বন্ধু নুরুকে এডভোকেট আল আমীনের খোলা চিঠি

703

বন্ধু নূরু,
যেখানেই থাকিস ভালো আছিস নিশ্চয়। কয়েক বছর চলছে তোর সাথে সাক্ষাৎ নেই। জীবনের বাস্তবতাই এর জন্য দায়ী। আজ সেইসব দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে, যেইসব দিনগুলো ভবিষ্যতের জন্য বিড়ম্বনার না হয়ে আনন্দের হওয়ার কথা ছিল। তুই আর আমি ক্লাসমেট বন্ধু ছিলাম, যদিও বয়সে আমার চেয়ে তুই অনেক বড়। বন্ধু হিসেবে তুই এতটাই আমাকে ভালোবাসতিস যে, আমার সফলতায় তোর মূখে হাঁসি ফুটতো আর ব্যর্থতায় তোর চোঁখে আসত জল। তোর মতো বন্ধু পাওয়া যেকারো জন্যই ভাগ্যের ব্যাপার। অথচ আজ মনে হচ্ছে- তোর সাথে বন্ধুত্ব না হলেই মনে হয় ভালো হত; জীবনের এই পর্যায়ে এসে “ফালতু অতীত” বিড়ম্বনা হয়ে সামনে দাঁড়াত না।

আমি তোর চাচাত বোনের সাথে সম্পর্ক করতে রাজি ছিলাম না। তোর চাচাত বোনের পাগলামোর কারণে তুই আর তোর চাচি আমাকে বাঁধ্য করেছিলি সম্পর্কে জড়াতে। আমি রাজি না হলে নাকি তোর চাচাত বোনকে সুস্থ্য করা সম্ভব নয়- সে মারা যাবে। ইতোমধ্যে, অনেক কবিরাজ-ডাক্তার ব্যর্থ হয়েছিল তোর বোনকে সুস্থ্য করতে। প্রেম রোগ কি আর ডাক্তার-কবিরাজে ভালো হয়? তোর বোনের অসুখ সাড়াতে তুই একদিন রাত দুইটার সময় আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল তোদের গ্রামে তোর চাচার ঘরে। আমাকে জোর করেই তুই নিয়ে গিয়েছিল- হুমকি দিয়ে। ঘরে ঢুকে দেখি তোর চাচি কাঁদছে। সে রাতে আমি তোর বোনকে সুস্থ্য হওয়ার ঔষধ, ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি, দিয়ে এসেছিলাম। তারপর থেকে…। তোর বোন আর আমার সম্পর্কটি লুকোচুরির ছিল না। সেটা ছিল এলাকায়, বিশেষ করে আমাদের দুই গ্রামে, আলোচিত প্রেমের উপাখ্যান। লোকে জানত আমরা বিয়ে করে ফেলেছিলাম। তোর বোনের জন্যই তো এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে মারামারি পর্যন্ত হয়েছিল। সেসব আর বলতে চাই না।

ঢাকায় পড়ালেখা করতাম। তোর বোনকে দেওয়া কথা মোতাবেক আমি প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়ি আসতাম তোর বোনের নয়ন জুড়াতে। এইচএসসির ফাইনাল পরীক্ষার ব্যস্ততার কারণে কয়েক মাস বাড়ি আসা হচ্ছিল না। এরই মধ্যে তোর চাচার পরিবারে একটা দুর্ঘটনার কারণে তারা গ্রাম ছেড়ে চলে আসে শহরে। তখন তুই সিঙ্গাপুরে। রিটেন পরীক্ষা শেষ করে ব্যবহারিক পরীক্ষার আগে বাড়িতে এসে তোদের গ্রামে আমার ফুফুর বাড়িতে গিয়ে তোর চাচি আর তোর চাচাত বোনের বিশ্বাসঘাতকতার সংবাদটি শুনতে পাই। তোর চাচা বিদেশে থাকায় তোর চাচিই ছিল তখন সংসারের প্রধান নির্বাহী। আমি নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম; যদিও সময় লেগেছিল। সিঙ্গাপুর থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে তুই কেঁদেছিলি অনেক। নিজেকে আমার সামনে অপরাধী হিসেবে আত্মসমর্পন করেছিলি।

সবকিছুকে পেছনে ঠেলে আমি আমার লক্ষ্যে পৌছার সংগ্রামে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা এবং রাজনীতি নিয়ে যখন আমি ব্যস্ত সময় পার করছিলাম এমনি কোন এক শবে বরাতের রাতে তোর বোনের ফোন পেলাম। কয়েকদিন এভাবে ফোন করতে থাকলে এক পর্যায়ে তাকে বিরত হতে বাঁধ্য করলাম। কারণ বংশহীন পরিবারে আমার জন্ম হয় নি।

তারপর থেকে অনেকগুলো বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের উপর সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছি। বিয়ে করেছি, সন্তান হয়েছে। সূখেই আছি। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি রাজনীতিটাও চালিয়ে যাচ্ছি। এমনই এক সুন্দর সময়ে অতীত সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বিড়ম্বনা হয়ে; যেই অতীত ঘটনাবলীর তুই অন্যতম চরিত্র। প্রেম করা কি পাপ? প্রেম করে তোর বোনকে সুস্থ্য করা কি পাপ ছিল?। আমি তো কারও স্ত্রীর সাথে প্রেম করিনি। আমার সাথে সম্পর্ক ছিল তখন, যখন তোর বোন কারও স্ত্রী ছিল না।

তোর ভগ্নিপতি স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক। তোর বোনের সাথে অতীতের সেই সম্পর্কের জের ধরে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে সে আমাকে উদ্দেশ্য করে মিথ্যা বানোয়াট কথামালা সাজিয়ে সংবাদের নামে পত্রিকায় গল্প লেখে। আমার ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট করতে চায়। যদিও এই ছোকড়ার পক্ষে সেটা কখনও সম্ভব নয়, তবুও ছোকড়ার লাফালাফিটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দিনদিন। এই সাংবাদিক ছোকড়ার ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও তার পারিবারিক ইতিহাস তো ভালো করেই জানিস তুই। শুধু তুই কেন আমাদের দুই গ্রামের কে না জানে? ওর মতো এইট পাশ লোকাল পত্রিকার সাংবাদিকের নাম আমার মূখে উচ্চারণ করাও বেমানান। এমন পরিস্থিতিতে তুই প্রাসঙ্গিক চরিত্র। বল বন্ধু, “কী করা উচিত?”