ফতুল্লার বক্তাবলী পরগনা অর্থাৎ বক্তাবলী ও আলীরটেক ইউনিয়নে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এ পরগনার বক্তাবলি ও আলীরটেক ইউনিয়ন থেকে সরাসরি সংশগ্রহন করেন প্রায় ৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
আলীরটেক ইউনিয়ন থেকে শেখ রাসেল উচ্চবিদ্যালয়, মোক্তারকান্দি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় এবং বক্তাবলি ইউনিয়ন থেকে কানাইনগর ছোবহানিয়া উচ্চবিদ্যালয়, বক্তাবলি ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা, নাজমুন্নেসা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও পূর্ব চরগড়কুল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। এবারের ফল বিপর্যয় পূর্বের অন্য বছরের তুলনায় সবচেয়ে খারাপ হয়েছে বলে অভিযোগ উল্লেখিত পরগনাবাসীর।
বক্তাবলী পরগনার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে প্রায় অর্ধশত বছরের ইতিহাস। তার মধ্যে কানাইনগর ছোবহানিয়া উচ্চবিদ্যালয় অন্যতম, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৬ সালে জেলায় শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ হিসেবে রেকর্ড গড়েছিল। কিন্তু অর্ধ শত বছরের গর্বিত ইতিহাস এ বছর ম্লান হয়েছে এই বিদ্যালয়ের।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কানাইনগর ছোবাহানিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে অংশ গ্রহন করেন ২১৫ জন শিক্ষার্থী। পাস করেছে ১৬২ জন,অকৃতকার্য হয়েছে ৫৩ জন। বিদ্যালয়টির মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান কোন বিভাগ থেকেই জিপিএ-৫ আসেনি। মাত্র ৮টি এ-গ্রেড, ২৮টি এ, ৫৮টি বি গ্রেড, ৬৮জন সি গ্রেড, ৫৩টি এফ গ্রেডে উত্তীর্ন হয়েছে।
বক্তাবলি ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা। এই প্রতিষ্ঠানটিও অত্র এলাকার ঐতিহ্যবাহি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে এই বছর এই বিদ্যালয়টিতেও ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। বিদ্যালয়টিতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৫১ জন। পাশ করেছে ৪৯ জন, অকৃতকার্য হয়েছে ২ জন, এ গ্রেড ১৭ টি,এ-২৫ টি, বি গ্রেড ৪টি, সি গ্রেড ৩ টি, এফ গ্রেড ২ টি।
নাজমুন্নেচ্ছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে মোট ৩৮ জন শিক্ষার্থী। কৃতকার্য হয়েছে ১৯ জন কৃতকার্য হয়েছে ১৯ জন। বিদ্যালয়টিতে এ-৩টি,বি গ্রেড-৭টি,সি গ্রেড-৯টি,এফ গ্রেড-১৯টি। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ+ বা এ গ্রেড আসেনি।
বক্তাবলী পরগনার আরেকটি স্কুল চরগড়কুল উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টি থেকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে ৭৩ জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে ৬২ জন। এর মধ্যে মানবিক,ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কোনটিতে এ+আসেনি।
আলীর টেক ইউনিয়নের শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয় হতে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে ১২৪ জন। কৃতকার্য হয়েছে ৫৭ জন। এ বিদ্যালয়ে ১ গ্রেড ৪টি,এ-১১টি,বি গ্রেড ১৯ টি,ডি গ্রেড ৪টি। এই বিদ্যালয়টি থেকে কোন বিভাগ থেকে এ+ আসেনি।
আলীরটেক ইউনিয়নের আরো একটি স্কুল হচ্ছে মুক্তার কান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। ৩৪৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছে ২৭৩ জন। বিদ্যালয়টিতে এ+ ১টি,এ গ্রেড-৪২টি,এ-৭৭টি,বি গ্রেড-৮৫ টি, সি গ্রেড ৬৭ টি,ডি গ্রেড ১টি । বক্তাবলী ও আলীর টেক ইউনিয়নে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মোটামোটি ভাল রেজাল্ট করেছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
অত্র এলাকার সচেতন মহল মনে করেন এই ফল বিপর্যয়ের কারন হিসেবে অভিবাকদের অসচেতনা। অপরদিকে বিভিন্ন স্কুলগুলোতে ম্যানেজিং কমিটি না থাকার কারনে শিক্ষকদের গ্রুপিং,অনেক প্রতিষ্ঠানে কোচিং বানিজ্যে জড়িয়ে পরার কারনে শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগ দিতে পারছেনা বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে বহিরাগত শিক্ষকরা পাঠ দান করে থাকেন। কিন্তু তাদের ছেলে-মেয়েরা আর এই প্রতিষ্ঠান গুলোতে পড়ালেখা করেনা তাই শিক্ষার মানোন্নয়নের ব্যাপারে তাদের দায় আছে বলে তারা মনে করে না।
এছাড়াও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদেরও শিক্ষার মানোন্নয়নে তেমন কোন ভুমিকা না থাকার কারও ফল বিপর্যয় বলে মনে করে বক্তাবলী ও আলীরটেক ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। সূত্র:(যুগের চিন্তা)