সাধারণত মায়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ। তারপরও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের একটি গ্রামে কড়া পাহাড়ায় কিছু বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে যায় মিয়ানমার সরকার। মিয়ানমার সরকারের অনেক সাবধানতা অবলম্বনের পরও রোহিঙ্গাদেরও ওপর চলা নির্যাতনের নির্মমতা দেখতে পেয়েছেন ব্রিটিশ এক সাংবাদিক।
ব্রিটিশ ওই সাংবাদিকের নাম জনাথন হেড। যিনি সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের আমন্ত্রণে গণমাধ্যমকর্মীদের একটি দলের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের শর্ত দেয়া ছিল সবাইকে একসঙ্গে চলাফেরা করতে হবে। স্বাধীনভাবে কোন কিছু পরিদর্শন করা যাবে না। শুধুমাত্র সরকারের নির্দিষ্ট করে দেয়া জায়গাগুলোই দেখা যাবে।
রোহিঙ্গা গ্রাম স্বচক্ষে দেখার পর জনাথন বলেন, ‘নির্ধারিত গ্রামটিতে ঢুকেই প্রথম বাড়িতে আগুনের চিহ্ন দেখা গেল। দেখেই বোঝা যায়, অধিকাংশ বাড়িতেই আগুন দেয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগেই আগুন দেয়া হয়েছিল। গ্রামে একদল তরুণকে হাতে খোলা তলোয়ার ও দেশলাই নিয়ে ঘুরতে দেখলাম। গ্রামের রাস্তাগুলোতে দেখা গেল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য, শিশুদের নানারকম খেলনা ও নারীদের পোশাকের বিভিন্ন অংশ।’
জনাথন হেড বলেন, ‘নিজ চোখে একটি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়ে যেতে দেখেছি।’ রাখাইনের মংগদু জেলায় আল লে থান কিয়া শহর পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময়ও পুড়ে যাওয়া অনেক বাড়িঘর তিনি দেখতে পান। এমনকি অনেক বাড়িঘর থেকে তখনও ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। পুলিশ গণমাধ্যমকর্মীদের ওই দলটিকে জানায়, রোহিঙ্গা মুসলমানরা নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে।
জনাথন আরো বলেন, ‘রাখাইনে থাকতেই আমরা গুলির শব্দ শুনতে পাই। বিচ্ছিন্নভাবে অন্তত তিনটি স্থানে ধোঁয়া উড়তে থাকে। বনের পাশে থাকা ধানক্ষেত থেকেও বড় ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যায়। সেটিও একটি গ্রাম। বিষয়টি ভালোভাবে জানতে আমরা সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলির কাছে গিয়েছিলাম। সেখানেও প্রথম বাড়িতেই আগুনের চিহ্ন দেখতে পাই এবং আগুনের ঘটনাটি কিছুক্ষণ আগের বলেই মনে হলো।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের গ্রামটিতে হাঁটার সময় তরুণদের একটি দল চোখে পড়ে। তারা দেশলাই ও তলোয়ার নিয়ে ঘুরছিল। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা রাজি হয়নি। ছবিও তুলতে দেয়নি। পরে মিয়ানমারের স্থানীয় সাংবাদিকরা তরুণদের সাথে কথা বলেন। তরুণদের কয়েকজন রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে সহায়তা করেছে বলে জানায় ওই যুবক।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলছে দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংসতা। সেনা অভিযানের নাম করে সেখানে চলছে খুন, ধর্ষণ, হত্যা আর রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের করা হচ্ছে বিতাড়িত। গত এক সপ্তাহে রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।