মেরাজের রাতে রাসুল (সা.) কী উপহার পেয়েছিলেন?

98

ঐতিহাসিকদের ভাষ্য মতেÑ ৬২০ খ্রিস্টাব্দে রজব মাসের ২৬ তারিখ রাতে হজরত রাসুলুল্লাহ সা. আল্লাহ তায়ালার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাবা শরিফ থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস গমন করেন। সেখানে উপস্থিত নবীদের নামাজের ইমামতি করে তিনি ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন এবং সিদরাতুল মুনতাহায় উপস্থিত হন। সেখান থেকে বিশেষ বাহনে চড়ে আরশে আজিমে গিয়ে আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ ও সান্নিধ্য লাভ করেন। এ ঘটনাকে মেরাজ বলা হয়। মেরাজে হজরত রাসুলুল্লাহ সা. জান্নাত, জাহান্নামসহ সৃষ্টিজগতের সবকিছুর রহস্য প্রত্যক্ষ করেন।

মেরাজের রাতে আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে নবীজি  সা. উম্মতের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশসহ ইসলামি সমাজ পরিচালনার বিধিবিধান নিয়ে আসেন। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নামাজ ইসলামের পাঁচ রুকনের অন্যতম একটি। যেহেতু মেরাজের রাতে মুসলমানদের নামাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এ জন্য নামাজকে ‘মুমিনের মেরাজ’ বলে অভিহিত করা হয়।

মুসলিম শরিফে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর বর্ণনায় তিনটি উপহারের কথা উল্লেখ আছেÑ

পাঁচওয়াক্ত নামাজ, ২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, ৩. আল্লাহর সঙ্গে শিরক না করলে অন্যান্য গোনাহ মাফ হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কিত ঘোষণা।

মুসলিম শরিফে মেরাজের বিশদ বিবরণ সংবলিত আল বুনানির বর্ণনায় আরেকটি উপহারের উল্লেখ আছে এভাবেÑ যে ব্যক্তি কোনো সৎকর্ম করার মনস্থ করবে, তা বাস্তবায়ন করার আগেই তার জন্য একটি সওয়াব লিখে দেওয়া হবে। আর সে সংকল্প বাস্তবায়ন করলে দেওয়া হবে দশ গুণ সওয়াব। আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করার মনস্থ করবে, যতক্ষণ সে কাজটি না করবে ততক্ষণ তার জন্য কোনো গোনাহ লেখা হবে না। যদি সে কাজটি করে বসে, তবে তার জন্য একটি গোনাহ লেখা হবে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়েছে মেরাজের রাতে। এর প্রক্রিয়া ছিল বেশ চমৎকার ও গভীর তাৎপর্যময়। উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ বার আল্লাহর সমীপে হাজির হতে পারবে, এই উপহার নিয়ে নবীজি খুশিমনে চলে আসছিলেন আরশ হতে। ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা আ. পথ আগলে জিজ্ঞেস করলেন, কী পেলেন, কী নিয়ে যাচ্ছেন? নবীজি বললেন, দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত নামাজ। হজরত মুসা আ. বললেন, আপনি গিয়ে সংখ্যা কমিয়ে নিন, দৈনিক পঞ্চাশ বেলা নামাজ আদায় করতে পারবে না আপনার উম্মত। মহানবী ফিরে গেলেন আল্লাহর কাছে। বলা হলো, তাহলে পয়তাল্লিশবার। ফিরে আসতে হজরত মুসা আ. আবারও জিজ্ঞেস করলেন। হজরত সা. বললেন, পয়তাল্লিশবার পেয়েছি। তিনি বুঝিয়ে বললেন, আমি বনি ইসরাইলকে নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছি, পারিনি। আপনিও পারবেন না, ফিরে যান, কমিয়ে আনুন। এভাবে প্রতিবারে ৫ ওয়াক্ত করে কমানো হলো নামাজ। হজরত মুসা আ. এবারও ফিরে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন। নবীজি বললেন, আমার আর যেতে লজ্জা লাগে। তখন গায়েবিভাবে ঘোষণা আসে, যারা এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে তাদেরকে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব দেওয়া হবে।

নামাজের মানসিক, নৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সুফলগুলো বাড়তি পাওনা মাত্র। মেরাজে নাজিলকৃত সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের মহিমাও অপরিসীম। হাদিসে বলা হয়েছেÑ এ হচ্ছে আল্লাহর আরশের নিচের দুটি ভা-ার। প্রথম আয়াতে সব নবী-রাসুলদের আ. প্রতি বিশ্বাস ও সম্মানবোধের সূত্রে বিশ্বসভ্যতার সঙ্গে একাত্মতা আর শেষ আয়াতে মহামহিম আল্লাহর কাছে সমর্পিত ও সমাহিত হওয়ার ঘোষণা।

সৎকর্ম সম্পাদনের আগেই শুধু ভালো চিন্তার বিনিময়ে একটি করে সওয়াব দেওয়ার ঘোষণা উম্মতের জন্য সর্বোচ্চ উপহার। আসলে চিন্তাই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। যে জাতির প্রতিটি সদস্য সৎ ও ভালো চিন্তায় অভ্যস্ত হবে, সে জাতির উন্নতি কেউ ঠেকাতে পারবে না।

মেরাজের আলোচ্য উপহার আমাদেরকে সেই উন্নতির পথে, আল্লাহর সান্নিধ্যের পানে, পৃথিবীতে আল্লাহর খলিফার দায়িত্ব পালনের চেতনায় উজ্জীবিত করুক। আমিন।