ফাঁসি বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, জাতিসংঘে গুরুত্ব পাবে না: সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস

103

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতি ইসলামি নেতাদের মৃত্যুদন্ড- কার্যকর করার বিষয়ে জাতিসংঘের কাছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও অন্যান্য দেশের কাছে নালিশ জানাতে চায় পাকিস্তান।

শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ। সর্বশেষ মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর দেশটি বিবৃতি দিলেও এবার এমন তথ্য জানানো হলো।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতি ইসলামি নেতাদের মৃত্যুদন্ড- কার্যকর করার বিষয়ে জাতিসংঘের কাছে পাকিস্তানের নালিশের বিষয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস।

পাকিস্তান বাংলাদেশি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড- কার্যকরের প্রতিবাদ করে বিষয়টি জাতিসংঘ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায় কিন্তু একটি স্বাধীনদেশের বিপক্ষে আরেকটি দেশের পক্ষ থেকে এই নালিশের কোন কূটনৈতিক গুরুত্ব আছে কিনা এ প্রসঙ্গে নাসিম ফেরদৌস বলেন জাতিসংঘে মানবাধিকার কমিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একদেশ আরেকেেদশর বিরুদ্ধে নালিশ করতে পারে। কিন্তু ফাঁসির বিষয়গুলো বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সুতরাং পাকিস্তানের সারতাজ আজিজ যা বলেছেন, কিভাবে বলেছেন এটা খুবই আশ্চর্য লাগছে। কারণ এই বিষয়টাতে তাদের কারো বিরোধিতা করা হয়নি এবং এটা আমাদের প্রচলিত আইনে আদালতের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তারই বাস্তবায়ন। এখানে নিজামীর প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ ছিল কিন্তু সে চায় নাই। সুতরাং এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় নাই বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমার বিশ্বাস জাতিসংঘ সেই জিনিসটাই তুলে ধরবে এবং এই অভিযোগ গ্রহণ করবে না। তবে বাংলাদেশের এই বিষয়ে আরও অনেক বেশি তৎপর হতে হবে, কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। যাতে পাকিস্তান বিষয়টি একেবারেই উত্থাপন করতে না পারে।

জাতিসংঘের কাছে বিষয়টা কতটা গুরুত্ব পাবে এর উত্তরে নাসিম ফেরদৌস বলেন, জাতিসংঘের কাছে যে কোন দেশ নালিশ করতেই পারে কিন্তু এটা যেহেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় সেহেতু জাতিসংঘের কাছে এটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা না। আশা করছি সেটা গুরুত্ব পাবে না। পাকিস্তান নালিশ করলেই যে, সেটা গ্রহণ করবে এমন না।

এই বিষয়গুলো দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কোন দিকে নিয়ে যেতে পারে এ প্রসঙ্গে নাসিম ফেরদৌস বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক আবার বিবেচনা করে দেখা হবে। এই মুহূর্তে সম্পর্ক কোথায় যাবে বলা মুশকিল। তবে আশা করি পাকিস্তান একটু সংযত হবে। যদি এই ধরনের বক্তব্য দিতেই থাকে তাহলে কী হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।

প্রতিটি রায়ের পরে বা মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর বারবার বিবৃতি দেয়া হচ্ছে এটা কতটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে, এর উত্তরে নাসিম ফেরদৌস বলেন, এটা একেবারেই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। কারণ এটা একেবারেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমার বিশ্বাস পাকিস্তান এটা করছে তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য। এখন তাদের যে অবস্থান ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে তাদের যে প্রতিক্রিয়া হয় সেটা থেকে তারা এটাকে বিকৃত করছে। আমাদের রায় কিন্তু কোন ধর্মের বিরুদ্ধে না বা বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে না। ব্যক্তি বিশেষের উপরে হয়েছে তাদের কর্মকান্ডের কারণে। পাকিস্তানের অবস্থান একেবারে তাদের রাজনৈতিক কারণে।

পাকিস্তানের দাবি, জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝোলানো ১৯৭৪ সালে যে চুক্তি হয়েছিল সেটির লঙ্ঘন। কিন্তু ঐ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের কোন নাগরিকের অপরাধের বিচারের বিরোধীতা করার সুযোগ আছে কিনা এ প্রসঙ্গে নাসিম ফেরদৌস বলেন, আমি পাকিস্তানি নের্তৃবৃন্দকে বলব চুক্তিটি আবার ভাল করে পড়ে দেখতে। সেখানে কোথাও বলা নেই বাংলাদেশি কোন নাগরিকের বিচার করা যাবে না এবং এই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের  বিচার কখনও করা যাবে না। কারণ এ ধরনের কোন কথা আন্তর্জাতিক কোন চুক্তিতে থাকতে পারে না। চুক্তিতে যেটা ছিল তাদের ১৯৫ জন অপরাধীকে ফেরত দেয়া হয়েছে। চুক্তিতে তাদেরও যে বিচার করা যাবে না সেটাও বলা নেই। আমি তাদেরকে চুক্তিটি বারবার পড়ে দেখার জন্য অনুরোধ করব।