নিউজ প্রতিদিন ডটনেট : গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষীদের স্বাক্ষী হাজিরের তারিখের একদিন আগে থানায় নিয়ে সারারাত আটক রেখে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সোনারগাঁওয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অবৈধভাবে জমি দখল করতে গিয়ে যুবলীগ নেতাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে থানায় নিয়ে সারারাত নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আইনজীবি খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট রবিবার (২ জুন) রাতে এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার চিলারবাগ এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আনিসুর রহমান আলমগীর বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ নারায়গঞ্জ এ সোনারগাঁও থানার তৎকালীণ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদ আলম ও সেকেন্ড অফিসার সাধন বসাকের বিরুদ্ধে একটি প্রতিষ্ঠানকে জোর করে অন্যের জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টায় ওসি মোর্শেদ ও সাধন বসাককে আসামী করে আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আগামীকাল ৩ জুন আদালতে স্বাক্ষীদের হাজির সাক্ষ দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ আছে।
এদিকে, পুলিশী হয়রানী ও হুমকি থেকে বাচঁতে গত ১৯ মে বাদী বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান ও আসামী হয়েও সাবেক ওসি মোরশেদ আলম আদালতের প্রথম বেঞ্চে বসে থাকার বিষয় বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করেন। আদালত সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সোনারগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
এদিকে, আদালতের সে নির্দেশকে পুঁজি করে সোনারগাঁও থানা পুলিশ স্বাক্ষী হাজিরের তারিখের একদিন আগে ২ জুন রবিবার বিকাল ৫টার দিকে সোনারগাঁও থানার এসআই ইমরান বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর, স্বাক্ষী সৈয়দ বশিউর রহমান শামীম ও স্বাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপন’কে থানায় ডেকে নিয়ে সারারাত আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করে।
স্বাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপনের সাথে কথা হলে তিনি জানায়, আগামীকাল আমাদের মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ। আমরা আদালতে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু ওসি সাহেব মামলার বিষয়ে আমাদের সাথে কথা বলবেন এমন কথা বলে বিকালে থানায় এনে আমাদের আটকে রেখেছেন। এখানে রাতে না খেয়ে, আমি (স্বপন) ডায়বেটিকের রোগী। প্রতিদিন দুই বেলা ইনস্যুলিন নিতে হয়। অথচ থানায় সারারাত মশার কামড় খাইয়ে আর ক্ষুধার্ত রেখে পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানার এসআই ইমরান সোনারগাঁও বলেন, পুলিশ আদালতের নির্দেশ পালন করেছে মাত্র। এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, বিগত দিনে তারা স্বাক্ষী না দেওয়ায় মাননীয় আদালত পরোয়ানা জারি করেছেন। আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট জানায়, পুলিশী হয়রানী ও হুমকি থেকে বাচঁতে গত মে মাসের ১৯ তারিখ বাদী বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান ও আসামী হয়েও সাবেক ওসি মোরশেদ আলম আদালতের প্রথম বেঞ্চে বসে থাকার বিষয় বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করেন। আদালত সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সোনারগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। তারপরও সোনারগাঁও থানা পুলিশ সাক্ষীদের গ্রেফতার করে সারারাত আটক রেখে যে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করেছে তা শুধু আইন পরিপন্থী নয়, একটি অপরাধ। আমরা পুরো বিষয় নিয়ে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাবো।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার চিলারবাগ এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আনিসুর রহমান আলমগীর বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ নারায়গঞ্জ আদালতে সোনারগাঁও থানার তৎকালীণ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোর্শেদ আলম এবং একই থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সাধন বসাকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন।
এরআগে অভিযোগে বাদী জানান, সোনারগাঁও উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় তাঁর কেনা প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি অবৈধ দখলে নিতে আল মোস্তফা কোম্পানীর পক্ষ হয়ে পুলিশ তাদের থানায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ সময় ওসি ও এসআই তাদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে নির্যাতন করেন এবং জমিটি ছেড়ে না দিলে বন্দুকযুদ্ধে হত্যার হুমকি দেন। আর বন্দুকযুদ্ধ থেকে বাঁচাতে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ওসি। পুলিশের পুলিশের কথায় রাজি না হলে সারারাত থানায় আটকে রেখে নির্যাতন করে। পরের দিন উপজেলা যুবলীগ এক নেতার জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেন।