নারায়ণগঞ্জের জনগন আমার মালিক- শামীম ওসমান

138

শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের জনগন আমার মালিক।আমি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা না। জেলা কমিটিরও কেউ না। আমি শেখ হাসিনার একজন কর্মী। আপনাদের ভাই।  আমি আপনাদের ভাই হিসেবেই থাকতে চাই। শনিবার বিকেলে নগরীর ওসমানী আউটার ষ্টেডিয়ামে আয়োজিত সমাবেশে তিনি একথা বলেন। সমাবেশের ব্যানারে লেখা ছিলো ‘মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মুক্ত করে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার প্রত্যয়ে বিশাল জনসভা’। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগ এ সমাবেশ আয়োজন করে। এমপি শামীম ওসমান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হতে যাচ্ছেন বলে গত কয়েকদিন ধরে এমপি শামীম ওসমানের সমর্থক স্থানীয় নেতারা ও তার সমর্থক স্থানীয় পত্রিকাগুলি ধারনা দিচ্ছিলো। কিন্তু শামীম ওসমান সাংগঠনিক সম্পাদক হতে পারেননি। এমনকি কেন্দ্রীয় কমিটির কোথাও তার ঠাই হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জে যখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছিলো তখন সমাবেশে তিনি একথা বলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামীলীগ কর্মী জানান, এমপি শামীম ওসমান আশায় ছিলেন তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাই পাচ্ছেন। জনসভাটি আয়োজন করা হয় এমপি শামীম ওসমানের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাই পাওয়ায় তাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কোন সুখবর না আসায় জনসভায় ‘মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মুক্ত করে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার প্রত্যয়ে বিশাল জনসভা’ হিসেবে এ আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে আাবারো জঙ্গি হামলার আশংকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় পঞ্চায়েত কমিটি গঠন করে জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে তাদের ধ্বংস করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সে বাচ্চা মানুষ। আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার মন জয় করতে হলে অবশ্যই আইভীকে ক্ষমা চাইতে হবে। বড় ভাই হিসেবে আমি তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছি। সে যদি ক্ষমা না চায় তাহলে আমার কিছু করার নাই। আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয় তাহলে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগরে সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদাল, মহানগর আওয়ামীলীগরে সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সহ-সভাপতি রোকনউদ্দীন আহম্মদে, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাসদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগরে সভাপতি মজবিুর রহমান, বন্দর থানা আওয়ামীলীগরে সভাপতি এমএ রশিদ, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগরে সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী,নারায়ণগগঞ্জ মহানগর প্রজন্মলেিগর সভাপতি মাসুম আহমেদ সুমন, সাধারন সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদ মুস্তাহিদ খান, সোহেল মাহমুদ, ডা: কামরুল হাসান সরকার, শেখ সেলিম মাদবর প্রমুখ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ এডভোকেট হোসনে আরা বাবলি, রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী। দুপুর থেকে শহর, বন্দর, সোনারগাঁও, সিদ্ধিরগঞ্জ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও ফতুল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে যোগ দেয়। এ সময় নেতাকর্মীদের হাতে ফেষ্টুন ব্যানার, প্লে-কার্ড নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দেয়। সমাবেশের