বাবলার বিরুদ্ধে পিপি খোকনের মামলা

99

দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকার সম্পাদক আবু আল মোরছালীন বাবলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) দুপুরে বিজ্ঞ চীফ জুডিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ‘ক’ অঞ্চলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবিরের আদালতে পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ এনে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ধারায় এ মামলা ( সি আর মামলা নং ১৩২/২০১৮) দায়ের করেন।

তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের এর অধীনে আনীত অভিযোগের কোন অপরাধ আমলে নেয়ার কোন এখতিয়ার উক্ত আদালতের নেই জানিয়ে দরখাস্তের বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশ দিয়েছে ম্যাজিষ্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবির।

অভিযোগে পিপি খোকন উল্লেখ করেন, ২৮ মে দৈনিক যুগের চিন্তায় ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদকের জালে পিপি খোকন’ শিরোনামের সংবাদে তাঁর নামে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় আরো অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট আছে, ওয়াজেদ আলী খোকন তার ব্যবহৃত গাড়িতে একেক দিন একেক নম্বর প্লট ব্যবহার করেন, পিপি খোকন ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পোষ্ট অফিস, আই.এফ.আই.সি ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক , যমুনা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও ফিক্সড ডিপোজিটের কথা রয়েছে। এরকম সংবাদ পিপি খোকনের জন্য মানহানিকর ও হেয় প্রতিপন্ন করার সামিল। তাই যাবতীয় অবস্থা বিবেচনা করে আসামীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদানের নালিশ দায়ের করেন পিপি খোকন।

অভিযোগে বাদী পিপি খোকনের আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল, মোহসিন মিয়া, আব্দুর রহিম ও জিয়াসমিন এবং স্বাক্ষী হিসেবে অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান কাজল, কামরুল হাসান, অঞ্জন দাস খোরশেদ আলম আঁখির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মে যুগের চিন্তায় দুদকের জালে পিপি খোকন শিরোনামে ওই সাংবাদটি প্রকাশিত হয়। সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, অনিয়ম ও দুর্নীতিরমাধ্যমে বিপুল অর্থ সম্পদের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম ওয়াজেদ আলী খোকনকে দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করা হয়েছে। আগামী ২৯ মে সকালসাড়ে ১১টায় তাকে দুদকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দুদকের সহকারি পরিচালক মো.মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিটি রোববার বিকালে বিশেষ বাহক মারফত পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। চিঠিটি গতকালেই জারি করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এতদ্বারা জানানো যাচ্ছে যে, নি¤œলিখিত অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মাসুদুর রহমানকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

তিনি এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন, পাবলিক প্রসিকিউটর, নারায়ণগঞ্জ এর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ সম্পদ অর্জনের তদন্ত করবেন। তদন্তের প্রয়োজনে দুদকে পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল ওয়াজেদ আলী খোকনের দুর্নীতি তদন্তে উপপরিচালক মোহাম্মেদ মোরশেদ আলম দুদকের সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমানকে অনুসন্ধানী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দিয়ে চিঠি ইস্যু করেন। ওই চিঠিতে পিপি খোকনের বিরুদ্ধে একপাতা অভিযোগ ও ৩৯ পাতার দুর্নীতির কাগজপত্র হস্তান্তর করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

প্রাথমিক তদন্তে দুদক জানতে পেরেছে পিপি খোকন প্রতিবছর যে আয়কর সম্পদ বিবরণী জমা দেন, সেখানে তার নাে বেনামে থাকা অনেক সম্পদের তথ্য গোপন করা হয়েছে। ওয়াজেদ আলী খোকন ৩৫ আল্লামা ইকবাল রোড, পুরাতন ৪২ আল্লামা ইকবাল রোড, থানা ও জেলা নারায়ণগঞ্জ মৌজা খাঁনপুর ‘ম’ খন্ড দাগ নং- সিএস ৪৩০, এসএ ৬০৪, আরএস ৮২৩, রেজিষ্ট্রি দলিল নং ৬২২২,তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১৬ বাড়িটি ক্রয় করেন। যারা মূল্য তিন কোটি টাকা।

সম্পদ বিবরণীতে এ তথ্য গোপন করা হয়েছে। ৩২ নং আল্লামা ইকবাল রোডের ছাত্তারটা ওয়ারের চতুর্থ তলার পশ্চিম দিকে ১৫শ’ স্কয়ার ফিটের দুই কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। এছাড়াও তার নামে বেনামে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় আরো অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট আছে। পিপি খোকন সিআরভি ব্রান্ডের নতুন একটি গাড়ি যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ ১৫-৭১৫৬ এবং সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি যার নম্বর ঢাকা মেট্রো গ ২৫-৬৪৮৫ ক্রয় করেছেন। গাড়ি দুটির মূল্য এক কোটি টাকা।

ওয়াজেদ আলী খোকন তার ব্যবহৃত গাড়িটিতে একেক দিন একেক নম্বর প্লেট ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পোস্ট অফিস, আইএফআইসিব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, যমুনা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে পিপি খোকন ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সঞ্চয়পত্র কেনা ও ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে।

এছাড়া গত তিন বছরে পিপি সাহেব নিজ পৈত্রিক বাড়ি ৩৫ আল্লামা ইকবাল রোডে ৫ শতাংশ জমির উপর নির্মিত দোতলা বাড়ির উপর ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় মোট ৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছেন। যার আনুমানিক ব্যয় ৩ কোটি টাকা। উপরোক্ত সম্পদগুলো তার ২০১৭-১৮ সালের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করা হয়নি।

বিকালে টেলিফোনে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান যুগের চিন্তাকে জানান, পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এজন্য জিজ্ঞাবাদের জন্য ২৯ মে সকালে তাকে দুদক কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হবে।

তিনি আরো কি কি সম্পদ অর্জন করেছেন সে ব্যাপারে ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে দুদকের আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেন তিনি। রোববার একজন কনস্টেবলের মাধ্যমে দুদকের চিঠিটি ওয়াজেদ আলী খোকনের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

এদিকে সাংবাদিকদেও কাছে দুদকের তলব নোটিশের প্রাপ্তির কথা নিশ্চিত করেছেন ওয়াজেদ আলী খোকন। তিনি বলেছেন, তার সম্পদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিনি দুদকে দাখিল করবেন।

পরবর্তীতে ২৯ মে মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনকে সকাল থেকে প্রায় ঘন্টাব্যাপি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারি পরিচালক মাসুদুর রহমান।

জিজ্ঞাসাবাদে পিপি খোকনের কাছে কিছু বিষয় স্পষ্ট জানতে চায় পিপি খোকন। তার সম্পদ বিবরণীতে যেসব বিষয় অনুপুস্থিত ছিলো সেগুলোর বিষয়েও তার কাছে জানতে চায় দুদক। পিপি খোকন তার অর্জিত সব সম্পদ বৈধ দাবি করে দাবির স্বপক্ষে কিছু প্রমাণপত্র উপস্থাপন করেন।

দুদকের সহকারি পরিচালক মো.মাসুদুর রহমান জানান, সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত একঘন্টা তাকে (পিপি খোকন) জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পেয়েছি এবং তার বক্তব্য যাচাই বাঁছাই করে দেখা হবে।

এরপরেই মূলত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো। তার বক্তব্যে গড়মিল পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।