হকার ইস্যুতে শামীম আইভী মুখোমুখি পুলিশ নীরব

86

রমজান মাসে নগরীর হকার উচ্ছেদ নিয়ে পুলিশ নীরব কারনে ফের মুখোমুখি অবস্থানে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশেন মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নগরবাসী! তাদের মতে, সিটি কর্পোরেশনের কথা না বলে পুলিশ যদি প্রথমেই সাংসদ শামীম ওসমানকে বলতো বৃহত্তর জনস্বার্থে তারা ফুটপাতের হকারদের উচ্ছেদ করেছেন তাহলে শামীম ওসমানও সিটি মেয়র আইভীর কাছে ভিক্ষা চাইতেন না বা তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতেনও না। এখন হকার উচ্ছেদে আইভীর অস্বীকার আর পুলিশেরও দু’রকমের বক্তব্যে এখন হকার ইস্যুতে রাজনৈতিক মাঠ গরম হওয়ার শংকা রয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে: গত ১ জুন রমজান উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রসাশন, সিটি কর্পোরেশন ও ডিপিডিসির যৌথ উদ্যোগে নগরীর ফুটপাত উচ্ছেদ করা হয়। এরপর থেকে নগরীর ফুটপাতে হকার বসায় কঠোর থাকে পুলিশ। তারপর থেকে অসহায় হকাররা ঈদের পূর্বে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচার তাগিদে পুনর্বাসনের দাবীতে নারায়ণগঞ্জ-৫ ও ৪ আসনের সাংসদদ্বয়, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরপর গত ১২ জুন জেলা পুলিশ সুপারের বাস ভবনে পুলিশ প্রশাসন আয়োজিত ইফতার মাহফিলে আসেন সাংসদ শামীম ওসমান। তখন শামীম ওসমান সহকারী পুলিশ সুপার ট্রাফিক বদরুল আলম মোল্লাকে রসিকতার সুরে বলেন, রোজার মধ্যে হকারদের উচ্ছেদ করায় আপনাদের উপড় গরীবের অভিশাপ লাগবে। যদি তাদেরকে উচ্ছেদ করতেই হতো তাহলে রোজার মাসখানেক পূর্বে উচ্ছেদ করা উচিত ছিল। কেননা, সাধারন হকাররা রোজার সময় বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য কিনেন। কিন্তু আপনারা তাদের উচ্ছেদ করে ক্ষতি করেছেন। তখন বদরুল আলম মোল্লা সিটি কর্পোরেশনের অনুরোধে হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে জানিয়ে শামীম ওসমানকে হকারদের পুনর্বাসন করে দেয়ার আহবান জানালে প্রতি উত্তরে শামীম ওসমান বলেন, এটি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব। তবে চেষ্টা করবো তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার। আন্দোলনরত হকাররা শামীম ওসমানের দ্বারস্থ হলেন: গত ১৩ জুন রাত ৯টায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস্ ক্লাবে নারায়ণগঞ্জের কয়েক হাজার ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা শামীম ওসমানের কাছে তাদের পুনর্বাসনের দাবী জানান। তখন সাংসদ সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের মাধ্যমে মেয়র আইভীকে গরীবের দিকে তাকিয়ে ঈদের জন্য হকারদের পুনর্বাসনের অনুরোধ জানান। সেদিন শামীম ওসমান হকারদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আপনারা আমাকে বলার আগেই আমি একটি জনসভায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্দেশ্যে বলেছিলাম, ফুটপাতের হকারদের যদি উঠিয়ে দিতে চান তাহলে দুই মাসের নোটিশ দেন। আমি প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করেছি এই সংযমের মাসে আপনারা কিভাবে গরিবের পেটে লাথি দিলেন। তার প্রতি উত্তরে প্রশাসন আমাকে জবাব দিল আমাদের কিছু করার ছিল না। এটা সিটি কর্পোরেশনের কাজ তারা চাইলে আমাদের করতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ করেছে ট্রাফিক জ্যাম কমানোর জন্য কিন্তু ট্রাফিক জ্যাম কমেছে কোথায়? সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বলছে ফুটপাত উঠায় দিলে যানজট কমবে তাই লাথি মাইরা তাদের উঠায়। তারপর দিন গত ১৪ জুন আবার রাইফেলস ক্লাবে শামীম ওসমানের দ্বারস্থ হয় ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হকাররা। তখন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে হকারদের জন্য অনুরোধের পর এবার দু’হস্তে ভিক্ষা চান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। তিনি বলেন, ফুটপাতে ৩ হাজার মানুষের সংসার চলে। ৩৫ হাজার মানুষের পেট চলে এই হকারদের আয়ের টাকায় এবং ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ ফুটপাতের পোশাক পরে জীবিকা নির্বাহ করে। ঈদ পর্যন্ত মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের বসতে দেন। হকারদের জন্য আমি এমপি হয়ে সিটি কর্পোরেশনের কাছে দু’হস্তে ভিক্ষা চাইলাম। কিন্তু ১৫ জুনের মধ্যে যদি হকারদের ফুটপাতে বসতে দেয়া না হয় তাহলে শামীম ওসমান ১৬ জুন নিজে মাঠে নেমে হকারদের বসার সুযোগ করে দেয়ার ঘোষণা দেন। শামীম ওসমান আরো বলেন, আমি জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলেছি। পুলিশ সুপার বলেছেন এটা আমাদের বিষয় না। সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হয়েছে হকার উচ্ছেদ করার জন্য। আমরা সেই অনুযায়ী হকারদের উচ্ছেদ করেছি। তিনি সিটি মেয়রকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আইভী হকারদের কোন সময়ই সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের লোকজন তার নামে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা চাঁদা নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হকার প্রসঙ্গে ভিন্নমত আইভীর: কিন্তু নগরীতে রমজানের পূর্বে ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী। তিনি বলেন, ঈদকে গিরে কেন এখন ফুটপাত উচ্ছেদ করা হচ্ছে তা তার বোধগম্য নয়। তিনি এখন ফুটপাতের হকারদের উচ্ছেদের কথাও বলেননি আবার বসতেও বলেননি। তবে কেন পুলিশ সিটি কর্পোরেশনের অজুহাত দিল: এ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অনুরোধে নয় বৃহত্তর স্বার্থে রমজানের পূর্বে নগরীর ফুটপাত উচ্ছেদ করা হয়েছে। কেননা অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে ঈদের কেনাকাটা করতে তিনগুণ মানুষ রাস্তায় বের হয়। তাই তাদের চলাচল নির্বিঘœ করতে আমাদের লোকবল কম থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আপনি একজন সাংসদকে নাকি জানিয়েছেন যে, সিটি মেয়রের অনুরোধে আপনারা ফুটপাত উচ্ছেদ করেছেন। কিন্তু সিটি মেয়র আইভী ফুটপাত উচ্ছেদ বা হকারদের বসার ব্যাপারে কোন ধরনের নির্দেশনা দেননি। তাহলে উচ্ছেদ কি পুলিশ করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, সেদিন পুলিশের পাশাপাশি উচ্ছেদের সময় সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাও ছিল। জনস্বার্থেই উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবশেষে সাংসদ শামীম ওসমানের আল্টিমেটামের পর বৃহস্পতিবার ফের ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ পেলো নারায়ণগঞ্জের ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।