করে তোলেন। ষাটের দশকের হতাশাগ্রস্ত পশ্চিমা সমাজে যোগব্যায়াম এবং ধ্যান করার প্রাচীন ভারতীয় রীতিকে তিনি হরে কৃষ্ণ কীর্তনের সুরে অনেকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলেন।

ভারতীয় কীর্তনের ধ্রুপদী সুরের সাথে তিনি পশ্চিমা ঘরানার জনপ্রিয় সঙ্গীতের তাল-লয়-সুর সংযুক্ত করে তার হরে কৃষ্ণ কীর্তনগুলোকে দারুণ শ্রুতিমধুর করে তোলেন। ষাটের দশকের পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গীতজগতের কিংবদন্তি জর্জ হ্যারিসন এবং জন লেননের সাহায্য নিয়ে অভয় করনারাভিন্দ কয়েকটি জনপ্রিয় কীর্তনের অ্যালবাম তৈরি করেন।

বিটল-সখ্যাত জর্জ হ্যারিসনের সুপারহিট অ্যালবাম মাই সুইট লর্ড এবং জন লেননের গিভ পিস অ্যা চান্স অ্যালবামের সাথে হরে কৃষ্ণ লিরিক্স যোগ করার ফলে ইসকন এবং হরে কৃষ্ণ ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের মুখে মুখে ভাসতে থাকে।

মার্কিন পপ তারকাদের কল্যাণে আরো অনেক নামীদামি তারকা, প্রভাবশালী লোকজন এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ইসকন সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফলে অভয় করনারাভিন্দকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

যে অভয় একদিন শূন্য হাতে মার্কিন মুল্লুকের নিউ ইয়র্ক শহরে পা রেখেছিলেন, সেই তিনি ধর্মের নামে এত বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন; যার আর্থিক মূল্য দেখে দুনিয়া কাঁপানো সফল ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত হতবাক হয়ে পড়লেন। বর্তমানে ইসকন নামের প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন মন্দির, ধ্যানগৃহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তীর্থকেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দুনিয়ার শত শত দেশের কয়েক হাজার স্থানে নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে।

আপনি যদি অতি সরলভাবে ইসকনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করেন, তবে দেখতে পাবেন- তারা সনাতন ধর্মের অনুসারী। তারা হরে কৃষ্ণ নামের গুণকীর্তন করে এবং হিন্দু ধর্মের বিধানাবলির আলোকে জীবন পরিচালনা করে। তারা তাদের মন্দিরে কীর্তন-ভজন প্রভৃতি গান গেয়ে নিজেদের ধর্মাচার চর্চা করে। তাদের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অনাথ আশ্রমে দরিদ্র ও অসহায় ছেলেদেরকে আশ্রয় দেয়া হয় এবং শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হয়।

ইসকন সম্পর্কে উল্লিখিত দু’টি সাড়া জাগানো মামলার বাইরে সত্তর এবং আশির দশকে শিশু নির্যাতন এবং শিশু বলাৎকারের একাধিক মামলা দায়ের করা হয়, যেগুলোর মধ্যে টারলি কেস (Turley Case) সারা দুনিয়ায় হইচই ফেলে দেয়। ২০০৪ সালে এই মামলা নিষ্পত্তি হয়। বাদির পক্ষে আদালতের রায় ছিল যে, ইসকনকে ৯০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশী ঢাকায় প্রায় সাত হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাদিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ইসকন এ অবস্থায় নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে এবং দেড় কোটি ডলার, অর্থাৎ ১২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করে রক্ষা পায়। ইসকনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ভারতবর্ষের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। হিন্দুরা মনে করছে যে, ইসকন বিকৃত ধর্মমত প্রচার করে হিন্দুইজমের সর্বনাশ করছে। ইসকন প্রচার করছে, তাদের ধর্মে বর্ণিত ৩৩ কোটি দেবতার মধ্যে প্রধান দেবতা হলো কৃষ্ণ।

তাদের মতে কৃষ্ণ হলো আদি ও একক দেবতা। কৃষ্ণ থেকেই বাকি দেবতাদের সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীতে মানবরূপে যত দেবতা এসেছেন, তারা সবাই কৃষ্ণের অবতার বা কৃষ্ণজাত সৃষ্টি। ইসকনের হরে কৃষ্ণ মতবাদের সাথে কোনো হিন্দু সংগঠনই একমত নয়। হিন্দুরা সেই অনাদিকাল থেকে শিবকেই প্রধান দেবতা মেনে আসছে। সুতরাং হরে কৃষ্ণ মতবাদ পুরো হিন্দুইজমের ওপরই আঘাত হেনেছে বলে হিন্দুরা অভিযোগ করছে।

সারা দুনিয়ায় যারা ইসকন পরিচালনা করছেন, তারা সব সময় দেশী-বিদেশী রাষ্ট্রশক্তি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যম এবং পৃথিবীর প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তিদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন, যা পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মীয় সংগঠন কল্পনাও করতে পারে না।

ফলে পৃথিবীব্যাপী ইসকনের সদস্য সংখ্যা যেমন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, তেমনি সংগঠন হিসেবে ইসকনের প্রভাব-প্রতিপত্তি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। ইসকন গোঁড়া হিন্দুত্ববাদ পরিহার করে তাদের হরে কৃষ্ণ আন্দোলনকে এতটাই উদারনৈতিক করেছে যে, পৃথিবীর যেকোনো মতবাদের যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইসকনের সদস্য হিসেবে যোগদান করতে পারে।

ইসকন তাদের এই মতবাদকে অর্থবিত্ত, ক্ষমতা, সঙ্গীত-বিনোদন এবং খাদ্য-পানীয় দিয়ে অত্যন্ত আকর্ষণীয় পণ্যরূপে মাশরেক থেকে মাগরেব এবং আমেরিকা থেকে জাগরেব পর্যন্ত জনগোষ্ঠীর দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে একটি মাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে, আর তা হলো- সবাই সমস্বরে গেয়ে উঠুক! হরে কৃষ্ণ! হরিবল।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য, গোলাম মাওলা রনি।