সুবিধার্থে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে যানচলাচল বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। বিকেল চারটা থেকে পাচটা পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড দিয়ে যান চলাচলও। ফলে নগরীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সন্ধা সাড়ে সাতটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ যানজট অব্যহত ছিলো। যানজটের কারনে নগরবাসিকে প্রচন্ড দূর্ভোগে পড়তে হয়। এসময় যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই বাস থেকে নেমে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরেন।এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের দোকানপাট বন্ধ করে জনসভায় আসতে বাধ্য করা হয় বলে ভুক্তভোগী অনেকেই অভিযোগ করেন। জনসভার কারনে প্রধান সড়কগুলোতে যানজটের কারনে নগরীর প্রতিটি পাড়া মহল্লায়ও যানজট সৃষ্টি হয়।এছাড়া গতকাল নগরীর ফুটপাথগুলোও ছিলো হকারমুক্ত। হকারদের জনসভায় আসতে কঠোর নির্দেশ ছিলো বলে হকাররা জানায়। শামীম ওসমান বলেন, ৯৬ সালের আগে কোন পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে একটি কথাও লেখা হয় নাই। কেউ কোন দিন খারাপ বলে নাই। সেদিন আমরা লংমার্চ ঠেকিয়ে দিয়েছিলাম-এটা সত্য। আমার কাছে খবর ছিল, অবশ্যই সর্ব্বোচ্চ পর্যায় থেকে খবর ছিল। যারা সাংবাদিক ভাই, সচেতন মানুষ আছেন তাদেরকে আহবান করবো, যান সেই দিনকার গোয়েন্দা সংস্থার ফাইল দেখেন। ডিজিএফআই, এনএসআই, সিটি এসবির ফাইল দেখেন। সেই ফাইলে লেখা আছে, খালেদা জিয়া ৯৮ সালে লং মার্চে যাচ্ছিলেন। সেই লং মার্চে জামায়াতও ছিল। সেই গাড়ির বহরে তিনটি বাসে মাটি কাটা লেবার ছিল। ফেনীর কোন এক জায়গায় সেই বাসগুলোকে উদ্দেশ্যে করে বোমা হামলা করে তাদেরকে হত্যা করা হতো। সেদিন চট্টগ্রামের দায়িত্ব ছিল সাকা চৌধুরী ও ঢাকার দায়িত্বে ছিল সাদেক হোসেন খোকা। তারা তখন বলতো খালেদা জিয়ার বহরে হামলা হয়েছে। শত শত কোটি টাকার বাজেট ছিল। যখন-এই খবর আমার কাছে আসলো-এই কাজটা করতে গেলে আমি তাদের চক্ষুশূল হবো। আমি তখন চিন্তা করলাম আমার রিস্কের কারণে যদি ৬০/৭০ জন লোকের প্রাণ বেঁচে যায় এবং বাংলাদেশের মানুষ যদি সংঘাত থেকে বেঁচে যায়। তাহলে আমার দায়িত্ব এই কাজটা করার। আমরা কিন্তু লং মার্চ আটকে রাখিনি, বিলম্বিত করেছিলাম। যেই সময় সরকারের কাছে খবর ছিল, সেই সময় লং মার্চের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব ছিল না। আমার দায়িত্ব ছিল গাড়িগুলো আটকে দেয়ার। যখন নির্দেশ এলো তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার জীবনের উপর কোন হুমকি নাই। তখন গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তখন বিরোধী দলীয় নেত্রী আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিলেন। তিনি দেখে নিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা হয়েছে। শামীম ওসমান আরো বলেন, আজ সারা বাংলাদেশে যখন জঙ্গীবাদের কথা বলছে। আমি আগে যখন জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতাম, তখন অনেকেই বলতে শামীম ওসমান এই তত্ত¡ পায় কই। তখন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের দলীয় নেত্রী সাহারা খাতুনও বলেছিলেন, দেশে জঙ্গীবাদ নাই। তখন আমি বলেছিলাম, জঙ্গীবাদ আছে। আজকে বিএনপির শাসুজ্জামান দুদু গত পরশু বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কাশ্মিরের জনগণের পক্ষে। আমি এই বক্তব্যের গভীরে যেতে চাই। এই কাশ্মির কন্ট্রোল করতে চায়, লস্কর এ তৈয়্যবা, জয়শ-এ-মোহাম্মদ এর মতো আর্ন্তজাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলো। বিএনপির নেতা দুদুর কথায় তা স্পষ্ট হয় তারা এসব আন্তজার্তিক জঙ্গী সংগঠন লস্কর এ তৈয়্যবা, জয়শ-এ-মোহাম্মদ’র সমর্থন চায়। তারা জানে জনগণের ভোটে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাই আজকে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। #